সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ভালো?

সুপ্রিয় নায়েক | Aug 20, 2020 09:45 am
সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ভালো?

সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু ভালো? - ছবি : সংগৃহীত

 

যেকোনো উন্নত দেশে সাইকেলের জন্য পৃথক রাস্তা থাকে। সেখানে গাড়ি-ঘোড়া দূর অস্ত, সাধারণ পথচারী উঠলেও জরিমানা দিতে হয়। বহু মানুষ দু’চাকার যানটিকেই একমাত্র বিশ্বস্ত বাহন করে তুলেছে। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক লাভই হয়েছে। প্রশ্ন হলো কী কী লাভ?

শারীরিক লাভ
• ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি : সাইকেল চালালে ফুসফুসে বেশি পরিমাণে বাতাস প্রবেশের দরকার পড়ে। কারণ সাইকেল চালানোর জন্য বেশি মাত্রায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। তাই নিয়মিত সাইকেল চালালে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। অনেকের প্রশ্ন, চারদিকে যা দূষণ, খোলা বাতাসে সাইকেল চালানো কি উচিত? লন্ডনের কিংস কলেজের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বায়ু দূষণের প্রভাব খুব কমই পড়ে সাইকেল আরোহীর ফুসফুসে।

• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : নিয়মিত সাইকেল চালালে ডায়েটে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার দরকার পড়ে। প্রোটিনজাতীয় খাদ্যগ্রহণ বাড়াতে হয়। শাকসব্জি বেশি খেতে হয়। সঠিক খাদ্যগ্রহণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। তাছাড়া রক্তে কিছু অলস শ্বেত কণিকা থাকে। সাইক্লিং-এ সেগুলো উজ্জীবিত হয়েও ইমিউনিটি বাড়ায়।

• শক্তিশালী হার্ট : প্রতিদিন আধ থেকে এক ঘণ্টা সাইকেল চালালে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা বাড়ে ও হার্টের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।

• স্ট্রোক প্রতিরোধ : নিয়মিত সাইকেল চালালে ব্রেনের বিভিন্ন রক্তবাহী নালীতেও রক্তসঞ্চালনের হার বাড়ে। স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে।

• ভুলে যাওয়া রোগ : অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিনাশকারী রোগের আশঙ্কাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

• ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ : সাইকেল চালালে গ্লুকোজ মেটাবলিজমের প্রভূত উন্নতি হয়। এভাবে সুগার আটকানোও সম্ভব। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাও সাইকেল চালিয়ে সহজে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

• আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন : একটু বেশি গতিবেগে ঘণ্টাখানেক সাইকেল চালালে প্রতিদিন প্রায় চার শ' থেকে এক হাজার ক্যালরি এনার্জি পোড়ানো সম্ভব! মাত্র কয়েক দিনেই পেতে পারেন ছিপছিপে শরীর।

• ওজন বাড়াতে : ওজন কম ও খুব রোগা হলেও সাইকেল চালিয়ে লাভ পেতে পারেন। এর সঙ্গে খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আনুন। সকালে ব্রেকফাস্ট করে অফিস গেলে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে একবার ভারী টিফিন করুন। কারণ, ওজন কম থাকলে, সাইকেল চালানোর শক্তি পাবেন না। তাই সাইক্লিং-এর পর বাড়তি খাবার খাওয়া দরকার। এইভাবে সঠিক ডায়েট এবং সাইক্লিং-এর মেলবন্ধনে খুব রোগা মানুষও সুগঠিত শরীর পেতে পারেন।

• বয়স ধরে রাখতে : সাইকেল চালানো এক ধরনের এক্সারসাইজও বটে। এতে ঘামের সঙ্গে নানা ক্ষতিকারক পদার্থ শরীর থেকে বেরয়। রোগবালাই কম হয়। জরা ও বলিরেখার সমস্যা দ্রুত আসে না। বয়স কম দেখায়।

