পাকিস্তান চীনকে বিশাল এলাকা ছেড়ে দিয়েছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 30, 2020 10:13 am
পাকিস্তান চীনকে বিশাল এলাকা ছেড়ে দিয়েছে?

পাকিস্তান চীনকে বিশাল এলাকা ছেড়ে দিয়েছে? - সংগৃহীত

 

প্রায়ই একটি কথা বলা হয় যে জম্মু ও কাশ্মিরের একটি বিরাট অংশ পাকিস্তান ১৯৬০-এর দশকে চীনকে উপহার দিয়েছে।

ভারত ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবরের দাবি অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের আয়তন ৮২,২৫৮ বর্গ মাইল।
তবে ১৮৯১ সালের আদমশুমারি নথিতে এলাকাটি ৮০,৯০০ বর্গ মাইল বলে উল্লেখ করা হয়। এই তথ্যটি ১৯০১ সালের আদমশুমারিতেও পুনরাবৃত্তি করা হয়। ১৯১১ সালে এলাকাটির আয়তন দেখানো হয় ৮৪,২৫৮ বর্গমাইল। তবে ১৯৪১ সালের আদমশুমারির কমিশনার এর আয়তন কমিয়ে দেখাতে বলেন ৮২,২৫৮ বর্গ মাইল।
স্বাধীনতার পর ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলের ভারতীয় রাজ্যগুলো প্রশ্নে প্রকাশিত শ্বেতপত্রে এই হিসাবটির পুনরাবৃত্তি করা হয়।

অবশ্য, ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে সম্ভবত প্রকৃত সীমন্ত রেখা নির্ধারণ প্রশ্নে চীনের সাথে বিরোধের বিষয়টি বিবেচনা করে ভারত জম্মু ও কাশ্মিরের আয়তন ৮৬,০২৪ বর্গ মাইল হিসেবে উল্লেখ করে।
এই অতিরিক্ত ৩,৭৬৬ বর্গ মাইল এলাকা কোথা থেকে এলো, সে সম্পর্কে কারো কাছেই কোনো ধারণা ছিল না। অথচ এই সময়ে ভূখণ্ডগত কোনো দখলদারিত্ব বা সামরিক অভিযানও হয়নি।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, প্রধানমন্ত্রী নেহরু ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের তদানিন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সাথে ঐতিহাসিক সিন্ধু অববাহিকা পানি চুক্তি সই করে করাচি থেকে ফেরার পরপরই এই ভূখণ্ড যোগ করা হয়।

মানচিত্র পোড়ানো
আইয়ুব খানের মুখ্যসচিব কুদরাতুল্লাহ শাহাব তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন যে মনোরম মারিতে অবকাশের সময় অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ের সময় নেহরু জানতে চান যে চীনের সাথে পাকিস্তান কোনো সীমান্ত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে কিনা।

আইয়ুব হ্যাঁসূচক জবাব দিলে তিনি মানচিত্র সম্পর্কে ধারণা দিতে বলেন।
শাহাবের আত্মজীবনীতে উল্লেখ রয়েছে যে ওটা ছিল অনানুষ্ঠানিক সভা। এমনকি আইয়ুব পর্যন্ত মানচিত্রের একটি কপি পাঠাতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু নেহরু দিল্লি ফেরার পরপরই কূটনৈতিক আলোড়নের সৃষ্টি হয়, রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতের কাছে মানচিত্র হস্তান্তর করার জন্য পাকিস্তানের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।

নেহরু এমনকি পার্লামেন্টে বলেন যে এটি হলো পাকিস্তান ও চীনের যৌথ ষড়যন্ত্র।
শাহাবের মন্তব্যের সাথে মিল রেখেই নূরানি তার সর্বশেষ গ্রন্থ ইন্ডিয়া-চায়না বাউন্ডারি প্রবলেম, ১৮৪৬-১৯৪৭ : হিস্টরি অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (অক্সফোর্ড)-এ উল্লেখ করেছেন, কিভাবে পররাষ্ট্র দফতর নতুন একতরফা মানচিত্র সৃষ্টির জন্য পুরনো মানচিত্রগুলো পুড়িয়ে ফেলেছিল।
নূরানি সাবেক এক পররাষ্ট্র সচিবের (তিনি তখন ছিলেন জুনিয়র অফিসার এবং এই বাজে কাজটি করার নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছিলেন) উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ১৯৫৩ সালের ২৪ মার্চ সীমান্তের নতুন সীমানা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। পুরনো মানচিত্রগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এ জি নূরানি তার মুম্বাইয়ের বাসভবন থেকে আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন যে নেহরুর ইস্যু করা ১৭ প্যারার স্মারকে মন্ত্রণালয়কে সুস্পষ্টভাবে সব পুরনো মানচিত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
নূরানি বলেন, আর্কাইভের প্রমাণ অনুযায়ী, উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কোনো সীমারেখা প্রদর্শন ছাড়াই নতুন মানচিত্রগুলো ছাপানো হয়। নেহরু আরো নির্দেশ দেন যে এসব মানচিত্র বিদেশে দূতাবাসগুলোতে পাঠাতে হবে, তিনি পরামর্শ দেন, এগুলো সাধারণভাবে জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হবে এবং স্কুল ও কলেজগুলেতে ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন যে এই সীমান্তকে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট বিবেচনা করতে হবে এবং কারো সাথে এ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা যাবে না।

প্রখ্যাত মানচিত্রকর ও ওই সময়ের পাকিস্তানের সার্ভেয়র-জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আসলাম চীনের সাথে সীমান্ত চিহ্নিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে ঐতিহাসিক তথ্যের আলোকে নিখুঁতভাবে সীমান্তরেখা টানা হয়েছে।

তিনি ইরানের সাথে সীমান্ত চিহ্নিতকরণেও ভূমিকা পালন করেন। এর ফলে ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি তাকে নিশান-ই-হুমায়ূন খেতাবে ভূষিত করেন।
নূরানি বলেন, পাকিস্তানের সাড়া ছিল ঐতিহাসিক তথ্য ও বিদ্যমান বাস্তবতার ভিত্তিতে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান সরকার স্রেফ পুরনো মানচিত্রগুলোর ভিত্তিতে দাবি করেন এবং এতে করে চীনও ৭৫০ বর্গ মাইল এলাকার ওপর দাবি ছেড়ে দেয়।
সূত্র : আনাদুলু এজেন্সি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us