করোনাভাইরাস ২৪ দিন পর্যন্ত মানবদেহে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে!

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 14, 2020 06:21 pm
করোনাভাইরাস ২৪ দিন পর্যন্ত মানবদেহে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে!

করোনাভাইরাস ২৪ দিন পর্যন্ত মানবদেহে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে! - সংগৃহীত

 

জানুয়ারি মাসে চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে হওয়া কোভিড-১৯ রোগে সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষের মতো মানুষ মারা গেলেও ভাইরাসটির চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অনেকটা অজানা।

করোনাভাইরাস মানুষের দেহে কতক্ষণ বেঁচে থাকে, কীভাবে ছড়ায়, কোন ধরণের সমতলে কতক্ষণ টিকে থাকে - এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশ কয়েকবার মতামত পরিবর্তন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংস্থাগুলো।

তবে এই ভাইরাসটি নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের গবেষণা চললেও ভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন ছোটোখাটো বিষয় সম্পর্কে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে মানুষের মধ্যে।

আক্রান্ত ব্যক্তি কতদিন পর্যন্ত অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগে গড়ে পাঁচ দিন। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে সময় লাগতে পারে আরো বেশি দিন।

ইনকিউবেশন কাল অর্থাৎ যে সময়টায় কোন ভাইরাস মানুষের শরীরে থাকে কিন্তু তার কোন লক্ষণ দেখা যায় না, সেই ইনকিউবেশনের সময়টা কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে হলো ১৪ দিন পর্যন্ত - এই মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।

কিন্তু কোনো কোনো গবেষক বলছেন যে এই সময়টা ২৪ দিন পর্যন্তও হতে পারে। অর্থাৎ জীবাণু আপনার শরীরে সুপ্ত অবস্থায় এতটা লম্বা সময় ধরে থাকতে পারে।

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ২১ দিন পর্যন্ত ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে ধরা হচ্ছে - এমনটা জানিয়েছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন।

মুশতাক হোসেন বলেন, "একজন ব্যক্তির দেহে যেদিন প্রথমবার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় এবং এরপর তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে যদি তার উপসর্গ চলে যায়, তাহলে প্রথম দিন থেকে হিসেব শুরু করে ২১ দিন পর তিনি আর কাউকে সংক্রমিত করতে পারবেন না বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।"

তবে আক্রান্ত রোগী শুধুমাত্র মৃদু উপসর্গ সম্পন্ন রোগী হলে এবং তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে তার উপসর্গ চলে গেলেই ২১ দিন পর ওই ব্যক্তিকে নিরাপদ ধরে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

একজন রোগী কতজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারেন?

একজন করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী মহামারির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গড়ে কত জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন, সেই ধারণা পাওয়া যায় যে সংখ্যার মাধ্যমে, সেটিকে ইংরেজী অক্ষর 'আর' এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে 'আর' এর গড় মান ২ থেকে ২.৫ - অর্থাৎ প্রত্যেক কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে দুইজনের বেশি মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন।

তবে বিভিন্ন দেশ এবং ভৌগলিক অঞ্চলভেদে এই 'আর'-এর মান পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

মুশতাক হোসেন জানান, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমিত হিসেব ধরে নিয়েই রোগতাত্ত্বিক গবেষণা করা হচ্ছে।

"একজনের কাছ থেকে তিন জনের কম সংক্রমিত হচ্ছে, এটি ধরে নিয়েই বাংলাদেশের রোগতত্ত্ববিদরা গবেষণা চালাচ্ছেন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বাতাসে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে ভাইরাস?
করোনাভাইরাস বাতাসে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে বা বাতাসে কতদূর ভ্রমণ করতে পারে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মত রয়েছে।

শুরুতে বলা হচ্ছিল বাতাসে ভাইরাসটি কয়েক মিনিটের বেশি বেঁচে থাকে না। তবে পরে কিছু কিছু গবেষণার প্রতিবেদনে জানানো হয় যে ভাইরাসটি বাতাসে প্রায় আধ ঘণ্টার মত ভেসে থাকতে পারে - যদিও এই গবেষণার ফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত নয়।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে বাতাসে এক-দুই মিনিটের বেশি ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না ধরে নিয়েই স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ।

তিনি বলেন, "কোভিড-১৯ আক্রান্ত একজন ব্যক্তি যদি কোনো একটি জায়গায় হাঁচি বা কাশি দিয়ে চলে যায় এবং পরমুহুর্তে সেই জায়গায় আরেকজন এসে বসে, তাহলে হয়তো পরের ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারেন। তবে দুই-তিন মিনিট পর ঐ জায়গায় গেলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম।"

তবে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির ড্রপলেট যেখানে পড়েছে, সেখানে স্পর্শ করার মাধ্যমে আরেকজন ব্যক্তির দেহে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন মুশতাক হোসেন।

তিনি আরো মনে করেন, আবহাওয়াভেদেও বাতাসে ভাইরাসের উপস্থিতির সময়ে তারতম্য হতে পারে।

"একদম বাতাস না থাকলে সেখানে ভাইরাসের উপস্থিতি বেশিক্ষণ থাকা তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব, তবে এর পরিমাণ এতই সূক্ষ্ম যে সেটিকে উপেক্ষা করা সম্ভব।"


ফলমূল, শাকসবজি, কাপড় বা ত্বকে কতক্ষণ টিকে থাকে ভাইরাস?
একেক ধরণের সমতলে করোনাভাইরাসের স্থায়িত্বকাল একেক রকম হয়ে থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

যেমন প্লাস্টিক ও স্টিলের সমতলে ভাইরাসটি ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকতে পারে, আবার কার্ডবোর্ডে সেটির স্থায়িত্বকাল হয়ে থাকে ২৪ ঘণ্টার মতো।

মুশতাক হোসেন বলেন, "আমরা ধরে নিই পানিরোধী সমতলে এই ভাইরাসটি এক দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।"

সেই হিসেবে মানুষের ত্বকেও ভাইরাসটি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে বলে ধরে নেয়া হয় বলে জানান তিনি।

তেমনি ফলমূলেও করোনাভাইরাস এক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সক্ষম।

তবে পোশাকের ওপর এই ভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না বলে মনে করেন মুশতাক হোসেন।

"যেসব সমতল ড্রপলেট শোষণ করার ক্ষমতা রাখে, সে সব সমতলে বেশিক্ষণ ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না।"

এ কারণেই বাইরে থেকে ঘরে ফিরে হাত এবং কাপড় ভাল করে ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান মুশতাক হোসেন।

আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির হাতে তৈরি খাবার থেকে আপনি কি সংক্রমিত হতে পারেন?
আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রান্না বা খাবার তৈরি না করেন, তাহলে সেই খাবার থেকে আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।

মানুষ যখন কাশে তখন সেই কাশির সঙ্গে যে সূক্ষ্ম থুতুকণাগুলো বেরিয়ে আসে - যেটাকে 'ড্রপলেট' বলা হয়, সেগুলো যদি আপনার হাতে পড়ে, আর সেই হাত দিয়ে যদি আপনি খাদ্যবস্তু ধরেন, তাহলে সেই খাবার আপনাকে সংক্রমিত করতে পারে।

যারা খাবার তৈরি করছেন, যেকোনো খাদ্যবস্তু ধরার আগে তার ভালোভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নেয়া খুবই জরুরি।

সূত্র : বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us