নেপালের সাথে বিরোধে সঙ্কটে ভারত

অমিশ রাজ মুলমি | Jun 04, 2020 07:20 am
মোদি ও ওলি

মোদি ও ওলি - সংগৃহীত

 

কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় সৈন্যরা বিরোধপূর্ণ সীমান্তে চীনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে আছে। তবে এই সময়টাতে নয়া দিল্লি আবার ব্যস্ত আরেক প্রতিবেশী নেপালেল সাথে ভূমি বিরোধ নিরসনে একটি কৌশল প্রণয়নে।

নেপালের সাথে ভারতের কূটনৈতিক বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে ৮ মে। এ সময় নয়া দিল্লি বিরোধপূণৃ কালাপানি দিয়ে হিমালয়ের একটি রোড লিঙ্ক উদ্বোধন করার কথা ঘোষণা করে।
বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও ক্ষুব্ধ নেপালি সংবাদমাধ্যমের চাপে প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রাসাদ শর্মা ওলি দেশের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেন। এতে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরাকে নেপালের মধ্যে দেখানো হয়েছে।
ভারত আপত্তি জানিয়ে বলেছে, নতুন নেপালি মানচিত্রে ভারতীয় ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই বিরোধের উৎপত্তি ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারতের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশের মাধ্যমে। এতে কালাপানিকে ভারতের বলে দেখানো হয়েছে।

এই ঘোষনার পর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ হয়, ওলির সরকার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের অনুরোধ করেন। কিন্তু ভারত এ নিয়ে আর কিছু বলেনি।
দুই প্রতিবেশী এখন মানচিত্রের যুদ্ধের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে এবং উভয় পক্ষেই ক্ষোভ বাড়ছে।
ক্ষোভ
শুরু হযেছিল ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানের একটি অসময়োচিত মন্তব্যের মাধ্যমে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে কাঠমান্ডু কাজ করছে চীনের হয়ে।

নেপালের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঈশ্বর পোখরেল জেনারেল নারাভানের মন্তব্যকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত নেপালি সৈন্যদের প্রতি অবমাননা হিসেবে অভিীহত করেন। প্রায় ৩০ হাজার নেপালি গুর্খা সৈন্য ৪০টি ব্যাটালিয়নের অংশ।
পিছিয়ে না থাকতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ওলি ভারতের জাতীয় মূলমন্ত্র ‘সত্যমেভ জয়তি’ (সত্যের জয়)-এর প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, নয়া দিল্লি এখন ‘সিংহমেভ জয়তি’ (সিংহের জয়) নীতি গ্রহণ করেছে।
ভারতীয় ভাইরাস নেপালে করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার ঘটাচ্ছে বলে করা তার মন্তব্য আগুনে আরো ঘি ঢেলে দেয়।
ওলির জাতীয়তাবাদী অবস্থানটি দৃশ্যত তার দেশের লোকজনকে কেন্দ্র করে। মহামারি সামাল দেয়া নিয়ে সরকারের ভূমিকা থেকে দেশবাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নিতে এবং সেইসাথে দলে তার স্থান আরো সংহত করতে এমনটা করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধংদেহী ভাষ্যকার ও জাতীয়তাবাদী মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নয়া দিল্লি তার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি নিচ্ছে।
কাঠমান্ডু পোস্টের সাবেক সম্পাদক ও কাঠমান্ডুভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইন্ট্রিগেটেড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (আইআইডিএস) সিনিয়র ফেলো অখিলেশ উপাধ্যায় ওলির প্রতিক্রিয়া আসলে জনসাধারণের ক্ষোভই প্রতিফলিত করছে।

তিনি ভারত ও চীনের মধ্যকার ২০১৫ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির (এতে লিপুলেখকে দু দেশের বাণিজ্যের জন্য খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে) প্রতি নেপালের আপত্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকারের পরিবর্তন হলেও নেপালের অবস্থান অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে।
ভারত যুক্তি দেখাচ্ছে যে রাস্তাটি তার ভূখণ্ড দিয়েই গেছে। কিন্তু নেপাল বলছে, নতুন রাস্তাটির অন্তত ১৭ কিলোমিটার গেছে নেপালি ভূখণ্ড দিয়ে। তাদের যুক্তি হলো রাস্তানি নির্মাণ করা হয়েছে মহাকালি নদীর পূর্ব তীর দিয়ে।
নেপাল মনে করে নদীটির পূর্ব দিক হলো তাদের ভূখণ্ড আর তা নির্ধারিত হয়েছে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকদের সাথে করা ১৮১৬ সালের সুগুইলি চুক্তির মাধ্যমে।

সমাধানের পথ কী?

নতুন বিরোধ অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে।
ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার ফেলো কনস্টানটিনো হ্যাভিয়ার বলেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী এর আগে সম্ভাব্য রাস্তাটি ভারতের কাছে ইজারা দেয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি সম্ভাব্য একটি সমাধান ও উত্তেজনা প্রশমনের ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু তারপর উভয় পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপগুলো উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি এখন অনেক বেশি রাজনীতিতে প্রবেশ করায় সংলাপ হয়ে পড়েছে আরো জটিল।
কান্তিপুর ডেইলির সম্পাদক সুধির শর্মা বলেন, উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান কঠোর করায় বিরোধটি অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়েছে।

আবার সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরো সঙ্কটজনক করে তুলেছে। আবার নেপালি দাবি মেনে নিয়ে সৈন্য প্রত্যাহার করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে ভারতের জন্য।
ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারত-নেপাল সীমান্ত বিরোধ পরিস্থিতিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। আবার নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি সরকার বিনিয়োগ ও আরো ভালো কানেকটিভিটির জন্য চীনৈর কাছে যাওয়ায় ভারত আরো বেশি সমস্যায় পড়েছে।
আল জাজিরা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us