লবণ নিয়ে বিভ্রান্তি

ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল | Jun 27, 2020 03:32 pm
লবণ নিয়ে বিভ্রান্তি

লবণ নিয়ে বিভ্রান্তি - ছবি : সংগৃহীত

 

খাদ্যে লবণের ব্যবহার নিয়ে অনেকের মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি। লবণ খাব কি না এ নিয়ে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। লবণ কি শুধুই খাবারের স্বাদ বাড়ায় নাকি স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? সত্যিকার অর্থে শরীরে লবণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

লবণ ছাড়া কি কোনো খাবার আপনার মুখে রুচবে? কেউ যদি বলেন, লবণ আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, তিনি ভুল বলেন। যেকোনো বস্তুরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। হৃদরোগের জন্য অ্যাসপিরিন দেয়া হয়। আরো অনেক কারণেই অ্যাসপিরিন খেতে বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী ওষুধ অ্যাসপিরিন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অ্যাসপিরিন খেলে অথবা পেপটিক আলসারের রোগীরা অ্যাসপিরিন খেলে কতটা স্বাস্থ্যসমস্যায় পড়তে পারেন সে হিসেব আছে? অ্যাসপিরিনের কথা বাদই দিলাম, ভিটামিনের কথাই ধরা যাক। কে না জানেন, ভিটামিন শরীরের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। কিন্তু অতিরিক্ত ভিটামিন খেলে ঘটতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়। একইভাবে পরিমিত লবণ গ্রহণ শরীরের জন্য অপরিহার্য।

কেউ যদি পুরোপুরি লবণ বাদ দেন তিনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিপর্র্যয়ের মুখে পড়বেন। সব ওষুধের কিংবা বিভিন্ন খাদ্য তখন যেমন সতর্কতা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বিধি-নিষেধ রয়েছে তেমনি লবণের ক্ষেত্রেও রয়েছে। তাই বলে লবণকে পুরোপুরি বাদ দেয়ার কথা কেউ বলতে পারেন না। আপনি অ্যালার্জির কারণে ডিম খান না, অন্য কেউ হয়তো কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে এ ভয়ে ডিম খান না, কিন্তু যাদের এ সমস্যা নেই, কিংবা যাদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে তারা কি ডিম খাওয়া বাদ দেবেন? ঠিক একইভাবে, শরীরে লবণের ঘাটতি এড়াতে লবণ না খেয়ে উপায় কী? হুট করে লবণ বাদ দেয়াও ঠিক নয়। নির্দিষ্ট শারীরিক কোনো কারণ ছাড়া লবণ বাদ দেবেন কেন? লবণকে প্রয়োজনে সীমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে পারেন, কিন্তু পুরোপুরি বাদ দিতে পারেন না। কারণ শরীরে লবণের অভাব হলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন উপসর্গ।

লবণ কী?
খাদ্য লবণ হিসেবে আমরা যেটা গ্রহণ করি সেটা হলো সোভিয়াম কোরাইড। সোডিয়াম ও কোরাইড দুটো উপাদানের সমন্বয়ে এটা একটি সাদা স্ফটিকসদৃশ রাসায়নিক যৌগ। বিশ্বের অনেক স্থানে প্রাকৃতিকভাবে লবণ পাওয়া যায়। সমুদ্রের পানিতে রয়েছে প্রচুর লবণ। এতে গড়ে ২.৬ শতাংশ (ওজনে) সোডিয়াম কোরাইড রয়েছে বা প্রতি কিউবিক কিলোমিটারে রয়েছে ২৬ মিলিয়ন মেট্টিক টন। সমুদ্রের পানিতে অন্যান্য দ্রবণীয় কঠিন বস্তু রয়েছে, তবে সব দ্রবণীয় কঠিন বস্তুর প্রায় ৭৭ শতাংশই লবণ।
সোডিয়াম কোরাইডের স্ফটিকগুলোকে ঘনক্ষেত্রবিশিষ্ট ধরনের। তাপমাত্রায় এর স্ফটিকসদৃশ গঠন পরিবর্তিত হতে পারে।

লবণ বিভিন্ন ধরনের রয়েছে, যেমন ইভাপোরেটেড সল্ট, রক সল্ট, সোলার সল্ট ইত্যাদি। রক সল্ট বা খনিজ লবণে সোডিয়াম কোরাইড রয়েছে ৯৫ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশ। ইভাপোরেটেড ও সোলার লবণে সোডিয়াম কোরাইড রয়েছে ৯৯ শতাংশের বেশি। ইভাপোরেটেড বা বাষ্পীভূত লবণ তৈরি করা হয় সমুদ্রের নোনাপানিকে উচ্চ পরিশোধিত করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এতে সোডিয়াম কোরাইডের পরিমাণ থাকে ৯৯.৯৯ শতাংশ।
সাধারণ লবণ বা সোডিয়াম কোরাইডকে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশন নিরাপদ খাদ্য সংযোজন দ্রব্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

