রাষ্ট্র কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত?

রহমান মৃধা | Apr 26, 2023 01:11 pm
রাষ্ট্র কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত?

রাষ্ট্র কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত? - ছবি : সংগ্রহ

 

উন্নত পৃথিবীতে জীবনের ইতিহাসে একটি গভীর পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এবং এর জন্য পরিকল্পনা আরো জোরালো করা উচিত। মানব-প্রতিযোগীতামূলক বুদ্ধিমত্তাসহ এআই সিস্টেমগুলো সমাজ এবং মানবতার জন্য গভীর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ কারণে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সকল সংস্থাগুলোর এক সাথে কাজ করা উচিত। দুর্ভাগ্যবশত পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার এই স্তরটি সঠিকভাবে ঘটছে না, যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এআই কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে যা কেউ- এমনকি তাদের নির্মাতারাও বুঝতে পারছেন না। ভবিষ্যৎবাণী বা নির্ভরযোগ্যভাবে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কিনা এটাও এখন প্রশ্ন! যদি সবকিছু সঠিকভাবে এগোতে থাকে তবে এআই-এর মাধ্যমে মানবতা একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ উপভোগ করতে পারবে বলেও অনেকে আশাবাদী। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নানাভাবে গণতন্ত্রে প্রভাব রাখতে পারবে। সরকারের সাথে জনগণের ঘনিষ্ঠতা সহজতর করা, ট্যাক্স সিস্টেম এবং ভোটার নিবন্ধনসহ ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেও জনগণকে সহায়তা করতে পারবে।

এটি জনগণের প্রতি সরকারকে দায়বদ্ধ করার বিষয়টি সহজতর করবে। এছাড়াও বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু শক্তিশালী টুলস রয়েছে, যেগুলো সরকারি ব্যয় পর্যবেক্ষণ, দুর্নীতির ক্ষেত্রগুলো শনাক্তকরণ এবং নির্বাচনী ফলাফল পর্যবেক্ষণে সহায়তা করতে সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জনগণের জন্য সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতেও সহজতর করবে।

এআই-এর কারণে যে নাটকীয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যাঘাত বিশেষ করে, গণতন্ত্রের মোকাবেলা করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বলেও অনেকে মনে করছেন। অন্যদিকে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়েও বর্তমানে বেশ আলোচনা চলছে। এমনকি বেশ কিছু পর্যবেক্ষক সতর্ক করছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই গণতন্ত্রের পরিসমাপ্তিও ঘটাতে পারে। কারণ এআই গণতন্ত্রের অবমূল্যায়ন করতেও ব্যবহৃত হতে পারে। আর তাই এ বিষয়টি আমাদের মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ– এআই কোনো নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় এজেন্ট নয় যে সে তার ইচ্ছামতো কাজ করবে। এটি ভালো-মন্দ উভয়ের জন্যই কাজ করতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে কে কোন উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন করতে এআই ব্যবহারের বেশ কিছু উপায় রয়েছে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে অথবা সুনির্দিষ্ট কণ্ঠকে দমিয়ে দিতে এআই বহুবিধ জন মতে ব্যবহৃত হতে পারে।

সৃষ্টির রহস্যে পরিষ্কার যে আকাশ এবং পাতালের মাঝখানে কোনো বাধা নেই। তাহলে কী করে সম্ভব আমাদের গতিশীল জীবনকে বাধার মাঝে আটকে রাখা! আমার মতো অনেকেই ভাবছে, অনেক জটিল এবং সৃষ্টিশীল বিষয় নিয়ে যা সত্যিকারার্থে স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো জানে না। জানে না রাজনীতিবিদরা। শিক্ষা যেমন সেই শুরু থেকে গড়ে উঠেছে এবং তাকে বেড়াজালে বদ্ধ করা হয়েছে। যার ফলে আমাদের চিন্তা চেতনায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এআই আমাদেরই তৈরি এক সৃষ্টি অথচ তার সৃষ্টিশীলতা দ্রুততার সাথে সীমালঙ্ঘন করে প্রসারিত হতে চলেছে। আমরা মানুষ হয়ে যা করতে পারিনি অথচ এআই সেটা করতে পারছে। তাহলে প্রশ্ন হতেই পারে এআই মানুষের তৈরি তা কি করে সীমাহীন হতে পারে?

এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়ত পাওয়া যাবে তবে এ মুহূর্তে এলন মাস্ক এবং অন্যরা 'সমাজের ঝুঁকি' উল্লেখ করে ছয় মাসের জন্য শক্তিশালী এআই সিস্টেমের বিকাশ বিরতির আহ্বান জানান- অন্যথায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমগুলো শিগগিরই মানবতার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। মূলত এআই-এর দ্রুত বর্ধন সমাজ তথা রাষ্ট্র মোকাবেলা করতে বা মেনে নিতে শত ভাগ প্রস্তুত নয়। এআই রাজনীতিবিদদের জন্য বড় আকারের হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। মাত্র চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এমনভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে যে রাজনীতিবিদরা ভয়ঙ্কর আতঙ্কের মধ্যে আছে। অর্থনৈতিক সিস্টেম থেকে শুরু করে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপরও বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এআই যদি গণতন্ত্রের হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তবে বাক-স্বাধীনতা হরণ করতেও এর কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। এমন একটি সময় আমার ভাবনায় শুধু একটিই প্রশ্ন তাহলে আমরা এত যুগ যা করেছি তা চিরস্থায়ী নয়, মানে দুই প্লাস দুই চার না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারে বা সম্ভব। যাহোক আমি রোবট নই, আমি মানুষ, আমি ভুল করি, আমি ভুল থেকে শিখি। প্রতিদিন আমি আমার মনের মধ্যে একটি সহজ চিন্তা নিয়ে আমার দিন শুরু করি যে আজ আমি যেখানেই যাই না কেন এবং যাই করি না কেন, আমি নিজের এবং অন্যদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, প্রেমময় এবং আনন্দময় জীবন তৈরি করব। আমি যদি দিনে শতবার এ কাজটি করতে ব্যর্থ হই তাতে কি আসে যায়? একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মানুষের জন্য ব্যর্থতা বলে কিছু নেই। আমি শতবার ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতার মাঝে শত শত নতুন কিছু শিখব। আমি সত্যিই যদি প্রতিজ্ঞা করি এবং যত্নশীল হই সেটা পূর্ণ করতে এবং আমি নিজেকে যদি এইভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি, তাহলে আমার মন সংগঠিত হবে, একবার আমার মন সংগঠিত হলে, আমার চিন্তাভাবনা এবং আবেগগুলোও সংগঠিত হবে।
আমার শক্তিও একই দিকে সংগঠিত হবে। একবার আমার মন, মস্তিষ্ক, আবেগ, শক্তি সংগঠিত হলে আমাকে কোন কিছুই ঠেকাতে বা বাধা দিতে পারবে না, আমার ফোকাস করার ক্ষমতা এত শক্তিশালী হবে যে আমি আমার মনকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবো। তারই প্রমাণ এআই, তার শক্তিশালী হবার পেছনে রয়েছে শতভাগ ফোকাস যা তার শতভাগ নিয়ন্ত্রণে এবং মজার ব্যাপার হলো, এআই তো মানুষের তৈরি রোবট। সে যখন পেরেছে আমি মানুষ, আমি কেন পারব না!

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us