দিল্লির প্রতি আনুগত্যের ফল : প্রতারণার শিকার কাশ্মিরের ভারতপন্থী রাজনীতিবিদরা 

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Sep 18, 2020 10:07 am
মুফতি মেহবুবা

মুফতি মেহবুবা - ছবি : সংগৃহীত

 

সকিনা ইতো একসময় বিশ্বাস করতেন, ভারতের সাথে থাকাই কাশ্মিরিদের জন্য সবদিক দিয়ে ভালো। কিন্তু গত বছরের আগস্টে নয়াদিল্লি জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর সেই বিশ্বাস উঠে গেছে তার। ৪৮ বছর বয়সী ভারতপন্থী এ রাজনীতিবিদ আল জাজিরাকে বলেন, আমরা জানি না মানুষের কাছে আবার কীভাবে যাবো। আমাদের নিজেদের কাছেই কোনো জবাব নেই, তাহলে তাদের কী বলব। ইতোর বাবাও ছিলেন ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ। ১৯৯৬ সালে গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারান তিনি। এরপরই রাজনীতিতে যোগ দেন সকিনা ইতো। হয়েছিলেন আঞ্চলিক সরকারের অর্থমন্ত্রীও। কিন্তু নয়া দিল্লির ভক্ত হওয়ায় বেশ কয়েকবার গেরিলাদের হামলার শিকার হতে হয়েছে তাকে। গত এপ্রিলেও তার বাড়িতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

নয়া দিল্লির প্রতি আনুগত্যের ফল

ইতোর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স উপত্যকা অঞ্চলের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। কাশ্মিরের স্বাধীনতার বদলে তারা বরাবরই নয়া দিল্লির প্রতি অনুগত ছিল। এরপরও গত বছর ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সময় দলটির প্রধান শক্তি আব্দুল্লাহ পরিবারকে জেলে যেতে হয়। সেই থেকে ন্যাশনাল কনফারেন্সসহ অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর গায়ে যে দাগ লেগেছে, তাতে কাশ্মিরের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ভারতপন্থী অনুসারীদের। ইতো বলেন, আমরা সবসময় মানুষকে অনুপ্রাণিত করতাম ও বলতাম, ভারতই আমাদের দেশ আর এটাই সবার জন্য ভালো। কিন্তু তরুণরা এখন আর সেই কথা শুনতে রাজি নয়। নয়া দিল্লি মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় ভারতপন্থী রাজনীতিবিদরা এখন অনেকটাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন, বিদ্রোহীদের ভয়ে জনসম্মুখেও খুব একটা আসছেন না। সাবেক অর্থমন্ত্রী ইতো বলেন, আগে বিদ্রোহী যোদ্ধারা আক্রমণ করত, তবে আমরা সরকারের সাহায্য পেতাম। এখন এ দুইয়ের মধ্যে আটকে গেছি। কাশ্মির অঞ্চলের সবশেষ দুই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) থেকে। দলটির শীর্ষনেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এখনো বন্দী।

গত বছরের আগস্টে পিডিপির শত শত নেতাদের সাথে জেলে যেতে হয়েছিল তরুণ নেতা ওয়াহিদ পারাকে। তিনি বলেন, কাশ্মির ৫ আগস্টের আগেও সমস্যা ছিল, এখনো আছে। আমাদের দুঃখ ও আফসোস যে, জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রতি করেছিলাম, সেগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ৩০ বছর বয়সী এ নেতা বলেন, আমরা কাশ্মিরি যুবকদের সাংবিধানিক অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, (ভারতীয়) সংবিধানের মধ্যে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজ এগুলো শুধু জনগণ বা বিদ্রোহীদের মাধ্যমেই নয়, সরকারের দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, আজ আমরা নিজ বাড়িতেই ঘরের বাইরে যেতে পারি না। অথচ আমরাই সেই লোক যারা গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম।

প্রতারণা করেছে নয়া দিল্লি?

গত তিন দশক ধরে ভারতপন্থী রাজনীতিবিদরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পাওয়ার শর্তে নয়া দিল্লির প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন তারা। প্রবীণ রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ ইউসুফ তারিগামি ১৯৯৬ সাল থেকে দক্ষিণ কাশ্মিরের কুলগাম আসনের সব ক’টি নির্বাচনেই জিতেছেন। তিনি বলেন, বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চলে স্বাধীনতাকামীদের সাথে ভারতপন্থী রাজনীতিবিদদের যে রেখাটি আলাদা করে রেখেছিল, সেটি মুছে দিয়েছে নয়া দিল্লি। এখন আমরা সবাই একই রেখায়। কোনো বিভাজন নেই। এখন সবাই একই জেলে রয়েছি, সেটা সন্ত্রাসী হোক বা স্বাধীনতাকামী বা মূলধারার।’

আলজাজিরার বিশ্লেষণ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us