শরীরে লবণের ভূমিকা
সাধারণভাবে শরীরে লবণ নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করে
ষ সছিদ্র পর্দার ভেতর দিয়ে তরল পদার্থের ক্ষরণ বা আস্রবণ সংক্রান্ত অবস্থা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে। লবণের কারণে শরীরের এক কোষ থেকে অন্যকোষে তরল পদার্থের চলাচল সম্ভব হয়
ষ পানির সমতা বজায় রাখে

ষ রক্তের ঘনমান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে
ষ শরীরের জলীয় অংশে অম্ল ও ক্ষারের সমতা সঠিকভাবে বজায় রাখে
ষ টিস্যু গঠনে বিশেষ করে হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে
ষ মাংসপেশি ও স্নায়ুকোষের স্বাভাবিক উত্তেজনা বজায় রাখে
ষ রক্ত জমাট বাঁধার পরিবেশ বজায় রাখে

ষ কিছু এনজাইম এবং হরমোন ব্যবস্থায় ও অক্সিজেন সরবরাহে প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে যোগান দেয়
ষ কোষের আবরণ এবং কৈশিক নালীতে জলীয় উপাদানের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে
লবণের অন্যান্য ব্যবহার
ষ খাদ্য তৈরিতে এবং খাদ্যকে উপাদেয় করতে
ষ রাসায়নিক এবং পরিষ্কারক বস্তু হিসেবে

ষ লবণ পোকামাকড় মারতে সাহায্য করে এবং পিঁপড়েকে দূরে রাখে
ষ লবণ ব্যবহারে বাথটাব এবং গোসলখানার দাগ দূর হয়ে ঝকঝকে তকতক করে
ষ লবণের হালকা দ্রবণ চমৎকার মাউথওয়াশ হিসেবে কাজ করে। এটা দিয়ে গরগরা করা যায় এবং সুন্দরভাবে চোখ ধোয়া যায়
ষ এটা একটি কার্যকর দাঁতের মাজন। অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও লবণ কার্যকর
ষ পানিতে লবণ মিশিয়ে গরম করলে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং রান্নার সময়টাও কম লাগে অর্থাৎ রান্না খুব সহজ হয়

ষ লবণ পানিতে ডিম সেদ্ধ করলে খোসা ছড়ানো সহজ হয়
ষ লবণ পানিতে ডিম পোচ করলে ডিম সাদা থাকে
ষ খোসা ছাড়ানোর পর ঠাণ্ডা, হালকা লবণ পানিতে আপেল, নাশপাতি ও আলু ডুবিয়ে নিলে তারা পূর্বাবস্থার রঙ ফিরে পায়
ষ লবণ পানিতে স্পিনিজ ধুয়ে নিলে বারবার পরিষ্কার করার দরকার হয় না
ষ তৈলাক্ত প্যান পরিষ্কার করার সময় সামান্য লবণ মেশালে সহজে পরিষ্কার হয়
ষ কাপে চা কিংবা কফির দাগ পড়লে লবণ দিয়ে পরিষ্কার করলে সহজেই দূর হয়
ষ লবণ ও সোডা পানি দিয়ে রেফ্রিজারেটর পরিষ্কার করলে ভেতরটা ভালো থাকে
ষ কফি বানানোর সময় সামান্য লবণ মেশালে কফির স্বাদ বেড়ে যায়

ষ হাত থেকে পেঁয়াজের গন্ধ দূর করতে লবণে ভিনেগার মিশিয়ে হাতে ঘষলে গন্ধ সহজেই দূর হয়
ষ দুধে এক চিমটি লবণ মেশালে দুধ দীর্ঘ সময় সতেজ থাকে
ষ গোশত, মাছ কিংবা অন্য অনেক খাবার সংরক্ষণে লবণ ব্যবহার করা হয়।

