রাশিয়ায় তোলপাড়, টিকার ঘোষণার পরই পদত্যাগ চিকিৎসকের

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Aug 14, 2020 08:13 pm
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন - ছবি : সংগৃহীত

 

রাশিয়ার ঘোষণার পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়ে দিয়েছে, ওই টিকা তাদের তালিকাতেই ছিল না। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ না করেই করোনার টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বের বিজ্ঞানীমহল। এ বার সেই রুশ করোনা টিকা স্পুটনিক-ভি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল দেশটির অভ্যন্তরেই। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এথিকস কাউন্সিল থেকে ইস্তফা দিলেন চিকিৎসক আলেকজান্ডার চুচালিন। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যনীতি না মেনেই টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন চুচালিন।

রাশিয়ায় চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নীতি নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে এথিকস কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ছিলেন চুচালিন। রাশিয়ার চিকিৎসক মহল সূত্রে খবর, তৃতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না করেই টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা করার পক্ষপাতী ছিলেন না চুচালিন। তিনি আটকানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু তার কথায় সরকার কর্ণপাত না করে টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা করে দেয়। তার জেরেই তিনি ইস্তফা দিলেন বলে মনে করছেন রাশিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু শুধু পদত্যাগ করেই ক্ষান্ত হননি বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট আলেকজান্ডার চুচালিন। স্পুটনিক-ভি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা অন্যতম শীর্ষ দুই চিকিৎসকের নাম করেই তীব্র আক্রমণ করেছেন। এই টিকা তৈরি করেছে মস্কোর গামালেয়া রিসার্চ সেন্টার। এই সংস্থার ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ এবং দেশের ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের অন্যতম সের্গেই বরিসেভিচের নাম করে চুচালিন বলেছেন, এই দুই চিকিৎসক টিকা তৈরিতে তাড়াহুড়ে করতে গিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেননি।

টিকা আবিষ্কারের গোটা প্রক্রিয়ায় যে একাধিক গলদ রয়েছে, ইস্তফার পর সে কথাও খোলাখুলিই বলেছেন চিকিৎসক চুচালিন। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’-এ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘‘রুশ সরকারের সব নিয়ম-নীতি কি আপনারা মেনেছেন? আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সমাজের মতামত নিয়েছেন? নেননি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা ঠিক ভাবে করা হয়নি। নৈতিক ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নীতি ভঙ্গ করা হয়েছে।’’ রাশিয়ার এই টিকা নেয়া নিরাপদ কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজ্ঞানী মহল। সেই প্রসঙ্গে চিকিৎসক চুচালিন বলেন, ‘‘আমাদের কিছু বিজ্ঞানী যে অবস্থান নিয়েছেন এবং যে ভাবে এই রেডিমেড টিকা নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো মন্তব্য করছেন, তাতে আমি হতাশ।’’

যেকোনো টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল হিউম্যান ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। এই ধাপে কয়েক হাজার মানুষের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়। ফলে বিভিন্ন বয়স, শারীরিক ও চারিত্রিক গঠনসম্পন্ন মানুষের উপর প্রয়োগ করা টিকার ফলাফল পাওয়া যায়। টিকার কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না, তাও এই স্তরেই জানা যায়। পাশাপাশি এই স্তরেই প্রথমবারের জন্য ১৮ বছরের কম বয়সী থেকে শুরু করে শিশু এবং প্রবীণদের অর্থাৎ ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষজনকে এই টিকা দেয়া হয়। তার আগে পর্যন্ত এই শিশু ও প্রবীণদের উপর টিকার ফলাফল জানার উপায় থাকে না।

কিন্তু রাশিয়ার তৈরি টিকার এই তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরুই হয়নি। তার আগেই টিকা তৈরি বলে ঘোষণা করে দিয়েছে সরকার। তাই বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, এখনই শিশু ও প্রবীণদের উপর এই টিকা প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন না রুশ চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরাই। আবার আন্তর্জাতিক প্রথা অনুযায়ী কোনও টিকা আবিষ্কারের প্রতিটি ধাপের ফলাফল বিশ্বের বিজ্ঞানী মহল ও সাধারণ মানুষ যাতে জানতে পারেন, তার জন্য কোনো মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু স্পুটনিক-ভি-র ক্ষেত্রে সেই সব ফলাফল জনসমক্ষেই আনা হয়নি। ফলে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একাংশ আবার রাশিয়ার এই টিকার বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন। তাদের বক্তব্য, এতে করোনা আক্রান্তের পরিস্থিতি আরও জটিল ও গুরুতর হতে পারে। রাশিয়ার ভেক্টর ইনস্টিটিউটের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের সাবেক প্রধান ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট আলেকজান্ডার চেপুরনভ বলেন, ‘‘ভুল টিকা দিলে কিছু রোগ আরও বেড়ে যেতে পারে। কোভিড-১৯-সহ অন্যান্য কিছু রোগের ক্ষেত্রে জানা গিয়েছে যে, কিছু অ্যান্টিবডির উপস্থিতিতে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে। ফলে স্পুটনিক ভি কী ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করছে, সেটা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us