হিমালয় শিখরে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত, প্রস্তুত চীনও

অশোক শর্মা | Jun 02, 2020 07:46 am
হিমালয় শিখরে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত, প্রস্তুত চীনও

হিমালয় শিখরে শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত, প্রস্তুত চীনও - সংগৃহীত

 

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হিমালয়ের শীর্ষে চীন-ভারত সীমান্তে আবার উত্তেজনার বেড়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ এই বিরোধ শুরু হয মে মাসের প্রথম দিকে। এ সময চীনা সৈন্যরা তিনটি ভিন্ন দিক থেকে লাদাখে ভারত-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করে তাঁবু স্থাপন করে, প্রহরী চৌকি স্থাপন করে। তারা বলেন, চীনা সৈন্যরা চলে যাওয়ার জন্য বারবার দেয়া হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে উচ্চকণ্ঠে ঝগড়া করে, পাথর নিক্ষেপ করে, ঘুষাঘুষিতে লিপ্ত হয। চীন এই সঙ্ঘাতকে বড় করে দেখাতে চাচ্ছে না, তারা তথ্যও দিচ্ছে কম।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের হাজার হাজার সৈন্য মাত্র কয়েক শ’ গজ দূরে মুখোমুখি অবস্থান করছে। ওই এলাকার বিমানবন্দরের সাথে সংযুক্ত করতে উপত্যকাটি দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করতে ভারতকে বারণ করছে চীন। সম্ভবত এই এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই এই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশ্য এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি।

বিশ্লেষক ক্রিস বিগার্স বলেন, গত এক বছর ধরে কাছেই নির্মাণ করা একটি চীনা বিমানবন্দর অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে সামরিক ব্যবহারের জন্য। এখানে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ও চারটি জঙ্গিবিমান মোতায়েন করা হযেছে। তিনি বলেন, নগরি গানসার সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ট্যাক্সিওয়ে, পার্কিং রাম্প নির্মাণ করছে। তবে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের বিষয়টি দেখা যায়নি।
চীন ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যকার মারামারির বিষয়টি ভিডিওতে দেখা গেলও চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বুধবার বলেছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সাধারণভাবে স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রয়েছে।

দুই পক্ষ রণাঙ্গনের সামরিক ইউনিট ও তাদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যথাযথভাবে সমাধানের জন্য। বেইজিংয়ে মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন সংবাদ সম্মেলনে ঝাও এ মন্তব্য করেছেন।
ভারত ও চীন ২০১৭ সালে দোকলামে ৭৩ দিনের একই ধরনের অচলাবস্থার মুখে পড়েছিল। এ সময় চীনা সৈন্যদের ভূটান সীমান্তে একটি রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়। পরিস্থিতি পরে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে নিরসন করা হয়।
দুই দেশ ১৯৫০ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলেও ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধ কয়েক দশকের জন্য তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি করে।

সার্বিকভাবে ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার (৩৫ হাজার বর্গ মাইল) এলাকা দাবি করে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ জনসংখ্যার অরুনাচল প্রদেশও রয়েছে।
আর ভারত বলছে যে পশ্চিম হিমালয়ের আকসাই চিন মালভূমিতে চীন ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার (১৫ হাজার বর্গ মাইল) এলাকা দখল করে আছে।
প্রবাসী তিব্বতি আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামাকে ভারতে আশ্রয় প্রদান করা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। ১৯৫৯ সালে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ার পর তিনি তার দেশ থেকে পালিয়ে যান।
দালাইলামা উত্তরাঞ্চলীয় ভারতীয় শহর ধর্মশালায় স্বঘোষিত প্রবাসী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, এখানে হাজার হাজার তিব্বতি অবস্থান করছে।
১৯৯৩ সালে দুই দেশ তাদের সীমান্তজুড়ে থাকা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) নামে পরিচিত এলাকায় শান্তি ও শান্ত অবস্থা রক্ষার ব্যাপারে একমত হয়।

কিন্তু ২০ দফার বেশে আলোচনা করেও তারা তাদের মধ্যকার বিরোধ মেটাতে পারেনি।
বেইজিংয়ের কাশ্মিরের বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করার বিষয়টি ভারতের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দিয়ে চীন একটি রাস্তা নির্মাণ করেছে, পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে ভারতকেও পরমাণু সরবরাহ গ্রুপে (এনএসজি) প্রবেশে বাধা দিয়ে যাচ্ছে।
আবার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিতে রাজি হচ্ছে না ভারত।
আবার তাদের মধ্যকার সীমান্ত সঙ্ঘাত সত্ত্বেও গত দশকে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে, ভারতের বিপরীতে চীনের বিপুল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।

শতাধিক চীনা কোম্পানি, তাদের মধ্যে কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকাধীনও রয়েছে, ভারতে অফিস খুলেছে বা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

জিয়াওমি, হুয়াই, ভিভো ও অপ্পোর মতো চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের মোবাইল ফোনের ৬০ ভাগ বাজার দখল করে আছে। আর চীনে ভারতের প্রধান প্রধান রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, তামা ও রত্ন পাথর।
দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ২০১৮ সালে ছিল ৯৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে তা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার, এতে চীনাদের অংশ ছিল প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার।

এপি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us