পুতিন-এরদোগানের লিবিয়া সমীকরণ

সিনেম সিনগিজ | Jul 12, 2020 09:46 pm
পুতিন ও এরদোগান

পুতিন ও এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

 

সিরিয়া ও লিবিয়া পরিস্থিতি হচ্ছে আরব বিশ্বের গণজাগরণের বেদনাদায়ক পরিণতি। এই উভয় শক্তিশালী আরব দেশে বিদেশী শক্তিগুলোর বড় ধরনের স্বার্থ রয়েছে।

গৃহযুদ্ধ, বিদেশী আগ্রাসন এবং প্রক্সিযুদ্ধের কারণে দেশ দু’টি ভেঙে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে একই ধরনের ভাগ্যবরণ করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দু’দেশের মধ্যে যেমন সাদৃশ্য রয়েছে, তেমনি আবার বিভিন্ন দিকে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। উভয় দেশের একটি সাদৃশ্য বা মিল হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দু’দেশেই তুরস্ক ও রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অবশ্য সিরিয়া ও লিবিয়ার সঙ্ঘাতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। সিরিয়ায় তুরস্ক ও রাশিয়া ভিন্ন ভিন্ন দল-উপদলের প্রতি তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে সেখানে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আসতানা শান্তিপ্রক্রিয়া নামে একটি রজানৈতিক প্লাটফর্মে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই প্লাটফর্মে তুরস্ক ও রাশিয়া এই সব প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেছে। শান্তি আলোচনায় সিরিয়ার সরকার বিরোধী পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপর দিকে, রাশিয়া সিরীয় সরকার পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করেছে। এ ধরনের সহযোগিতা উভয় দেশের জন্যে একটি ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ গড়ে তোলে। সিরিয়ার জন্য একটি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে তুরস্ক কুর্দি নেতৃত্বাধীন শক্তিকে তাদের কোনো বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে। অপর দিকে রাশিয়া সিরিয়া সরকারকে কিছু এলাকা পুনর্দখলে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে।

লিবিয়ার অবস্থা আরো জটিল। সিরিয়ায় অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়া এবং তুরস্ক বিরোধী দলগুলোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। গোলযোগপূর্ণ দেশটিতে এ পর্যন্ত আঙ্কারা ও মস্কো একে অপরের ভূমিকার সমালোচনা করে যেকোনো সাহসী বক্তব্য দেয়ার বিষয় এড়িয়ে গেছে। কিন্তু তারা লিবিয়ায়ও সিরিয়ার মতো একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারবে কি না তা দেখার এখনো বাকি রয়েছে। তুরস্ক ও রাশিয়া লিবিয়ায় প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উভয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থসহ নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ জন্য দেশটিতে যাই ঘটুক না কেন, সে ব্যাপারে তারা মরিয়া। তুরস্ক বর্তমান অবস্থা বজায় রাখতে চায় এবং ন্যাশনাল অ্যাকর্ড সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

কয়েকটি কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমত, আঙ্কারা এই অঞ্চলে আরেকটি আরবমিত্রকে হারাতে চায় না। দ্বিতীয়ত, লিবিয়ায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার থাকলে তারা ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের স্বার্থ রক্ষা করবে। তৃতীয়ত, অন্যান্য দেশের মতো প্রাথমিকভাবে তুরস্কের প্রধান স্বার্থ হচ্ছে তাদের অর্থনীতি। তুরস্ক যদি লিবিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তা হলে ভবিষ্যতে হয়তো দেশটির লাভজনক গ্যাস ও তেলের কন্ট্রাক্টের প্রস্তাব পেতে পারে। আঙ্কারার সাফল্য হলোÑ লিবিয়া পার্লামেন্টের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় লিবিয়ায় তুর্কি সেনা মোতায়েন। এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তুরস্কের নীতিনির্ধারকরা লিবিয়ার ব্যাপারে কত সিরিয়াস তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

২০১৫ সালে ওই অঞ্চল থেকে আমেরিকা সরে যাওয়ার পর থেকে রাশিয়া সেখান প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। লিবিয়া হচ্ছে অপর একটি রণক্ষেত্র সেখানে রাশিয়া তার আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তৃত করতে পারে। লিবিয়া অথবা সিরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির প্রভাবাধীনে ছেড়ে দিয়ে মস্কো ওই এলাকা ত্যাগ করতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ডের বক্তব্য অনুসারে, সম্প্রতি লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার এক ডজনেরও বেশি যুদ্ধবিমান অবতরণ করেছে। কয়েকজন পর্যবেক্ষক রাশিয়ার যুদ্ধবিমান মোতায়েন করার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আলোচনায় বসার আগে মস্কো তার হাতকে শক্তিশালী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
লিবিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আঙ্কারা ও মস্কোর মধ্যে লিবিয়ার ব্যাপারে ব্যাপক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বে¡ও একটি রাজনেতিক সমঝোতায় আসার উদ্যোগ নেয়া ছাড়া মনে হয়, আর কোনো উপায় নেই। লিবিয়ায় একটি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে রাশিয়া ও তুরস্কের কেবল এটাই প্রথম উদ্যোগ নয়। আর উভয় দেশ এবারই প্রথম এ ব্যাপারে অসম্মতি জানায়নি।

তেল সম্পদে সমৃদ্ধ উত্তর আফ্রিকার ওই দেশটিতে দু’দেশের প্রভাব বা আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থ নিয়ে আসতানার মতো একটি ফর্মুলা, একটি অপশন হতে পারে। এ ধরনের একটি ফর্মুলাই কেবল ভবিষ্যতে উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারে। উভয় দেশ লিবিয়া দেশটির কেবল পরস্পর বিরোধী পক্ষকেই নয়, বরং ইউরোপীয় এবং আরবের অন্যান্য দেশগুলোকেও আলোচনার টেবিল নিয়ে আসতে পারে। তাহলে হয়তো লিবিয়ার নাটকীয় দৃশ্যপট তুরস্ক ও রাশিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি কঠিন পরীক্ষা বলে গণ্য হবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us