লবণ এবং স্বাস্থ্য
লবণ কেবল জীবনের জন্যই প্রয়োজনীয় নয় সুস্বাস্থ্যের জন্যও লবণের প্রয়োজনীয় রয়েছে। লবণ শরীরের কোষগুলোর ভেতর ও বাইরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে। আমাদের অধিকাংশ লবণ আসে খাদ্য থেকে, কিছুটা আসে পানি থেকে। চিকিৎসকরা সচরাচর ব্যায়াম করার সময় পানি ও লবণের ক্ষয় পূরণ করতে লবণ-পানি গ্রহণের পরামর্শ দেন। যারা বাইরে শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদেরও লবণ গ্রহণ করা উচিত। গরমে পানি শূন্যতা এবং হিট ক্রাম্প থেকে রেহাই পেতে লবণ পানির মিশ্রণ খেতে হবে। সন্তানসম্ভবা মায়েদের পর্যাপ্ত লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়।
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমের ক্ষেত্রে লবণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়।

দি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য দৈহিক কমপক্ষে ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণের সুপারিশ করছে। জীবনধারণ এবং বংশগত গঠনের ওপর সোডিয়ামের প্রয়োজন একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সোডিয়াম শরীরের প্রধান ভিত্তি। এটা হৃৎপিণ্ডের ছন্দোবদ্ধ গতি বজায় রাখে। সোডিয়ামের জন্য স্নায়ু ও মাংসপেশি কাজ করতে পারে। সোডিয়ামের অভাব হলে দুর্বলতা, স্নায়ুর গণ্ডগোল, ওজন কমে যাওয়া, সল্ট হাঙ্গার, পেশির খিঁচুনি, হজমে গণ্ডগোল, মাথাব্যথা, মারাত্মক পানিশূন্যতা, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্রভৃতি স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়। সোডিয়ামের প্রধান উৎস হলো খাদ্যলবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড।

ক্লোরাইড সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। শরীরে পানির সমতা বজায় রাখতে, অম্ল ও ক্ষারের সমতা বজায় রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকস্থলীর রস হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপাদনে কোরাইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ
হ ডায়রিয়া হলে শরীরে থেকে প্রচুর লবণপানি বের হয়ে যায়। তখন রোগীকে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ দেয়া হয়
হ কলেরা রোগীকে সোডিয়াম ক্লোরাইড দেয়া হয়

হ ডায়াবেটিসের রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন দেয়ার প্রয়োজন হলে নরমাল স্যালাইন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড দেয়া হয়
হ রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রদানের মাধ্যমে তার রক্তচাপ স্বাভাবিক করা হয়
হ প্রচণ্ড গরমে শরীরে মাংসপেশির সমস্যা দেখা দেয়। প্রচণ্ড ঘামের সাথে শুরু হয় মাংসপেশির ব্যথা ও খিঁচুনি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রোগীকে লবণপানি পান করানো হয় এবং খাবারে লবণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়
হ গরমকালে স্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ কমে যায়। প্রস্রাব কম হয় এবং মাংসপেশির খিঁচুনি হয়। এসব থেকে রেহাই পেতে সাধারণভাবে গরমকালে লবণপানি খেতে বলা হয়

হ গর্ভবতী মহিলার শরীর ব্যথা করলে, কিংবা পা, গোড়ালি ফুলে গেলে অথবা পিঠ ব্যথা করলে কিংবা কান্তি অনুভব করলে গোসলের পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিলে ক্রমেই সমস্যা কেটে যায়
হ গলা ব্যথার জন্য আট আউন্স হালকা গরম পানিতে আধ চা চামচ লবণ মিশিয়ে গরগরা করলে গলাব্যথা কমে যায়
হ দাঁত পরিষ্কার করার জন্য দু’ভাগ বেকিং সোডার সাথে এক ভাগ লবণ গুঁড়ো করে মিশিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত পরিষ্কার হয়, সেই সাথে প্লাক দূর হয় ও মাঢ়ি সুস্থ থাকে
হ নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বেকিং সোডার সাথে সমপরিমাণ লবণ মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করলে নিঃশ্বাস মধুর হয়

হ চোখের কান্তি দূর করার জন্য এক পাইন্ট পানিতে আধা চা চামচ লব্যণ মিশিয়ে ওই দ্রবণ দিয়ে কান্ত চোখ ধুয়ে ফেললে চোখের কান্তি দূর হয়
হ চোখের নিচে ফুলে গেলে এক পাইন্ট গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে তাতে প্যাড বা তুলা ভিজিয়ে ফোলা এলাকায় লাগালে ফোলা দূর হয়
হ পায়ে কান্তি অনুভব করলে কিংবা পায়ে ব্যথা করলে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখলে পায়ের ব্যথা চলে যায়। পরে পা ঠাণ্ডা পানিতে ধুতে হবে

