প্রতিবেশী এলাকা : ভারত আউট, চীন ইন

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jul 01, 2020 03:56 pm
প্রতিবেশী এলাকা : ভারত আউট, চীন ইন

প্রতিবেশী এলাকা : ভারত আউট, চীন ইন - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারত যখন চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন ভারতের উত্তরের প্রতিবেশী দেশ ফুঁসে উঠেছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাদগা প্রসাদ ওলি অভিযোগ করেছেন যে, তার সরকারকে উৎখাতের জন্য ষড়যন্ত্র করছে ভারত, কারণ বিতর্কিত অঞ্চলকে নেপালের অন্তর্ভুক্ত করে দেশের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছেন তিনি।

কিছু কৌশলগত বিশেষজ্ঞ যদিও বলেছেন যে ভারত-নেপাল সম্পর্কের তিক্ততার পেছনে চীনের হাত রয়েছে, তবে একই সাথে তারা এই সতর্কতাও জানিয়েছেন যে, এই অঞ্চলের চীনের প্রভাব বেড়ে গেলে সেটা দক্ষিণ এশিয়ার বাকি অংশেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে ভারত।

জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির (জেএনইউ) নিরস্ত্রীকরণ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব বলেছেন, “উদীয়মান পরাশক্তিরা যেমন আচরণ করে, চীন সে রকমই আচরণ করছে – তারা পেশীশক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। এটা যখন ঘটবে, তখন তার চারপাশের দেশগুলো হয় তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে (যেমন ভারত) বা তাদের সাথে যোগ দেবে (যেমন দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো)”।

জ্যাকব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশ চীনের ‘বদান্যতা’ থেকে বিপুল উপকৃত হচ্ছে। সেটার সাথে তাল মেলাবার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতা ভারতের নেই।

গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ভারতকে হটিয়ে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে চীন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০৮ সালে মালদ্বীপে চীনের চেয়ে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ৩.৪ গুণ বেশি ছিল। ২০১৮ সালে এসে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। চীনের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ভারতের সাথে বাণিজ্যের প্রায় দ্বিগুণ। নেপাল ও শ্রীলংকায় চীনের বাণিজ্য এখনও ভারতের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও এই দূরত্বটা ক্রমেই কমে আসছে।

আরেকটি যে উপায়ে চীন এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়াচ্ছে, সেটা হলো বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান দেয়া। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের চায়না গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ট্র্যাকারের তথ্য মতে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকাকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় চীন এখন সবচেয়ে বড় বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশ।

তাদের ডাটাবেজে দেখা যাচ্ছে যে, চীন মূলত শক্ত অবকাঠামো – বিদ্যুৎ, সড়ক, রেলওয়ে, ব্রিজ, বন্দর ও বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। ট্র্যাকারের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ বিনিয়োগই হলো জ্বালানি ও পরিবহন খাতে।

অবকাঠামো খাতের বাইরে এই সব দেশের আর্থিক খাতেও বিনিয়োগ করেছে চীন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ঢাকা ও করাচির স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ করেছে বেইজিং।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, বেইজিং পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে যাতে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে নিজেদের অবস্থানকে জোরালো করা যায়। কিছু কৌশলগত বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, ভারতকে চারদিক থেকে সামরিক ও বাণিজ্যিক ফ্যাসিলিটি দিয়ে ঘিরে ফেলার জন্য এই ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ গড়ে তুলছে চীন।

কিছু গবেষক অবশ্য বলেছেন যে, চীনের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক অনেক জটিল এবং এখন যে পর্যায়ের সহযোগিতা রয়েছে, সেখান থেকে এত কিছু জল্পনা করার সুযোগ নেই।

২০১৪ সালে ভারতের মোদি সরকার প্রতিবেশী প্রথম নীতি নিয়ে দারুণ একটা সূচনা করেছিলেন। কিন্তু ছয় বছরের মাথায় এসে তাদেরকে বিভিন্ন দেশের অসন্তোষের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ভারতের স্বল্প জনবলের কূটনৈতিক ক্যাডার এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যদিও এখানে সুযোগকে সীমিত করে দিয়েছে, তবে একই সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে যত্নের সাথে বিবেচনা না করার কারণে প্রতিবেশীদের সাথে বর্তমান অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

জেএনইউ-এর জ্যাকব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা উপস্থিতির হুমকি আরও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব যদি ভারত তার প্রতিবেশীদের সাথে বিনিময়ের ধরন বদলায় এবং তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে আরও বেশি যত্নবান হয়।

সূত্র : এসএএম

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us