মেরাজের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব

উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান | Mar 09, 2021 05:29 pm
কুব্বাতুল সাখরা

কুব্বাতুল সাখরা - ছবি সংগৃহীত

 

শবে মেরাজের দু’টি অংশ রয়েছে- ১.আল-ইসরা (জেরুসালেমে নৈশভ্রমণ) আর ২. মেরাজ (ঊর্ধ্বারোহণ)। ইসলামে মেরাজের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। কেননা, মেরাজের মাধ্যমে এ রাতেই ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের দ্বিতীয় ‘নামাজ’ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয়। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নবুওয়তি জিন্দেগিতে যেসব অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তার মধ্যে মেরাজের ঘটনা অন্যতম। যা পবিত্র কুরআনুল কারিম এবং মাশহুর, মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তা অস্বীকার করা কুফরি।

রজব বরকতময় একটি মাস যা আরবি চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়কে রাসূল সা: রমজানের প্রস্তুতি মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর অর্থ-সম্ভ্রান্ত, প্রাচুর্যময়, মহান। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম হলো রজব, বাকি তিনটি মাস হলো- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম।

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: বলেন, ‘কখন রজব মাস আসত তা আমরা নবীজীর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’ উম্মে সালমা রা: বলেন, ‘নবী করিম সা: রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে।’ কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবীজী রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন, রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।

রাসূল সা: বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজীর) মাস, রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)

বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে মেরাজ : বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতে পারেননি যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ভেদ করা সম্ভব। গতি বিজ্ঞান মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের সর্বশেষ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার আলোকে মেরাজের ঘটনাকে বিচার করলে এর সম্ভাব্যতা সহজেই আমাদের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠে। যেমন স্যার আইজাক নিউটনের সূত্র অনুসারে, ‘মাধ্যাকর্ষণ ডিঙ্গানো অসম্ভব’।

কিন্তু বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ডিঙ্গানো সম্ভব, এ সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানি Arther G Clark তার The exploration of space MÖ‡š’ e‡j‡Qb, ÔAs the distance from the earth lengthens in to the thousands of miles the reduction (of Gravity) becomes substantial twelve thousand miles up, an one–pound weight would weight only an one ounce. It follows, therefore, that further away one goes from the Earth. The easier it is to go onwards.’ (পৃথিবী থেকে দূরত্ব হাজার মাইল দূরে যাবার পর (মাধ্যাকর্ষণ) হ্রাস পেতে থাকে। বারো হাজার মাইল উপরে তা একেবারে কমে যায়, এক পাউন্ড ওজন তখন মাত্র এক আউন্সে পরিণত হয়। এরপরও এটি অব্যাহত থাকে। পৃথিবী থেকে আরো দূরে চলে যাওয়ার পর সামনে এগিয়ে যাওয়া আরো সহজ হয়।)

আকর্ষণ ক্ষমতা যখন মোটেই বোঝা যায় না সে অবস্থাকে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ বলা হয়। গতি বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুটতে পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। এ গতি মাত্রাকে তারা মুক্ত গতি (Escape velocity) নামে আখ্যায়িত করেছেন।

প্রথমত : বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থ এবং হাদিসের আলোকে আমরা জানি যে রাসূলুল্লাহ সা: ‘বোরাক’ নামক এক বাহনের ওপর বসে ঊর্ধ্বালোকে গমন করেছিলেন। আরবি শব্দ ‘বারকুন’ অর্থ বিদ্যুৎ, ‘বোরাক’ বলতে মূলত বিদ্যুৎ থেকে অধিক গতিসম্পন্ন বাহনকে বুঝায়। অতএব দেখা যাচ্ছে, মাধ্যাকর্ষণ যুক্তি দ্বারা মেরাজের সম্ভাবনাকে নিবারিত করা যাচ্ছে না। মহান আল্লাহর সৃষ্টি এই মহাবিশ্ব প্রকৃতপক্ষেই বিস্ময়কর এবং রহস্যপূর্ণ, এ রহস্য সমুদ্রের বিশালতা থেকেও গভীর, আল্লাহর সৃষ্টিতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে হেদায়াতের নিদর্শন।

বস্তুত সময় সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান ও ধারণা আপেক্ষিক। সময়ের প্রভাব সবার ওপর সমান নয় বলেই আইনস্টাইন বলেছেন, ‘There is no standard time, all time is local.’ দর্শকের গতির তারতম্যে বস্তু বা ঘটনার স্থান নির্ণয়ে তারতম্য ঘটে। আবার একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত দু’টি ঘটনা দর্শকের গতির তারতম্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে হয়। গতির মধ্যে সময় অস্বাভাবিকভাবে খাটো হয়ে যায়। সময় সম্বন্ধে আমাদের ধারণার এই আপেক্ষিকতা গতি সম্বন্ধীয় স্বতঃসিদ্ধের ওপর আপতিত হলে যে ফলাফল দাঁড়ায় তা হলো- স্থান ও কাল সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিটা একটা গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে আপতিত বলে মনে হতে পারে কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তা নয়। আলোক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে এটা আজ সবার জানা যে, আলোকরশ্মি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল অতিক্রম করে। আলোর গতির সাথে কোনো বস্তুর গতির সামঞ্জস্যের তারতম্যই ((Degree of Dispersion) সময়ের তারতম্য ঘটার অন্যতম কারণ।

দ্বিতীয়ত : উপরের বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে মেরাজের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ‘বোরাক’ আরোহী রাসূলুল্লাহ সা:-এর গতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে, সব ঘটনাই পৃথিবীর দর্শকের কাছে কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বলে মনে হলেও কালের প্রবাহে তা ছিল দীর্ঘ সময়।

আল্লাহ মানুষকে যে সামান্য জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন, সেই বিবেক বুদ্ধির ফল হচ্ছে বিজ্ঞান। ফসল যেমন নিত্যনতুন করে ফলে, বিজ্ঞানের তেমন নিত্যনতুন তত্ত্ব-তথ্য আপডেট হতে থাকে। তাফসিরে কুরতুবিতে মুজেজার পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ আছে। যার একটি হচ্ছে- ‘তা আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ’, আর আল্লাহর কুদরতের কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হতে পারে? মুজেজা শব্দের অর্থই হলো যা ‘সকল শক্তি সামর্থ্যকে পরাজিত করতে পারে’। মূলত মেরাজের ঘটনা আমাদের চিন্তা ও কল্পনাকে বিস্তৃত করে এবং মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ধারণাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ও উন্নত করে। মেরাজ সম্বন্ধে চিন্তা করলেও হৃদয় পবিত্র হয়, ঐতিহাসিক মেরাজ আমাদের লক্ষ্য ও গন্তব্যের সন্ধান দেয়, মূলত মেরাজ আল্লাহর সাথে মুমিনের সম্পর্ক গভীর করে তোলে।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের অন্তরকে দ্বীনী জ্ঞান আহরণে প্রশস্ত করে দিন, রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের সৌভাগ্য দিন এবং রাসূল সা:-এর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিপাটি করার তাওফিক দান করুন।

লেখিকা : শিক্ষার্থী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us