যেসব কারণে চীন সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার মেনে নিলেন মোদি

গৌতম দাস | Sep 19, 2020 05:06 pm
মোদি

মোদি - ছবি সংগৃহীত

 

প্রধান কারণ নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই সব ভারতীয় সেনা মোদিকে ফেরত আনতেই হবে। কারণ ভারতের অর্থনীতি এমন, তাদের সেখানে ঠাণ্ডার কালে গরম ঘরে রাখার মতো খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই। এটা কয়েক সপ্তাহ আগে সাবেক এক পররাষ্ট্র সচিব ও উপদেষ্টাকে দিয়ে মোদি প্রকাশ করিয়েছিলেন। ফলে এমনিতেই তাকে সেনা প্রত্যাহার করতেই হতো।

এ ছাড়া অন্য কারণ হলো, মোদি আমেরিকার ওপর আস্থা রাখেন না যদিও মনের কোণে একটা স্বপ্ন দেখার মতো খায়েসের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বাস্তবত হুঁশের-মোদি বুঝেন, সেটা সত্যি নয়। মোদি আসলে অসহায়। চীনের কাছে ভালো মানুষের পরীক্ষা দেয়া ছাড়া তার হাতে কিছুই নেই। খুব সম্ভবত তিনি অনুভব করেন যে, আমেরিকার ওপর আস্থা রাখা মানে নিজের পছন্দের হিন্দুত্বের রাজনীতি কখনো ভারতীয় জনগণের হাতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আগেই আমেরিকার হুকুমে ত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য আমেরিকান ব্যবসায়ীদের আধিপত্যে খুলে দিতে হবে তাকে- এভাবেই তথাকথিত ‘ওপেন মার্কেট’ করে সংস্কার করতে হবে ভারতের অর্থনীতি ও বাজার। এগুলো মোদির জন্য ‘আরো বড় আত্মহত্যা’। মোদির ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবসায়ী। মানে গুজরাটি বেনিয়া। মোদি শব্দের অর্থও তাই। কাজেই আমেরিকার এসব আবদারের অর্থ তার না বোঝার কিছু নেই। সম্ভবত সে জন্য তিনি আমেরিকার কাছে যেতে পারছেন না।

কিন্তু আরো দুটা কথা আছে। চীনের সাথে করা পাঁচ দফা ঐকমত্য নিয়ে তিনি পাবলিকের সামনে কী বলবেন?
সেজন্যই জয়শঙ্করকে দিয়ে করা আরেকটা ভাষ্য আছে। যেমন আনন্দবাজারের ১১ সেপ্টেম্বরের শিরোনাম : ‘মস্কোয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। আগে সেনা সরাক চিন : জয়শঙ্কর’। অর্থাৎ এখানে ভারত বিরাট শক্তি, এমন দাবি করা হচ্ছে উগ্র জাতিবাদী ঢংয়ে। এ ছাড়া, আগে চীন কী করে দেখি, এরপর ইচ্ছা হলে ভারত করবে। মোদির ভারত এমনই শক্তিশালী! এটা কী করে হয়ে গেল?

না, খুব সহজ। যৌথ ঘোষণাটাকে অগুরুত্বপূর্ণ করে পেছনে ফেলে রাখতে জয়শঙ্কর তাই এর পরেও আরেকটা ভাষ্য তৈরি করে সে ভিত্তিতে বিদেশ মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটা বিবৃতি দিয়েছেন ঠিক যেমনটা মিডিয়া শুনতে চায়, পাবলিককেও শুনাতে চায়, সেভাবে।

কিন্তু এর পরেও কথা আছে। সবাই আম-পাবলিক নয়। কেউ কেউ ‘বিশেষ’। কারা এরা? যেমন সাবেক জেনারেল অশোক মেহতা। তিনি নিজের লেখার শিরোনাম দিয়েছেন,‘যৌথ-বিবৃতিতে কী নেই আমাদের সেদিকে তাকানো উচিত।’ তিনি বলতে চাইছেন যেমন ‘এলএসি’ শব্দটা বিবৃতিতে নেই। এ ছাড়া আরো বড় জায়গার গ্যাপ তিনি ধরেছেন। সীমান্তে ‘আগে যে যেখানে ছিল সেখানে ফেরত যাবে’ এমন শব্দগুলো সব সময় থাকত কিন্তু এবার তা কোথাও নেই। এছাড়া এখন ‘এলএসি’ শব্দটার বদলে লেখা হয়েছে ‘বর্ডার এরিয়া’। এছাড়া তিনি বেইজিংয়ের গ্লোবাল টাইমসের একটা টুইটের ছবি তুলে এনে দেখাচ্ছেন। যেখানে লেখা আছে, ‘ভারত শান্তি চাইলে ভারতকে ১৯৫৯ সালের ৭ নভেম্বরের এলএসি মেনে নিতে হবে। আর যুদ্ধ চাইলে চীন যুদ্ধ করবে। দেখা যাক কোন দেশ শেষে টেকে।’

বলাই বাহুল্য, জেনারেলদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে এসব লেখায় বাধা দিলে বাহিনীতে প্রভাব পড়বে। এর চেয়ে উপেক্ষাই মোদির জন্য একমাত্র কৌশল। একই রকম প্রশ্ন তোলা আরো লেখকের লেখা আছে। যেমন প্রবীণ সোয়েনি শিরোনাম দিয়ে লিখছেন, ‘যৌথ বিবৃতি থেকেই বুঝা যাচ্ছে ভারত কী হারিয়েছে।’

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

goutamdas1958@hotmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us