যেভাবে তৈরি হচ্ছে করোনার ভ্যাকসিন

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Jul 09, 2020 09:21 am
করোনার ভ্যাকসিন

করোনার ভ্যাকসিন - ছবি : সংগৃহীত

 

সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটা কথা—কবে আসবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন? আলোচনা করলেন বাদুর ইনস্টিটিউট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহকারী অধ্যাপক ডঃ অনিবার্ণ মিত্র।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা নিয়ে বাংলাদেশে নয়, উপমহাদেশে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। তবে তখন দুশ্চিন্তা কাটাতে আমরা সবাই একে-অপরকে আশ্বস্ত করতে লাগলাম – ‘ওঃ! ভ্যাকসিন এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে’ বা ‘চিন্তার কিছু নেই, ভ্যাকসিন তো আসছেই’, ইত্যাদি।

এই আশা অমূলক নয়। এডওয়ার্ড জেনারের আমল থেকে নানা রোগের টিকাকরণ যে কত কোটি প্রাণ বাঁচিয়েছে, ইয়ত্তা নেই। তাই, গত তিন মাস ধরে সবার ব্যাকুল প্রশ্ন–‘এখনো ভ্যাকসিন তৈরি হলো না?’ কিন্তু, ‘উঠল বাই, ভ্যাকসিন চাই’ বললেই ভ্যাকসিন তৈরি হয় না। সেই প্রস্তুতির বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া দীর্ঘ।

প্রথমে আসে প্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। যেখানে ইঁদুর আর বাঁদরদের শরীরে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখতে হয়। সেখানে সফল হলে আসে ফেজ ১ ট্রায়াল। অল্প কিছু মানুষের ওপর প্রয়োগ। যদি এদের শরীর জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সফল হয়, তখন আসে ফেজ ২ আর ফেজ ৩ পরীক্ষা। যেখানে কয়েক শ' থেকে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়। তাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া মাপা হয়; পরীক্ষা হয় অ্যালার্জি বা অন্য কোন রোগ বাসা বাঁধছে না তো?

বুঝতেই পারছেন, এ কাজে অযথা হড়বড় করলে হিতে বিপরীত হবে। তাছাড়া, শুধু ঠিকঠাক ভ্যাকসিন বানালেই হলো না। ল্যাবে ছোট্ট করে বানানো এক জিনিস। কোটি কোটি মানুষের জন্যে কারখানায় প্রস্তুত করা, বিশেষ কাচের তৈরি আম্পুলে প্যাকেজ করা, ঠাণ্ডা অবস্থায় দেশে ও বিদেশে এক্সপোর্ট করা এক সুবিশাল, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

তবে, এতে মুষড়ে পরার কিছু নেই। কারণ, এ কথা অনস্বীকার্য যে নতুন করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করতে পৃথিবী জুড়ে যে কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে, এমনটা মানবসভ্যতার ইতিহাসে কখনো হয়নি। এই মুহূর্তে ১৪৫টির বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে! মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে অন্তত ১৭টি ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়ালে ঢুকে পড়েছে! নানাভাবে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। প্রথাগত পদ্ধতি যেমন আছে, তেমনই আছে আধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবহার।

এই মুহূর্তে যে কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রকল্প অগ্রগণ্য সেগুলি হলো—
১. একটি মার্কিন সংস্থা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করছে। প্রথম দুটি পর্বে ফলাফল বেশ সন্তোষজনক। এ মাসে তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা শুরু হবে এবং সংস্থাটির আশা, সামনের বছরের প্রথমদিকে তাঁরা টিকা বাজারে ছাড়তেও পারবেন।

২. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি বহুজাতিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগেও তৈরি হচ্ছে টিকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা চলছে ইংল্যান্ডে। কিন্তু, ওখানে যেহেতু সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কমে গিয়েছে, তাই ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা বুঝতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল—যেখানে পুরোদমে মহামারি এখনো চলছে, এর পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

৩. জার্মান, মার্কিন আর চীনের একটি সংস্থা হাত মিলিয়েছে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। প্রাথমিক দুটি পর্বে অল্প কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, তিন সংস্থার একটি সিইও আশাবাদী যে, ২০২০ শেষ হওয়ার আগেই তারা কয়েক মিলিয়ন টিকার অ্যাম্পিউল বাজারে আনতে পারবেন।

৪. একটি আমেরিকান সংস্থা র আধুনিক ডিএনএ টিকা পরীক্ষা করা হয়েছিল ৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপরে। ৩৪ জনের ফলাফল বেশ ভালো, কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। এবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের কাজ শুরু হবে।

৫. মার্চ মাসে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চেষ্টা করেছিলেন, যাতে করোনা টিকা তৈরির টিকা তৈরিতে যুক্ত একটি কোম্পানি তল্পিতল্পা গুটিয়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেয়। কারণ, এদের ভ্যাকসিনও সফল হতে পারে। জুন মাস থেকে ফেজ ১ ট্রায়ালের কাজ চলছে।

৬. একটি খ্যাতনামা মার্কিন সংস্থা তৈরি করছে এমন একটি টিকা, যাতে আছে ন্যানোপার্টিক্যালস বা অতি ক্ষুদ্র কণা। সেগুলোর গায়ে আটকে দেয়া হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রোটিন। শরীরে দেয়া হলে এই ন্যানোপার্টিক্যালস আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাগিয়ে তুলবে; ভবিষ্যতে আসল ভাইরাস ঢুকলে, শরীর দ্রুত যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকবে।

৭. মে মাসে প্রথম পর্বের ট্রায়ালে সফল হয়েছে একটি চীনা কোম্পানি। এদের সহযোগী হলো বেজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এবং আকাদেমি অব মিলিটারি মেডিক্যাল সায়েন্সেস । দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়ালে বেশ ভালো ফলাফল দেখায় চীনা সেনাবাহিনী এই টিকাকে ‘স্পেশালি নিডেড ড্রাগ’ বলে সম্বোধন করেছে। সব সৈন্যকে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।

৮. চীনা সরকারি সংস্থা প্রথম দুই পর্ব সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে চুক্তি করেছে ফেজ ৩ পরীক্ষার জন্যে।আরো ৬-৭ টি পরীক্ষামূলক টিকা নিয়ে চীনা বিজ্ঞানীমহল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে টেক্কা দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।

৯. এছাড়া লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ, জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী এক সংস্থা, এক ফরাসি নামজাদা ওষুধ কোম্পানি, রুশ সরকারের গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিখ্যাত একাধিক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সবাই করোনার বিরুদ্ধে নেমে পড়েছে। একই সঙ্গে ইতিহাসে নিজের নাম চিরস্থায়ী করে রাখা আর কোটি কোটি ডলারের মুনাফা কে ছাড়তে চাইবেন?

কোনো সন্দেহ নেই, ভ্যাকসিন তৈরিতে আজ না হয় কাল সাফল্য আসবে। অন্তত আংশিক সাফল্য আসবেই।

সূত্র : বর্তমান

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us