মানসিক লাভ
• মনখারাপ ও অবসাদ : নিয়মিত সাইকেল চালালে অবসাদ দূর করা সম্ভব। দেখা গেছে, লকডাউনের বিপর্যয়েও যারা সাইকেল চালিয়ে অফিস গিয়েছেন, তাদের দুশ্চিন্তা, অবসাদ কম হয়েছে।

• আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ বাড়ায় : সাইকেল চালাতে রাস্তার উপর নজর রাখতে হয় একটানা। মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

• অনিদ্রার সমস্যায় : জড়ভরত হলে রাতে যে ঘুম আসে না, তা নিশ্চয় অনেকে লকডাউনে টের পেয়েছেন। অথচ প্রতিদিন মাত্র ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সাইকেল চালালেই ফিটনেস ফিরে আসে। অনিদ্রার সমস্যাও দূর করা যায়।

সতর্কতা
• জন্মগত হার্টের সমস্যা : হাইপারট্রপিক অবস্ট্রাকটিভ কার্ডিওমায়োপ্যাথি (এইচওসিএম) নামক হার্টের জন্মগত অসুখ চট করে ধরা পড়ে না। তবে ভারী এক্সারসাইজ করার সময় রোগীর খুব শ্বাসকষ্ট, হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন জনিত সমস্যা দেখা দিলে তা এইচওসিএম-এর সমস্যার লক্ষণকে নির্দেশ করে। তাই সাইকেল চালাতে গিয়ে শারীরিক সমস্যা হচ্ছে মনে হলে ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং ইসিজি করিয়ে হার্টের সমস্যা আছে কি না তা জেনে নিন।

• হার্টের অসুখ : মৃদু বা মাঝারি ধরনের হার্টের সমস্যায় ভোগা রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাইকেল চালাতে পারেন।

 অ্যাজমা ও সিওপিডি : অ্যাজমা ও সিওপিডি-এর প্রাথমিক ও মাঝারি পর্যায়ে সাইকেল চালানো যায়। তাতে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। তবে জটিল অবস্থায় চালানোর প্রশ্নই ওঠে না।

 কিডনির অসুখ : কিডনির অসুখের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাইকেল চালানো যায়।

 হাঁটুর বাতে: কারো মতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস থাকলে নি-জয়েন্টে থাকা কার্টিলেজের ক্ষয় হয়। কেউ বলেন উপকার হয়। সেক্ষেত্রে অস্টিওআর্থ্রাইটিস থাকলে গিয়ার দেয়া সাইকেল চালানো যেতে পারে। এতে হাঁটুতে চাপ কম পড়ে। তাছাড়া তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কার্টিলেজের ক্ষয় রোধকারী কিছু ওষুধ খেতে পারেন।

সাইকেল চালানোর অবশ্য প্রয়োজনীয় শর্ত

• যেকোনো বয়সে চালানো যেতে পারে। ফিট থাকলে আশি বছর বয়সের পরেও চালানো যায়।
• স্বাভাবিক গতিতে সাইকেল চালানোর সময় ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরুন।
• দীর্ঘসময় রোদে সাইকেল চালাতে হলে এক বোতল পানিতে এক প্যাকেট ওআরএস গুলে সঙ্গে রাখুন। শ্রান্ত বোধ করলে পান করুন।
• ধূমপানের অভ্যেস থাকলে এখনই ছাড়ুন।
• সাইক্লিং-এর সময় মোবাইলে কথা বলবেন না।

শেষ কথা
বায়ু দূষণ কমাতে পারে সাইকেল। কমাতে পরে গ্রিন হাউজ এফেক্ট। পেট্রোল-ডিজেল চালিত নানা পরিবহণে যেসব মানুষ কাজে যান, তাদের ৩০ শতাংশও পরিবহণের জন্য সাইকেল ব্যবহার করলে হু হু করে বায়ুদূষণ কমবে!

সূত্র : র্ব্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us