দেওয়ান আজরফ ছিলেন অনেক বড় চিন্তক ও দার্শনিক

সাঈদ চৌধুরী | Dec 25, 2021 02:32 pm
দেওয়ান আজরফ

দেওয়ান আজরফ - ছবি : সংগ্রহ

 

জাতীয় অধ্যাপক, বহু গ্রন্থপ্রণেতা, বিশিষ্টি শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ দর্শন শাস্ত্রের সাধক ছিলেন। ইসলাম, নন্দনতত্ত্ব, নীতিশাস্ত্র, যুক্তি, অধিবিদ্যা, সামাজিক দর্শন ও রাজনৈতিক দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের তার বিস্তর পড়াশোনা ছিল। জীবন ও জগৎ নিয়ে মৌল বিধানের আলোচক ছিলেন। মানব সমাজের প্রকৃত শান্তির পথ তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। নিপুণ সাহিত্যের ভাষায় সমকাল এবং চারপাশের মানুষ আর প্রকৃতি সম্পর্কেও বলে গেছেন।

দেওয়ান আজরফের সাথে তার জীবন ও দর্শন নিয়ে বহুবার একান্ত আলাপচারিতা ও তার লেখালেখি থেকে জানা গেছে, তিনি রাসূল সা:-এর অন্যতম সাহাবি হজরত আবুজর গিফারীর রা:-এর চিন্তার উত্তরাধিকারী ছিলেন। আবুজর আল-গিফারী আল-কিনানি, যিনি জুন্দুব ইবনে জুনাদাহ ইবনে সুফিয়ান নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি হলেন নবী মুহাম্মাদ সা:-এর সময়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে চতুর্থ বা পঞ্চম ব্যক্তি। তিনি অসীম সাহস, প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন।

দার্শনিক আজরফ স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর ও কাঠামোগত বক্তব্য প্রদানের চেষ্টা করেছেন। ফিজিকস, মেটাফিজিকস, লজিক, এথিকস, পলিটিকস, পোয়েটিকস, রেটোরিকস প্রভৃতি দিক নিয়ে জীবন জিজ্ঞাসার জবাব প্রদানের বা সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

‘স্টাডি অব গড’ বা সৃষ্টিকর্তার অধ্যয়ন ছিল তার গবেষণার মুখ্য বিষয়। এ নিয়ে বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কিন্দির দার্শনিক সৃষ্টিকর্ম ‘অনফার্স্ট ফিলসফি’ তার প্রাত্যহিক অধ্যয়নের বিষয় ছিল। সৃষ্টিকর্তাই সব পার্থিব অস্তিত্বের কারণ আর এই ভাবনার মধ্যেই পার্থিব সব দর্শন নিহিত বলেই তিনি বিশ্বাস করতেন।
কিন্দির আত্মাবিষয়ক চিন্তায় প্লেটোর প্রভাবও দেখা যায়। সেটি নিয়ে অবশ্য তার বিশ্লেষণ কিছুটা ভিন্ন ছিল। তার মতে, কোনো বিষয়ে সঠিক দার্শনিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে অবশ্যই ধর্ম তথা নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের আশ্রয় নিতে হবে।
ইসলামি বিশ্বকোষ ও মুসলিম তর্কশাস্ত্র রচনার জনক আলফারাবি ছিলেন দেওয়ান আজরফের কাছে বেশ প্রিয় দার্শনিক। ধর্মতত্ত্ব, অধিবিদ্যা, বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র ও সঙ্গীতে আলফারাবির ছিল অসামান্য জ্ঞান। সক্রেটিস, প্লেটো আর অ্যারিস্টটলদের দর্শন বিশ্লেষণের মাধ্যমে আলফারাবি মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

দার্শনিক, পণ্ডিত, ধর্মতত্ত্ববিদ ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ আবু হামিদ আল-গাজ্জালির আদলে দেওয়ান আজরফ সৃষ্টি রহস্যের সন্ধানে ব্রতী ছিলেন। দর্শন যাতে স্রষ্টার বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে ছিলেন সদাজাগ্রত ও সচেষ্ট।
আবুজর গিফারি থেকে শুরু করে আবু আলওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে রুশদ, আবু জায়েদ আবদুর রহমান বিন মুহাম্মদ বিন খালদুন আলহাদরামি, বিশ্বকবি আল্লামা ইকবাল, দোলনের সিপাহসালার আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদীসহ মুসলিম দার্শনিকদের সাথে ভাবনা ও চিন্তার সমন্বয় ছিল। ইতিহাসের পথ চলায় যেসব দার্শনিক জীবনকে নতুন করে বুঝতে সহায়তা করেছেন।

শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ মানুষের জ্ঞানের ক্ষমতা ও অক্ষমতা তুলে ধরে স্রষ্টা প্রদত্ত ও রাসূল প্রদর্শিত পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯০৬ সালের ২৫ অক্টোবর (১৩১৩ সনের ৯ কার্তিক) শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলার তেঘরিয়া গ্রামে নানা মরমি কবি হাসান রাজার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ৯৩ বছর বয়সে ১ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে তিনি মহান মাবুদের দরবারে চলে গেছেন।

দেওয়ান আজরফের পিতা দেওয়ান মোহাম্মদ আসফ দুহালিয়ার জমিদার এবং একজন জাতীয়তাবাদী জননেতা ছিলেন। মাতা রওশন হুসেইন বানু (হাসান রাজার জ্যেষ্ঠা কন্যা) একজন বিদূষী মহিলা ছিলেন।
১৯৫৮ সালে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ড. হাসান জামান, ফ্রাংকলিন পাবলিকেশনের পরিচালক (পরবর্তীকালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার) এ টি এম আবদুল মতিন, মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দীন খান প্রমুখ মিলে দারুল উলুম ইসলামিক অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার ভার গ্রহণ করে এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান অধ্যাপক আবুল হাশিমকে প্রথম পরিচালক নিয়োগ করেন। ইসলামিক অ্যাকাডেমি ঢাকা নামে অভিহিত এ প্রতিষ্ঠানটিই স্বাধীনতার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে রূপান্তরিত হয়।

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৪৯ সালে তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন থেকে আজীবন মজলিসের সুদিন-দুর্দিনে সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে বাংলা একাডেমির কাউন্সিলর এবং ১৯৬২ তে বাঙলা কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে বিজাতীয় সংস্কৃতিবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ অবদান এবং নজরুল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সিলেটে ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৩৬ সালে আল-ইসলাহ সম্পাদক মুহাম্মদ নূরুল হক ও অন্যান্যের ঐকান্তিক সহযোগিতায় তিনি এই সাহিত্য সংসদ গঠন করেন। দেওয়ান একলিমুর রেজা এবং মুহাম্মদ নূরুল হক যথাক্রমে সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন। দেওয়ান আজরফ ১৯৪০-৪৩ সালে সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

সমাজচিন্তাবিদ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ রাজনৈতিক জীবনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমর্থক ছিলেন। আসামে মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে গ্রেফতার হয়ে শিলচরে ১০ মাস কারাভোগ করেন।

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং আসাম প্রাদেশিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তখন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি ও দেওয়ান আবদুল বাসেত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ বছরই দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আসাম প্রাদেশিক আইন পরিষদে (আপারহাউজ) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন।

ভারত বিভাগের পর সিলেটে গণভোটের আয়োজন করা হয়। ভোটের ফলাফল অনুযায়ী সমগ্র সিলেট জেলা পাকিস্তানে অর্থাৎ পূর্ববাংলায় আসার কথা। কিন্তু রেডক্লিফ রোয়েদাদ করিমগঞ্জ মহকুমার তিনটি থানা বদরপুর, বাতাবাড়ি ও পাথরকান্দি এবং করিমগঞ্জ থানার অর্ধেক ভারতের কাছাড় জেলার সাথে জুড়ে দেয়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে বাউন্ডারি কমিশনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এতে সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ভেলভেডিয়ারে গিয়ে কমিশনের নিকট স্মারকলিপি পেশ করেন।

ভাষা আন্দোলনের সূচনাকালে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ছিলেন নওবেলাল পত্রিকার সম্পাদক। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খানের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ছাপা হয় নওবেলাল পত্রিকায়। ফলে সে সময় তার চলাফেরা করা ভীষণ বিপজ্জনক ছিল। তা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার পক্ষে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যান।
’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মিছিল দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের বাসা থেকেই বের হতো এবং সমস্ত শহর প্রদক্ষিণ করে আবার তার বাসাতেই ফিরে আসত। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য ১৯৫৪ সালে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফকে সুনামগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
ভাষাসৈনিক ও দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ আমন্ত্রিত হয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ১৯৫৬ সালে ভারতীয় দার্শনিক কংগ্রেসের তৎকালীন মাদ্রাজ প্রদেশে অনুষ্ঠিত বার্ষিক অধিবেশনে ইতিহাস ও দর্শন সম্বন্ধে সুদীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠ করে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মনীষীদের প্রশংসা লাভ করেন।

১৯৬১ সালে পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্দোপাক কালচারাল কনফারেন্সে ‘নৈতিকতার শিক্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন। ১৯৬২ সালে ইরাক সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে প্রথম মুসলিম দার্শনিক আলকিন্দি সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ পাঠ করেন। ১৯৮৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফাউন্ডেশন কর্তৃক দার্শনিক কনফারেন্সের প্রবক্তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ঋঅওঞঐ অঘউ জঊঅঝঙঘ ওঘ এজঊঅঞ ঞজঅউওঞওঙঘ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন।

