‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ হিন্দুস্তান আজ কিসকা?
‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ হিন্দুস্তান আজ কিসকা? - ছবি : সংগ্রহ
পুরুষের বহু বিয়ের (Polygamy) মতো একই স্ত্রীলোকের একই সময়ে বহু পতি গ্রহণের (polyandry) বিষয়টিও ছিল অনেক সমাজের প্রথা। সুধীরচন্দ্র সরকার সঙ্কলিত ‘পৌরাণিক অভিধান’-এর ২৪৬ পৃষ্ঠায়, ‘মাতৃআজ্ঞায় পঞ্চ ভ্রাতা (পাণ্ডবরা) মিলিত হয়ে দ্রৌপদীকে বিয়ে করার’ এই অনার্য প্রথার নজির অতি সাম্প্রতিককালেও ভারতে সনি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত crime patrol অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। অভিধানটির ১২৩ পৃষ্ঠায় দেবতা বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণের, রুক্সিনী ভিন্ন জাম্ববতী, সুশীলা, সত্যভামা ও লক্ষ্মণা নামে চারটি প্রধানা স্ত্রী ও ১৬ হাজার অপ্রধানা স্ত্রী থাকার কথা বলা হয়েছে। ড. বিনয়চন্দ্র সেন তার Studies in the Buddist Jatakas নামক বইয়ের ২০১ পৃষ্ঠায় ‘(অনুবাদিত) বেনারসের ধার্মিক রাজা দশরথের (শ্রীরামচন্দ্রের পিতা) ১৬ হাজার স্ত্রীর উল্লেখ করেছেন।
Encyclopedia Britannica, V-5, p-518 মতে, ইহুদি বাইবেলের হজরত দাউদ আ: (খ্রিষ্টীয় বাইবেলের ডেভিড, আনুমানিক খ্রি.পূর্ব এক হাজার অব্দে) বিবিধ গোত্রে বিয়ের মাধ্যমে ইসরাইলিদের ঐক্যবদ্ধ ও জেরুসালেমকে রাজধানী করে রাজত্ব করেন। স্ত্রীর সংখ্যার উল্লেখ নেই। তবে খণ্ড-১৬-এর ১০৪৪ পৃষ্ঠায়, ‘সেনাপ্রধানের স্ত্রীর সাথে মিলনে জন্ম নেয়া দাউদ আ:-এর পুত্র সোলায়মানই আ: পরিণামে তার উত্তরাধিকারী রাজা এবং তার হেরেমে থাকা ৩০০ উপপত্মী ও ৭০০ স্ত্রীর বৈবাহিক বন্ধনে সুদৃঢ় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। আধুনিককালে ঢাকার মুন্সীগঞ্জ জেলার বজ্রযোগিনী গ্রামের কৃষ্ণসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২৮৪ স্ত্রী; অন্য দুই কুলীন ব্রাহ্মণের একজনের ৬০ ও অন্যজনের শতাধিক স্ত্রী থাকায় এর একটিকে কেন্দ্র করে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার ‘বামুনের মেয়ে’ উপন্যাস রচনা করেছিলেন বলে ড. দীনেশ চন্দ্র সরকার তার ‘পাল-পূর্ব যুগের বংশানুচরিতের,’ প্রথম খণ্ডের ১৫৮ পৃষ্ঠায় বলেছেন।
পূর্বোল্লিখিত Encyclopedia, V-6, P-472--এ মিসরে ফিরাউন পরিবারে ভাইবোনের বিয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতে পালি ভাষায় লেখা বৌদ্ধদের ‘জাতক’ গ্রন্থে অনুরূপ বিয়ে প্রথার কথা আছে। ড. বিনয়চন্দ্র সেনের ওই বইটির ২০২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘দশরথের প্রধানা রানীর দুই পুত্র ও এক কন্যা জন্মের জ্যেষ্ঠ রামাপণ্ডিত, দ্বিতীয় রাজকুমার লক্ষ্মণ ও কন্যা হলেন সীতা দেবী। প্রধানা রানী অজ্ঞামহিসির (Aggamahisi) মৃত্যুতে তার স্থান দেয়া অন্য রানীর গর্ভজাত পুত্রের নাম ভরত।’ পক্ষান্তরে, বাল্মীকির রামায়ণে সীতার অতি প্রাকৃতিক পিতৃত্বের পরিচয়ে রামের সাথে বিয়ের কথা বলা হয়েছে।
