আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-পাকিস্তান-ভারতের লাভ-ক্ষতি

আব্দুল শাকুর শাহ | Oct 26, 2020 07:37 pm
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-পাকিস্তান-ভারতের লাভ-ক্ষতি

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-পাকিস্তান-ভারতের লাভ-ক্ষতি - ছবি : সংগৃহীত

 

৯/১১ ও আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নিলে নিঃসন্দেহে সেটারও একটা প্রভাব এখানে পড়বে। আফগানিস্তান আর প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়বে। প্রতিবেশী দেশগুলো মার্কিন-তালেবান যুদ্ধের সময়টাতে নিজেদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ সংহত করার চেষ্টা করলেও কিছু প্রতিকূল শক্তির কারণে তারা কিছু করতে পারেনি। এই অঞ্চলে জড়িত প্রধান শক্তিগুলো হলো রাশিয়া, চীন, ইরান, ভারত, সৌদি আরব আর পাকিস্তান। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর মার্কিন-পাক সম্পর্কটা মূলত লেনদেনের হয়ে উঠবে।

পাকিস্তানের জন্য তাৎপর্য

চীনকে মোকাবেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে জোট করেছে এবং সে কারণে পাকিস্তানে মার্কিন স্বার্থ বদলে গেলে আফগানিস্তানের উপর তারা কর্তৃত্ব হারাবে। পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে আফগান সমস্যার সমাধান সম্ভব হলে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই করতো।

আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানো এবং এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার মধ্যেই সীমিত। প্রথম দিন থেকেই এটা স্পষ্ট ছিল যুক্তরাষ্ট্র এখানে থাকতে আসেনি, এখানে তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে উসকানি দিলে এশিয়ার পরিস্থিতি সেখানে আরো খারাপ হবে।

যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, কারণ এখানে এই মুহূর্তে তাদের জন্য কোনো হুমকি নেই। যুক্তরাষ্ট্র চীনের মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়ার চেষ্টা করছে শুধু। একদিকে ভারতকে দিয়ে, অন্যদিকে তাইওয়ানকে অস্ত্র দেয়ার ঘোষণা দিয়ে এটা করছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশল হতে একাধিক ফ্রন্টে চীনকে ব্যস্ত রাখা। চীন-ভারত সীমান্তে ছোটখাটো সঙ্ঘাতের মধ্য দিয়ে সেটা শুরু হতে পারে। সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা চলছে অর্থনৈতিক আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। কাশ্মীরের বিষয়টি বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই একইরকম থাকবে। বহু দূরের মিত্রের সাথে যোগাযোগের চেয়ে প্রতিবেশীর সাথে হাত মেলানোটা তাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়বে

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার পর কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এশিয়ার দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশ ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে ভারত যেটার সূচনা করেছে। এখানে মধ্যস্থতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটার আসল উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে তালেবানদের সাথে আলোচনার বিষয়টি আরও মসৃণ করা। তাছাড়া সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার জন্য ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এই অঞ্চলে রিজার্ভয়ের নির্মাণ করছে। সে কারণে আগামীতে পানির বিষয়টি ভারত-পাকিস্তান বিবাদের নতুন ইস্যু হয়ে উঠবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার কারণে ইমরান খান আর মোদির কেউই সমঝোতার দিকে যেতে উৎসাহ পাবেন না। আফগানিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে পাকিস্তানে নিরাপত্তা ইস্যুটিও আরও জোরালো হয়ে উঠবে।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তান এরই মধ্যে উচ্চমূল্য দিয়েছে। প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের উপর আরও বোঝা চাপিয়েছে। পাকিস্তান যাতে ‘আরও পদক্ষেপ’ নেয়, সেজন্য চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেগুলো আসলে তাদের নিজেদের স্বার্থ, পাকিস্তানের নয়। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা অর্জন নিয়ে ফিরছে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এফএটিএফে তাদের প্রভাব ব্যবহার করেছে। আইএমএফ-এর ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও সেটা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের সরে যাওয়ার পর পাক-মার্কিন সম্পর্ক ভিন্ন দিকে মোড় নেবে, যেটার উদাহরণ আগে আমরা দেখেছি।

এগিয়ে যাওয়ার পথ

দক্ষিণ এশিয়ায় এখন একটি নতুন ব্লক গড়ে তোলার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে, যারা অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে এগিয়ে যাবে, যেমন পাকিস্তান, চীন ও ইরান মিলে এই ব্লক গড়তে পারে। ভারত এই ব্লকের অংশ হবে না, কারণ প্রতিবেশীদের ব্যাপারে শত্রুতামূলক নীতি গ্রহণ করেছে তারা। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান গঠনের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। এতে এ অঞ্চলের নিরাপত্তার শঙ্কাগুলো দূর হবে। আফগানিস্তানে অভ্যন্তরীন এবং বাইরের সাথে যে সব ধর্মীয় সংযোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার পর সেগুলিও বদলে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে ভারত-চীনের সঙ্ঘাত কমে আসবে। ভারত মনে হয় এই প্রবাদ বাক্যটি জানে না যে, “রোমে বাস করে পোপের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা বোকামি”। যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পর এই অঞ্চলে নতুন ভূরাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও কৌশলগত জোটের সৃষ্টি হবে।


সূত্র : গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us