হজের ৪ উদ্দেশ্য

মুফতি জাওয়াদ তাহের | Jul 24, 2020 09:47 am
হজের চার উদ্দেশ্য

হজের চার উদ্দেশ্য - ছবি : সংগৃহীত

 

হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ এবং সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে সম্পন্ন করাই ইসলামের পরিভাষায় হজ। প্রতিটি মুমিন তার হৃদয়ে লালন করে বাইতুল্লাহর জিয়ারত। এখানে আমরা হজের চারটি মৌলিক উদ্দেশ্য আলোচনা করব।

এক. নিজেকে পবিত্র করা। নিজের গুনাহ মার্জনার সাথে সাথে অন্তরকেও কলুষমুক্ত করা। কারণ মানুষের অন্তর বিশুদ্ধ করার একটি মাধ্যম হচ্ছে সম্মানিত জায়গা ও ভালো মানুষের সংশ্রবে যাওয়া। হজের স্থানগুলো বরকতপূর্ণ। যেখানে আসমান থেকে নাজিল হতে থাকে অবারিত রহমত। এমন পবিত্র স্থানে মানুষ ফেরেশতাতুল্য হয়ে যায় এবং আসমানের ফেরেশতাদের দোয়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়। এমন স্থানে যেই যাবে সে নূরের পরশে স্নিগ্ধ হয়। যাদের আল্লাহ অন্তর্চক্ষু দান করেছেন তারাই উপলব্ধি করতে পারেন। আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সা:কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন তার মা জন্ম দিয়েছিল। (বুখারি : ১৫২১)

দুই. আল্লাহর স্মরণ বা জিকির। হজকেন্দ্রিক যত স্থান রয়েছে সবি হচ্ছে ‘শাআয়েরুল্লাহ’ বা আল্লাহর নিদর্শন। আর যে আল্লাহর নিদর্শনাবলি দেখবে সে মহান আল্লাহকে স্মরণ করবে। লাখ লাখ মানুষ যখন সাদা কাপড় পরে মহান রবকে ডাকার চিত্র দেখবে। তখন সে মহান রবের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ সূরা হজের ২৮ নং আয়াতে বলেন : ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হজ পালনকারী বান্দাদের উদ্দেশে জিকিরের উপদেশ দিয়ে বলেন : ‘অতঃপর যখন তোমরা (হজের) যাবতীয় কাজ শেষ করবে। তখন (মিনায়) আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে, যেমন (জাহেলি যুগে) তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ করতে, তার চেয়েও বেশি।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ২০০)

তিন. হজ প্রেমাষ্পদের সাক্ষাতের অনন্য এক মাধ্যম। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ফেরেশতা চরিত্র ও পশু চরিত্রের এক সমন্বিতরূপে সৃষ্টি করেছেন।মাষের চরিত্রে ও তার সৃষ্টিতে ওইসব জৈবিক চাহিদাও রয়েছে যেগুলো অন্যান্য পশুর মধ্যে থাকে এবং একি সাথে তার সৃষ্টিতে ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর মানুষের সফলতা তখনই আসবে যখন তার পশুসুলভ স্বভাবের ওপর ফেরেশতাদের স্বভাব প্রবল হবে। রোজার মাধ্যমে এর কিছুটা লক্ষ করা যায়। পানাহার ত্যাগ করে নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু হজ হচ্ছে এর পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। কাফন সদৃশ্য কাপর পরিধান করে খালি মাথায় চুল দাড়ি এলোমেলো অবস্থায় সুগন্ধিবিহীন চিৎকার করে লাব্বাইক বলে কাবার চতুষ্পাশের্^ প্রদক্ষিণ করা, গিলাফ আঁকরে ক্রন্দন, সাফা থেকে মারওয়ায় দৌড়ানো, কখনো আরাফায় কখনো মুজদালিফায়, এসব কাজ একজন প্রকৃত প্রেমিকদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়। আর প্রেমরীতির উদ্ভাবকরূপে ছিলেন ইবরাহিম খলিলুল্লাহ। এর মাধ্যমে মুমিনের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।

চার. ইসলামের ঐশ^র্য ও সৌন্দর্য প্রকাশের এক মাধ্যম হজ। একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার এক অপরূপ সম্মিলন। যেমন : ১. শাসকরা তাদের রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য বিশালাকারের আয়োজন করে থাকে। এর মাধ্যমে সরকারের অনুগত ও অবাধ্যদের পার্থক্য করা। যে আহ্বানে সাড়া দেবে সে একনিষ্ঠ ও অনুগত। আর যে আসবে না সে অবাধ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২. রাষ্ট্রপ্রধান তার সাম্রাজ্য বিস্তার ও দেশকে অরো সমুন্নত করা। ৩. একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ ও পরিচিতি লাভ করা।


তেমনিভাবে হজের মাধ্যমে প্রকৃত মুসলমান ও মুনাফেক চিহ্নিত হয়ে যায়। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যখন রবের ডাকে সাড়া দেয়নি তখনই তার আসল রূপ ফুটে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর অবাধ্য বান্দা।

এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর যে প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মোটেই মুখাপেক্ষী নন।’ পৃথিবীতে মুসলমানদের সংখ্যা কত ও ক্ষমতা কেমন, কোন প্রান্তের মুসলমানরা কেমন আছে। সরাসরি এসব বিষয় অবগত হওয়া।

হজের এই বিশাল সম্মিলনে মুসলমানদের জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক উন্মুুক্ত পাঠশালা, যা বর্তমান সময়ের চেয়ে পূর্ববর্তীদের মাঝে বেশি পরিলক্ষিত হয়। নিজেদের মাঝে মতামত আদান-প্রদান, নবআবিষ্কৃত মাসয়ালার সমাধান এসব বিষয় নিয়ে জ্ঞানীদের এক দৃষ্টিনন্দন সম্মিলন ঘটত। কোন জায়গার ওলামাদের কী বৈশিষ্ট্য এসব বিষয়ে সহজেই অবগত হওয়া। (হুজ্জাতুল্লালি বালিগাহ)

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা-১২৩০


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us