The Oxford History of India বইটির ৮৬ পৃষ্ঠায় হিরোদোতাসের উদ্ধৃতিতে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ লিখেছেন, ‘প্রাচীন তক্ষশীলায় প্রতি বছর প্রতিটি গ্রামে বিয়ে-বাজার অনুষ্ঠিত হতো। গরিব লোকেরা সাবালিকা হলে কন্যাদের ওই বাজারে বিক্রয় করত। অনুরূপ বাজার ছিল ব্যাবিলন, উত্তর-পূর্ব ইতালি ও উত্তর-পশ্চিম যুগোস্লোভিয়ায়। জর্জ বার্নাড শ তার Marriage and Morals eBwUi 36 c„ôvq wj‡L‡Qb, ÔBishops lived in open sin with their daughters.... Pope Gregory vii made immense exertions to cause, priest to put away their concubines.Õ বিশপরা (খ্রিষ্টীয় চার্চের উচ্চপদস্থ যাজক) তাদের কন্যাদের সাথে সহবাস করত।... পোপ গ্রেগরীয় VII (আ: ১০২৫-১০৮৫ খ্রি:) প্রবল ক্ষমতার প্রয়োগ করায় যাজকদেরকে রক্ষিতা সরিয়ে রাখতে হয়।] উপাসনালয় ও মন্দিরে নির্দিষ্ট দেবীর সেবার নামে স্বেচ্ছায় যৌনতা প্রদাতা তরুণীদের ধর্মীয় পতিতা বলা হতো। ভারতে এরা সেবাদাসী বলে পরিচিত ছিল, যার অস্তিত্ব ১৬ শ’ শতাব্দী পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ প্রথাই আধুনিক যুগের রূপান্তরিত পতিতালয়।
সেখানে মেয়েদের পাঠাতে বাবা-মা প্ররোচিত করত জাপানে। জর্জ বার্নাড শ তার পূর্বোল্লিখিত বইটির ৭৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, "In India the transition from religious to commercial prostitution is not yet complete. Katherine Mayo, the author of `Mother India' adduces the survival of religious prostitution as one of the counts of her indictment against that country." (ভারতে ধর্মীয় থেকে পতিতালয়ের বাণিজ্যিক উত্তরণ এখনো শেষ হয়নি। ‘ভারত মাতা’ বইয়ের লেখিকা ক্যাথারিন মেয়ো ও ধর্মীয় পতিতালয়ের টিকে থাকাকে প্রমাণস্বরূপ সে দেশের বিরুদ্ধে তার অন্যতম অভিযোগ বলে উল্লেখ করেছেন।
ডি আর ভান্ডারী এবং আর আর শেঠির Studies in Plato and Aristotle" বইটির ৬৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, "According to Herodotus, the Agathyrsians held their women in common as also did the Libyan Nasomones and Asiatic Massagetes. In Sparta, women were lent out by their husbands to procreate children for the state. Euripides in his 'The protesilaus' advocated the community of wives. To the Greeks, a wife was merely an instrument for procreation of children, Marriage was no sacrament." (হিরোদোতাসের (আনুমানিক ৪৮৪ খ্রিষ্টপূর্বের গ্রিক ঐতিহাসিক এবং ইতিহাসের জনক) মতে, লিবীয়ার নসোমনরা ও এশিয়ার মসাগোটিসদের (মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার অক্সাস নদী অঞ্চলের স¤প্রদায়ের মতোই অগাথিরসিয়ানরা (পশ্চিম রোমানিয়ার অধিবাসী) তাদের নারীদের এজমালিভাবে ব্যবহার করেন। স্পার্টায় রাষ্ট্রের জন্য সন্তান উৎপাদনে স্বামীরা স্ত্রীদের ধার দিত। ইউরিপিডেস (গ্রিক নাট্যকার, আনুমানিক ৪৮০ খ্রিষ্টপূর্ব) তার ‘দ্য প্রোটেসিলাউসে’ স্ত্রীদের যৌথ অধিকারের জন্য সম্প্রদায় গঠন সমর্থন করেছেন। গ্রিকদের কাছে, একজন স্ত্রী কেবল সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র এবং ঈশ্বরের কৃপালাভার্থে বিয়ে কোনো ধর্মানুষ্ঠান নয়।