হ মৌমাছি হুল ফোটালে তাৎক্ষণিক জায়গাটিতে লবণ লাগালে ব্যথা কমে যায়
হ বিষাক্ত লতার চুলকানি ও জ্বালা থেকে রেহাই পেতে আক্রান্ত স্থানে লবণ লাগালে উপকার পাওয়া যায়
হ মুখের ত্বকের সজীবতা বাড়াতে অলিভ অয়েলের সাথে সমপরিমাণ লবণ মিশিয়ে মুখের ত্বক এবং গলায় হালকা ম্যাসাজ করলে ত্বক উজ্জীবিত হয়। পাঁচ মিনিট পর ত্বক ধুয়ে ফেলতে হবে
হ ‘সল্ট ওয়েস্টিং’ রোগগুলোতে উচ্চমাত্রার সোডিয়াম ও পানি গ্রহণের প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে সোডিয়াম কোরাইড দেয়া হয়

লবণ ও উচ্চ রক্তচাপ
লবণের বড় কাজ হলো রক্তের ঘনমান এবং চাপ নিয়ন্ত্রণসহ রক্তনালীগুলোর নমনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করা। মানুষের হৃৎপিণ্ড একটি বড় পাম্প। যখন এটা সঙ্কুচিত হয়, এটা রক্তকে সঞ্চালনতন্ত্রের ধমনীগুলোর মাধ্যমে সঞ্চারিত করে। এই চাপকে বলে সিস্টোলিক চাপ বা সর্বোচ্চ চাপ। হৃৎস্পন্দনের মাঝখানে হৃৎপিণ্ড প্রসারিত হয়। দুই হৃৎস্পন্দনের মাঝখানের চাপ হলো ডায়াস্টোলিক চাপ বা সর্বনিম্ন চাপ। যখন রক্তের ঘনমান বেড়ে যায় কিংবা রক্তনালীগুলোর দেয়াল পর্যাপ্ত প্রসারিত হয় না, তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়। ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউটের মতে স্বাভাবিক রক্তচাপ ১৩০/৮৫-এর চেয়ে কম। রক্তচাপ দেখে একজন মানুষের হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালী সংক্রান্ত অবস্থার কথা জানা যায়।

খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ শতাব্দীতে বিখ্যাত চীনা সম্রাট হুয়াং চাই লবণের সাথে ‘নাড়ি শক্ত হওয়ার’ সম্পৃক্ততা নথিভুক্ত করেন। আমরা জেনেছি, লবণ ও রক্তচাপের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সোডিয়াম গ্রহণের সাথে রক্তচাপের পরিবর্তন একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। উচ্চ রক্তচাপে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। সেসব কারণে উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য লবণ সীমিত পরিমাণ গ্রহণের কথা বলা হয়।
লবণ গ্রহণ কি একেবারেই বাদ দেবেন? এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক। সত্যিকার অর্থে লবণ একেবারেই বাদ দেয়ার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখানো যায় না। লবণের প্রতি যাদের সংবেদনশীলতা রয়েছে তাদের উপকার হয় সত্য, কিন্তু অন্যরা এ থেকে তেমন সুবিধা পান না। বরং দীর্ঘদিন লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই গবেষকরা উচ্চ রক্তচাপে ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি লবণ সীমিত পরিমাণ গ্রহণের কথা বলেন, লবণ পরিহার করার কথা বলেন না। দেখা গেছে, লবণ বাদ দিলে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধে অনেক সময় কাজ করে না। তাই উচ্চ রক্তচাপে একেবারে লবণ বাদ দেয়ার কোনো যুক্তি নেই।

আয়োডিনযুক্ত লবণ
আয়োডিনযুক্ত লবণের জনক হলেন অ্যামেরিকার ডেভিড মেরিন (১৮৮০-১৯৭৬)। থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে আয়োডিন অপরিহার্য। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগ হয়। সমুদ্রের পানিতে আয়োডিন থাকে। কিন্তু সমুদ্র থেকে দূরে যেখানকার মাটিতে আয়োডিন থাকে না সেখানে প্রায়ই গলগণ্ড রোগ দেখা যায়। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড ছাড়াও বিভিন্ন স্নায়ুবিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ১৯২৪ সালে ডেভিড মেরিন এবং তার সহকর্মীরা গলগণ্ড অধ্যুষিত অঞ্চলে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করে সুফল পান। আয়োডিনের অভাব প্রতিরোধ করতে জনগণকে বর্তমানে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের জোর অনুরোধ করা হয়। সাধারণ লবণের চেয়ে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের পক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে। এর সুফলও বেশি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us