যে সাত শ্রেণীর লোককে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন আল্লাহ

ফাতিমা আজিজা | Dec 12, 2020 05:00 pm
যে সাত শ্রেণীর লোককে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন আল্লাহ

যে সাত শ্রেণীর লোককে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন আল্লাহ - ছবি সংগৃহীত

 

আধুনিকতার নামে গা ভাসিয়ে দেয়া কখনো কোনো মুসলিম যুবক-যুবতীর কাজ হতে পারে না। মুসলমান তাকেই বলা যায়, যার ঈমান বিদ্যমান থাকে। কিন্তু যদি ঈমান হারিয়ে যাওয়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তখন আর মুসলমান বলা যায় না। ঈমান হারানোর এই ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে জাহান্নামের আজাব। একটি দেশ ও যুগের সম্পদ হচ্ছে যুবসমাজ। আর এই যুবকদের নৈতিক অধঃপতন ঘটে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং সমাজ কাঠামো ভাঙনের কারণে। আর তাই নৈতিক পতনের মূল হারাম প্রেম বা সম্পর্ক। আল্লাহ সরাসরি কুরআনে হারাম সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আর জিনার ধারে-কাছেও যেও না, নিশ্চই তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা বনি-ইসরাইল : ৩২)

উপরের এ হুকুম ব্যক্তির জন্য এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমাজের জন্যও। এখানে ব্যভিচার হারাম হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে- প্রথমত, এটি একটি অশ্লীল কাজ। মানুষের মধ্যে লজ্জা না থাকলে মনুষ্যত্ব হারায়। দ্বিতীয়ত, সামাজিক অনাসৃষ্টি।

আধুনিক সমাজ হোক কিংবা জাহেলিয়াতের যুগ, সর্ব যুগের জন্যই দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরে প্রেম-ভালোবাসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এক কুরাইশ যুবক ব্যভিচারের অনুমতি প্রার্থনা করে। প্রিয় নবীর সামনে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম রেগে ওঠে সে যুবককে শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাসূল সা:-এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি শান্তচিত্তে যুবকটিকে তার একেবারে কাছে আসতে বললেন। অতঃপর কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা মেনে নেবে?’ যুবক জবাব দিলো, না। তখন রাসূল সা: বললেন, ‘লোকেরাও এটা তাদের জন্য অনুমোদন করবে না।’ অতঃপর তিনি আবার যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা সে তার কন্যা, বোন ও চাচীর জন্য অনুমোদন করবে কি না? এবারো যুবক জবাব দিলো, না। রাসূল সা: এবারো বললেন, ‘(অন্য) লোকেরাও এটা তাদের জন্য অনুমোদন করবে না।’ অতঃপর তিনি যুবকটির হাত ধরে বললেন, ‘আল্লাহ তার পাপ মাফ করে দিন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং তাকে সহিষ্ণু করুন।’ (মুসনাদে আহমদ, তাবরানি)

যুবকরা তাদের সোনালি সময় কখনোই অহেতুক কাজে নষ্ট করতে পারে না। আর নিষিদ্ধ প্রেম বা হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার পরিণতি ভয়াবহ যা তাদের সোনালি সময় নিমেষেই নিঃশেষ করে দিতে পারে। রাসূল সা: বলেছেন ব্যভিচারের ছয়টি খারাপ পরিণতি রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি দুনিয়ায়-চেহারার সৌন্দর্য লোপ পাওয়া, আয়ু কমতে থাকা, চিরকাল দরিদ্রতায় থাকা। আর পরকালের পরিণতি- আল্লাহর ক্রোধের কারণ হবে, কঠোর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে, সর্বশেষ জাহান্নামি হবে। (কিতাবুল কাবায়ের) এমন ভয়াবহ পরিণতির কথা চিন্তা করলে অবশ্যই সমাজ ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকবে।

যুবকদের জন্য রয়েছে অগণিত পুরস্কারের ঘোষণা। রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ সাত শ্রেণীর লোককে কেয়ামতের দিন তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। যে দিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক; ২. যে যুবক আল্লাহর ‘ইবাদতে রত থাকে; ৩. যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে; ৪. এমন দুই ব্যক্তি যারা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য কেবল পরস্পরে ভালোবাসায় মিলিত অথবা পৃথক হয়; ৫. ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো সুন্দরী উচ্চ বংশীয় ভদ্র মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের দিকে আকৃষ্ট করে আর সে বলে, আমি আল্লাহর ‘আজাবকে ভয় করি; ৬. যে ব্যক্তি গোপনে সাদাকাহ করে। এমন কি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী খরচ করছে; ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর স্মরণকালে তার দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। (সহিহুল বুখারি হা/৬২০)

উপরের সাত শ্রেণীর লোকের মধ্যে দুই শ্রেণীই যুবক- প্রথমত, যারা যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করে আর দ্বিতীয়ত, যারা কোনো সুন্দরী নারীকে ব্যভিচারে বা হারাম প্রেমের দিকে ডাকলে ফিরিয়ে দেয়। যখন যুবককে ডাকা হবে তখন সেই যুবক বলবে- ‘ইন্নি আখাফুল্লাহ’- ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’- আমি পরকীয়ায় যেতে পারি না। শুধু আল্লাহকে ভয় করেই যে যুবক নিষিদ্ধ প্রেম এড়িয়ে যেতে পারবে সেই সে যুবক যে কি না শত শত জাহান্নামির ভিড়ে কঠিন বিচারের দিনেও সুশীতল ছায়ায় স্থান পাবে। পরবর্তী আরো অন্য শ্রেণীতে আছে যারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে আবার ঘৃণাও করে। তারা বলে ‘উহিব্বুকা ফিল্লাহ’- ‘আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। তবে মনে রাখতে হবে, ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক বিয়ের মাধ্যমে হালাল হয়। বিয়ের আগের সম্পর্ক কোনোভাবেই আল্লাহর জন্য হতে পারে না।

ঈমান হারানোর তীব্রতা এই একটি পথের পথিকদের অধৈর্যের ফসল। ‘বান্দা যখন হারাম প্রেমে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয় তখন তার কাছ থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং মাথার ওপর বৃক্ষ ছায়ার মতো অবস্থান করে। অতঃপর সে যখন ব্যভিচার থেকে বিরত হয় তখন আবার তার কাছে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি) রাসূল সা: বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা আছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা। (সহিহ বুখারি-৯) ঈমানের সবচেয়ে ছোট শাখাটি যদি লজ্জা হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে এই লজ্জাই পারে যুবক-যুবতীদের ঈমান রক্ষা করতে। যে যত লজ্জাশীল হবে এবং তার চোখের হিফাজত করবে সে তত পাপমুক্ত থাকবে।

লেখিকা : ইসলামী গবেষক

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us