ভারত : নতুন ধরনের আন্দোলন

আকার প্যাটেল | Jan 27, 2020 08:29 am
ভারত : নতুন ধরনের আন্দোলন

ভারত : নতুন ধরনের আন্দোলন - ছবি : সংগৃহীত

 

 শনিবার, ২৫ জানুয়ারি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক বিক্ষোভ ৫০ দিন অতিবাহিত হলো।

আহমদাবাদ, বেরেলি, ভাগলপুর, ভুপাল, কোচিন, দারভাঙ্গা, দেওবন্দ, দেয়াস গয়া, গোপালগঞ্জ-মিসওয়ান, ইন্দোর, জবলপুর, কল্যাণ, কিশানগঞ্জ, কলকাতা, কোটা, লক্ষ্ণৌ, মুম্রা, মুজাফফরপুর, নান্দেদ, পাবর্নী, পাটনা, পুনে, রাঁচি, সম্বল, সমস্তিপুর, তং, বিজয়ওয়াদায় ভারতীয়রা সমবেত হয়েছে। এসব নগরীর কোনো কোনোটিতে একাধিক সমাবেশ হচ্ছে, দিল্লিতে ডজনেরও বেশি।

এ ধরনের গণআন্দোলন ভারত আগে কখনো দেখেনি। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লোকজন শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখানে কোনো নেতৃত্ব নেই। অবশ্য বিক্ষোভকারীদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও দৃঢ়তা ইতোমধ্যেই নরেন্দ্র মোদি সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।
এনআরসি কমবেশে স্থগিত হয়ে গেছে। সিএএ রয়েছে আদালতে। আর রামবিলাস পাসওয়ান ও প্রকাশ জাভেদকারসহ তিন মন্ত্রী জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধনে মা-বাবার নাম, জন্মনিবন্ধনের তারিখ শর্ত হিসেবে থাকবে না বলে জানিয়েছেন।
যেকোনো হিসাবেই এটি একটি বিশাল সফলতা, বিশেষ করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা একটি সরকার ও যার পেছনে মিডিয়া ইতিবাচকভাবে সক্রিয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন বিক্ষোভকারীরা এখনো নিজেদের শক্তিতেই আছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে না? তৃতীয় পশ্নটি হলো, বিরোধী দলগুলোর অনুপস্থিতিতি কি সিএএবিরোধী বিক্ষোভকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে?

উপরে যেসব নগরীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর অন্তত অর্ধেকই উত্তর প্রদেশে।
ওই রাজ্যেই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নেই। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি পুরোপুরি দৃশ্যপট থেকে অনুপস্থিত। অথচ তরুণদের সঙ্ঘবদ্ধ করার শক্তি এই দলের আছে। অখিলেশের দূরে থাকার কারণ উত্তর প্রদেশে সিএএবিরোধী আন্দোলনকে হিন্দু বনাম মুসলিম সঙ্ঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ কারণে এই আন্দোলনে যোগ দেয়া মানে তিনি হিন্দু ভোটারদের ক্ষেপিয়ে তুলবেন। আবার এ কারণে তার দল বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়ে ফায়দা হাসিল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
মায়াবতীর ঘটনাটি একটু জটিল। তিনি সিএএ নিয়ে অখিলেশের চেয়ে বেশি চেঁচামেচি করেছেন। কিন্তু কিন্তু তার ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ না দিতে বলা হয়েছে। তিনি তরুণ ও গতিশীল দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদের কাছ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশঙ্কা করছেন। এই আজাদ বর্ণ হিন্দু সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিজেকে রাবন নামে চিহ্নিত করছেন। তিনি ক্যারিশমেটিক এবং উত্তর প্রদেশে তৃণমূল পর্যায়ে তার সমর্থন রয়েছে। তারা বহুজন সমাজ পার্টির ঘাঁটি নাড়িয়ে দিতে পারে।

ঠিক বা ভুল যাই হোক না কেন, মায়াবতী আরো বোঝেন যে এটি এমন একটি ইস্যু, যা তার ভোট ব্যাংকের কোনো ক্ষতি করবে না। ফলে তিনি তাদের জন্য লড়াই করার দরকার মনে করছেন না। তাছাড়া তিনি প্রকাশ্যেই বলছেন যে মোদি তাকে চাপ দিচ্ছেন তার মামলাগুলো নিয়ে। ফলে কেউ চায় না যে তার ভাগ্যও লালু প্রসাদ যাদবের মতো হোক।
একমাত্র যে দলটি এই বিক্ষোভে সমর্থন দিচ্ছে, তা হলো মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। এই দলটির বিশেষত্ব হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকুক বা বিরোধী দলের থাকুক, দলটি আন্দোলনের মনোভাবে থাকে। আন্দোলনেই তাদের ভরসা।
এখন আসা যাক, বিরোধীদের সমর্থন দান না করার কারণে কি সিএএবিরোধী আন্দোলনের ক্ষতি হচ্ছে। কয়েকটি কারণে দেখিয়ে বলা যায়, তা হচ্ছে না।
প্রথমত, বিক্ষোভকারীরা নিজেরা কারো সাহায্য চাইছে না। তারা সমাজের নানা স্তর থেকে এসেছেন। তারা তাদের অবস্থানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

দ্বিতীয়ত, বিজেপি দীর্ঘ সময় এদের বরদাস্ত করতে পারবে। তারা এতে মেনে নিতে প্রস্তুত।
তৃতীয়ত, বিক্ষোভকারীরা মোদি সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে না। তারা কেবল একটি আইনকে অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক দাবি করে সেটির বাতিল চাইছে। এ কারণে বিজেপিও বিক্ষোভকারীদৈর কাছ থেকে চাপ অনুভব করছে না।
বড় রাজনৈতিক দলগুলো ধরে নিয়েছে যে সমাজ পুরোপুরি বিভক্ত হয়ে গেছে। এ কারণে তারা এসব কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে না।
কিন্তু তারা যদি নির্যাতিত জনসাধারণের অধিকারের জন্য তাদের পাশে দাঁড়াত, তবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিত।
এ কারণেই দেশটি নিজেই খর্ব হয়ে গেছে এবং নিজেকে খর্ব হতে সুযোগ দিয়েছে।

আউটলুক ইন্ডিয়া


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us