চীন-যুক্তরাষ্ট্র লড়াই : কী করবে নেপাল

অচিয়ুত ওয়াগলে | Dec 26, 2019 09:03 pm
চীন-যুক্তরাষ্ট্র লড়াই : কী করবে নেপাল

চীন-যুক্তরাষ্ট্র লড়াই : কী করবে নেপাল - ছবি : সংগৃহীত

 

ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে শক্তিশালী স্থায়ী কমিটির সভায় (২২ ডিসেম্বর সমাপ্ত) মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি) কমপ্যাক্ট অনুমোদিত হয়নি। এই চুক্তির অধীনে নেপালকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরি দেয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কমপ্যাক্টের বিরোধিতাকারী দলীয় নেতৃত্বের একটি অংশ চারটি আপত্তির কথা প্রকাশ করেছেন।
প্রথমত, নেপালের এমসিসি গ্রহণ করা উচিত নয়, যদি তা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (তথা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রভাব বৃদ্ধির প্রতি চ্যালেঞ্জ হয়) অংশ হয়। এই অংশের যুক্তি হলো, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি হলো এই অঞ্চলে মার্কিন ভূ-কৌশলগত প্রভাব আরো বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, নেপালের উচিত হবে না এর অংশ হওয়া।

দ্বিতীয়ত, বিরোধের প্রধান বিষয় হলো চুক্তিটির ৭.১ ধারাটি। এতে বলা হয়েছে যে সই করার পর পক্ষগুলোকে মেনে নিতে হবে যে এই আইনটি নেপালের অভ্যন্তরীণ আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে। কেবল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টিই নয়, দেশের অন্যান্য এলিটরাও এই অংশটির বিরোধিতা করছে।
তৃতীয়ত, পরিশিষ্ট ৫ (ক) অনুযায়ী, চুক্তিটি ভারত সরকারের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে, যা নেপালের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

চতুর্থত, কয়েকটি ছোটখাট বিষয়, যেমন, চূড়ান্ত নিরীক্ষার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়ার মাধ্যমে নেপালিব্যবস্থাকে অবমূল্যায়ন করার মতো ব্যাপারগুলো সামনে আছে। অথচ এই চুক্তির আওতায় নেপালকেও তার নিজস্ব অর্থের ১৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে।

তাছাড়া এটাও পরিষ্কার নয় কেন উন্নয়ন সহায়তার সাথে সম্পর্কিত পুরো মঞ্জুরিটি (৮০ ভাগ প্রস্তাবিত হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ এবং প্রায় ১১ ভাগ কৌশলগত সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ) পার্লামেন্টে পাস করানো দরকার। বস্তুত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭৯ অনুযায়ী কেবল ক. শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি, খ. প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত মিত্রতা, গ. নেপাল রাষ্ট্রের সীমানা ও ঘ. প্রাকৃতিক সম্পদ, এর বণ্টনের মতো বিষয়গুলোই পার্লামেন্টে পাস করানো প্রয়োজন। কিন্তু এমসিসি এসবের কোনো কিছুর সাথেই সম্পর্কিত হবে না যদি না তা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ না হয়। নেপাল যখন ২০১৭ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (একই বছর এমসিসিও সই হয়) সই করে, তখন পার্লামেন্টে এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি।

অধিকন্তু, সরকার এটি কেবল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ‘অনুমোদন’ করার পরিকল্পনা করছে না সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ‘অনুমোদন’ করতে চাচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়।

নতুন শর্ত
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির স্থায়ী কমিটি দলের সচিবালয়ের কাছে ‘সুপারিশ’ করে যে পার্লামেন্ট এমসিসি অনুমোদন করতে পারে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে পরিষ্কার করে যে এটি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ নয়।
তবে নেপালের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র যদি এমসিসিকে রক্ষার জন্য এ ধরনের কোনো বিবৃতি দেয় তবে তাতে বিস্ময়ের কিছু হবে না। কিন্তু তবুও এটা বাস্তবতাই হয়ে থাকবে যে এমসিসি পুরোপুরি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সাম্প্রতিকতম প্রকাশনায় (এ ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক: অ্যাডভান্সিং এ শেয়ার্ড ভিশন) বলা হয়েছে যে ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অর্থনৈতিক স্তম্ভ ইউএসএইয়ের মাধ্যমে ২.৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া ইউএস মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি) ও ওভারসিস প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনের (ওপিআইসি)... এমসিসির মাধ্যমে আরো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। সুশাসন, দেশীয় মালিকানা, স্বচ্ছতার মতো মূলনীতরি আলোকে ফলাফলমুখী উন্নয়ন সহায়তার জন্য ২০০৪ সাল থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক জাতিগুলোকে ২.৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছে।

ঘটনাক্রমে প্রকাশনায় নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গায়ওয়ালির সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেইওর একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেইওসহ উচ্চপদস্থ অনেক মার্কিন কর্মকর্তা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন যে এশিয়া অঞ্চলের সব ধরনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা স্বাভাবিকভাবেই হবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আওতায়।
এর ফলে ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কোনো প্রয়োজন ছিল না এমসিসি কমপ্যাক্টটি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ কিনা সে প্রশ্ন তোলার। কমপ্যাক্টটি পুরোপুরি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করার বিষয়। নেপালের সাত দশকের উন্নয়ন ইতিহাসে এটি হলো একক বৃহত্তম মঞ্জুরি সহায়তা। নেপালের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন ও সড়ক কানেকটিভিটির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এই অর্থ। সম্পদ খরায় থাকা নেপালের জন্য এ ধরনের অর্থ খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। অন্য কোনো দেশ থেকে নেপাল এ ধরনের সহায়তা পাওয়া সম্ভব নয়।

উদ্বেগের কারণ

প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি যদি তার দক্ষতা প্রয়োগ করেন, তবে ভিন্ন মতালম্বীদের মুখ বন্ধ করে পার্লামেন্টে তা পাস করিয়ে নিতে পারবেন। তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি কেবল পরামর্শমূরক ভূমিকা রাখতে পারে, সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

তবে আসল উদ্বেগ হলো এই যে নেপাল অনিচ্ছুকভাবেই বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সভায় এমসিসি নিয়ে আড়াআড়ি মতভেদ পরিষ্কার করে দিয়েছে যে সেখানেও পাশ্চাত্য ও চীনাদের গভীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে, প্রত্যেক শিবিরই তাদের নিজস্ব লবি ব্যবহার করছে। এসব ইন্টারেস্ট গ্রুপ জাতীয় স্বার্থের চেয়ে কায়েমি স্বার্থগুলো রক্ষায় বেশি আগ্রহী। নেপালের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক কার্যক্রমে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। নেপালের উচিত হবে সব উন্নয়ন উদ্যোগে তার সব বন্ধুর কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করা। কেবল চীনকে খুশি করার জন্য এমসিসি কমপ্যাক্টের মতো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। অবশ্য জাতীয় স্বার্থে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত।

কাঠমান্ড পোস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us