১৯৮৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত ঈঙঘঈঊচঞ ঙঋ ঐঙখওঘঊঝঝ ওঘ ঈঐজওঝঞওঅঘওঞণ অঘউ ওঝখঅগ বিষয়ক সম্মেলনে ঐঙখওঘঊঝঝ ওঘ ওঝখঅগ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেন।
দেওয়ান মো: আজরফ ১৯৫৯ ও ১৯৬৫সালে পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের ধর্ম ও দর্শন শাখায় সভাপতিত্ব করেন। পরবর্তীকালে তিনি পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ ও ১৯৭০ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি বাংলাদেশ দর্শন সমিতির সহসভাপতি এবং ১৯৮৪ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে বিপ্লব বার্ষিকীতে ইরান সরকারের আমন্ত্রণে যোগদান করেন।

শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও দর্শনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। এসব বিষয়ে তিনি লিখেছেন শতাধিক গ্রন্থ। ১৯৪০ সালে তার প্রথম গল্পপত্রিকায় প্রকাশিতহয়। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ (১) তমদ্দুনের বিকাশ; (২) সত্যের সৈনিক আবুজর; (৩) ইতিহাসের ধারা; (৪) নতুন সূর্য (গল্পগ্রন্থ); ৫. ব্যাকগ্রাউন্ড অব দ্য কালচার অব বেঙ্গল; (৬) জীবন সমস্যার সমাধানে ইসলাম; (৭) ফিলোসফি অব হিস্টোরি; (৮) সাইন্স অ্যান্ড রেভোলিউশন; (৯) ইসলামী আন্দোলন যুগেযুগে; (১০) আবুজর গিফারী (ইংরেজি); (১১) ইসলাম ও মানবতাবাদ; (১২) সন্ধানী দৃষ্টিতে ইসলাম; (১৩) দর্শনের নানা প্রসঙ্গ; (১৪) আজাদী আন্দোলনের তিন অধ্যায়; (১৫) আমাদের জাতীয়তাবাদ; (১৬) মরমি কবি হাসন রাজা; (১৭) ইতিহাসে উপেক্ষিত একটি চরিত্র; (১৮) ইসলামিক মুভমেন্ট; (১৯) ধর্ম ও দর্শন; (২০) অতীত জীবনের স্মৃতি; (২১) নয়া জিন্দেগি (উপন্যাস); (২২) বিজ্ঞান ও দর্শন; (৩ খণ্ডে); (২৩) অতীত দিনের স্মৃতি; (২৪) সিলেটে ইসলাম। তার লেখা ৪০টিরও বেশি পাণ্ডুলিপি এখনো অপ্রকাশিত।

ব্যাপক কর্মকৃতির জন্য দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক মুসলিম সংহতি পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮৪), ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), মহান একুশে পদক (১৯৯২), মাওলানা আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক (১৯৯৩), জালালাবাদ স্বর্ণপদক (১৯৯৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৯১), ভাসানী পুরস্কার (১৯৯৫), কবি মোজাম্মেল হক পুরস্কার (১৯৯১), শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর এবং স্বপ্নাবেশ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক মনোনীত করে।

মোহাম্মদ আজরফ প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন দুহালিয়ার মিডিল ইংলিশ স্কুলে। ১৯২৫ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ফারসিতে লেটারসহ প্রবেশিকা পরীক্ষা, ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ১৯৩০ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ এবং ১৯৩২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনে বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
পেশাগত জীবনে সুনামগঞ্জ কলেজ, আবুজর গিফারি কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। আবুজর গিফারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের নবেম্বর মাসে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সুনামগঞ্জ কলেজের লজিকের প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে ভাইস প্রিন্সিপাল ও ৫৪ সালে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৫৭ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ নরসিংদী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং ১৯৬৫-এর নভেম্বর থেকে ১৯৬৭-এর মে পর্যন্ত মতলব কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি এ জেড এম সামসুল আলমের সহযোগিতায় মালিবাগ আবুজর গিফারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি আবুজর গিফারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজরফ ১৯৭৩ থেকে ’৮৩ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্র বিভাগে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
দেওয়ান আজরফ ১৯২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান রাজার দ্বিতীয় পুত্র গনিউর রাজার কনিষ্ঠা কন্যা সাজিদুন্নেসা খাতুন চৌধুরীরানীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী বিগত ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে পরলোকগমন করেন। আর ১৯৯৯ সালের ১ নভেম্বর দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ইন্তকাল করেন। সুনামগঞ্জ জেলার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ক্ষণজন্মা এই দার্শনিকের গবেষণাকর্ম নিয়ে একটি বই প্রকাশের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাংলা একাডেমির আগামী বইমেলায় বাজারে আসবে বলে আশা করি।

লেখক : লন্ডনপ্রবাসী কবি ও কথাসাহিত্যিক। সময় সম্পাদক।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us