লাদাখে চীনা উপস্থিতিতে লাভবান হবে পাকিস্তান?

টম হোসাইন | Jul 03, 2020 07:05 pm
লাদাখে চীনা উপস্থিতিতে লাভবান হবে পাকিস্তান?

লাদাখে চীনা উপস্থিতিতে লাভবান হবে পাকিস্তান? - ছবি : সংগৃহীত

 

পাকিস্তান একুশ শতকের সুনির্দিষ্ট ভূরাজনৈতিক যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছে এবং এর কৌশলগত সম্পৃক্ততা ইসলামাবাদের জন্য বিশাল।
কাশ্মিরের লাদাখ অঞ্চলে চীন ও ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে হওয়া সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী সঙ্ঘাতটি ১১ সেপ্টেম্বর আল কায়েদার হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি ঘটিয়েছে।
২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে উপস্থিত মার্কিন বাহিনী এই অঞ্চলের অন্য সব ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে ঢেকে রেখেছিল।
২০০২ ও ২০০৮ সালে এটিই সীমান্ত সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে যুদ্ধে না যেতে ভারত ও পাকিস্তানকে বাধ্য করেছিল।

উভয় ঘটনাতেই বৃহৎ শক্তির কূটনীতির কারণে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। এসময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ে একসাথে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করেছিল। এর ফলেই ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ সমাপ্তি সম্ভব হয়েছিল।
গত বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণেল পর থেকে এখানকার স্থানীয় শক্তিগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা জটিল হয়ে পড়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র তার প্রত্যাহারের মাধ্যমে এতে ভালোভাবেই ইন্ধন দিচ্ছে।
পাকিস্তানকে না রাগিয়েই যুক্তরাষ্ট্র চতুরতার সাথে কাশ্মিরকে কেন্দ্রীয় এলাকার সাথে সংযুক্ত করার নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগকে গ্রহণ করে নিয়েছে।
এতে সাহসী হয়েই লাদাখে তীব্রতা বাড়য়েছেন মোদি। এখন আলোচনায় না থাকা কাশ্মির সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় পরিণত হয়েছে, চীন এবং মার্কিন-নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যকার নতুন স্নায়ুযুদ্ধের উত্তপ্ত কেন্দ্র হয়ে গেছে।

এখানে পাকিস্তানের কৌশলগত হিসাব বিপুল। কাশ্মির হলো পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির মূলবিন্দু। এই একটি ইস্যুতে পাকিস্তানের সব স্তম্ভ ও জনমত একই অবস্থানে রয়েছে।
চীন ও ভারতের মধ্যে ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে কাশ্মির বিবেচিত হয়ে আসছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিরোধের বিষয় হিসেবে। এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা আসত না।
কাশ্মির কূটনীতিতে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণের জন্য গত অক্টোবরে চীনকে আহ্বান করে কী মূল্য দিতে হচ্ছে, তা এখন হিসাব করছেন পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা।
এই ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ারের’ প্রথম শিকার হলো কাশ্মির একীভূত করার ভারতীয় পদক্ষেপের প্রতি পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া।

কাশ্মিরে ভারতের নৃশংসতাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল পাকিস্তান।পাকিস্তান মনে করে, মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তারা নৈতিক বিজয় লাভ করেছে। তবে কাশ্মিরিদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করতে ব্যর্থতাও তারা এর মাধ্যমে আড়াল করার চেষ্টা করেছে।
তবে লাদাখে চীনা উপস্থিতির ফলে পাকিস্তানের ওপর ভারতের হামলা হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে বলেও মনে হতে পারে। কারণ চীন লাদাখে উপস্থিত থাকায় পাকিস্তানে হামলা চালানো মানে ভারতকে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া। আর তাতে ভারতের জয়ী হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই।

এই ধারণা সত্ত্বেও ইসলামাবাদের নীতিনির্ধারকের দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। তাদের মতে, মোদি প্রশাসন সত্যি সত্যিই লাইন অব কন্ট্রোলে অভিযান চালানোর চেষ্টা করছে।
বরং ইসলামাবাদ মনে করে, লাদাখে ভারতের বিপর্যয়ের কারণে মুখ রক্ষার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযান চালানোর আশঙ্কা আরো বেড়ে গেছে।
পাকিস্তানের আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো, চীন-ভারত উত্তেজনা বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য গত ১৮ মাস ধরে পাকিস্তান অনেক পরিশ্রম করেছে। এর ফলেই ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিচুক্তি হওয়া সম্ভব হয়েছে।
এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান শিবিরে এই আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল যে এখন তাদের উপর থেকে বিপুল চাপ হ্রাস পাবে। বিশেষ করে পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করা ফিন্যান্সিয়াল টাস্ক ফোর্সের সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগটি প্রত্যাহার করা হবে।

কিন্তু সম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে যে পাকিস্তান এখনো আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন করে আসছে। এটি পাকিস্তানের জন্য বেশ কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এদিকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ ত্বরান্বিত হওয়ায় ওয়াশিংটন প্রকাশ্যভাবে পাকিস্তানের স্বল্প পাল্লার পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ আবার প্রকাশ করতে শুরু করেছে। পাকিস্তান এই অস্ত্রকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তান মনে করে, প্রচলিত যুদ্ধের সমীকরণে ভারত অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে পরমাণু অস্ত্র দিয়েই ভারতের প্রচলিত বাহিনীর আক্রমণ সামাল দেয়া সম্ভব হবে।
তবে ভারতের সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি নিয়ে যে অভিযোগ করে আসছিল পাকিস্তান, তা আর গুরুত্ব পাবে না একই সক্ষমতা থাকা চীনের সাম্প্রতিক মোতায়েনে।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তান তার সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বেশ সচেতন রয়েছে। কিন্তু সেগুলো মোকাবিলার উপায় নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না।

টিআরটি ওয়ার্ল্ড

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us