মুত্তাকিদের জন্য রবের পুরস্কার

ফাতিমা আজিজা | Aug 23, 2020 05:42 pm
মুত্তাকিদের জন্য রবের পুরস্কার

মুত্তাকিদের জন্য রবের পুরস্কার - ছবি : সংগ্রহ

 

যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনে সদা সতর্ক, যাদের অন্তরে আল্লাহভীতি কাজ করে তারাই মুত্তাকি বা তাকওয়াবান। আর তারাই রবের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত হয়ে থাকেন। মহান রাব্বুল আল-আমিন তাঁর তাকওয়াবান বান্দাহদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষ কিছু নিয়ামত দান করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম কিছু নিয়ামত নিয়ে নিচের আলোচনা।

সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারার ক্ষমতা
আল্লাহ্ মুত্তাকিদের জন্য বিশেষ একটি পুরস্কার প্রদান করেন; আর তা হচ্ছে মুত্তাকিরা দুনিয়াতে জীবন পরিচালনায় হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝতে পারেন। আর সে অনুসারেই ভালো ও মন্দ কাজের প্রচার-প্রসার করে থাকেন। আর অন্যদেরও সে পথ বাতলে দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো তবে তিনি তোমাদের ফুরকান তথা ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহ্ মহাকল্যাণের অধিকারী।’ (সূরা আল-আনফাল : ২৯)
এখানে বলা হয়েছে যে, যারা বিবেককে স্বভাবের ওপর প্রবল রেখে ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্যকে দুনিয়াবি সব বিষয়ের ওপর স্থান দেবে বা তাকওয়া অবলম্বন করবে তারা কয়েকটি প্রতিদান লাভ করবে।

এক. ফুরকান, দুই. পাপ মোচন, তিন.পরিত্রাণ।
কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে ফুরকান বলতে সে সব আলো বা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বলা হয়েছে যার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা সহজ হয়ে যায়। অর্থাৎ, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের ভালো মন্দ বুঝতে পারার জ্ঞান দান করেন। ইমাম মালেকের মতে, এখানে ফুরকান হচ্ছে উত্তরণের পথ। সূরা আত-তালাকে বলা হয়েছে, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য ‘উত্তরণের’ পথ করে দেবেন।

দ্বিতীয়ত, তাকওয়ার বিনিময়ে যা লাভ হয়, তা হলো পাপের মোচন। অর্থাৎ পার্থিব জীবনে মানুষের দ্বারা যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে যায়, দুনিয়াতে সেগুলোর কাফ্ফারা ও বদলার ব্যবস্থা করা হয়। সৎকর্মসমূহের পরিমাণ পাপের চেয়েও অধিক হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, মাগফিরাত বা পরিত্রাণ। তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আখিরাতের মুক্তি ও যাবতীয় পাপের ক্ষমা লাভ হয়। এখানে পাপ মোচন দ্বারা ছোট গুনাহের ক্ষমা এবং মাগফিরাতের দ্বারা বড় গুনাহের ক্ষমা বুঝায়।

পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্ ঈমানদার ও তাকওয়াবানদের জন্য অফুরন্ত নিয়ামত জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। যে জান্নাত হবে চিরস্থায়ী এবং অশেষ নিয়ামতে ভরপুর। আল্লাহ বলেন, ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার উপমা হচ্ছে- এর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তার ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী। যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এটা তাদের প্রতিফল আর কাফিরদের প্রতিফল আগুন।’ (সূরা আর-রা’দ : ৩৫)

এক হাদিসে এসেছে রাসূল সা: সূর্য গ্রহণের সালাত আদায়ের সময় এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা নিতে যাচ্ছিলেন তারপর আবার ফিরে এলেন। পরে সাহাবায়ে কেরাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূল সা: বললেন, ‘আমি জান্নাত দেখেছি, তার থেকে আঙ্গুরের একটি থোকা নিতে চাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তবে যত দিন দুনিয়া থাকত তত দিন তোমরা তা খেতে পারতে।’(বুখারি : ১০৫২)
আর জান্নাতের ছায়ার ব্যাপারে আয়াতে বলা হয়েছে যে, তার ছায়াও চিরস্থায়ী। কুরআনের আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে।’ (সূরা ইয়াসিন : ৫৬)
মহান রাব্বুল আল-আমিন আরো পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র স্ত্রী থাকবে এবং তাদের চিরস্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করাব।’ (সূরা আন-নিসা : ৫৭)

হাদিসে এসেছে, নবী সা: বলেছেন, জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে, যার ছায়ায় কোনো আরোহী শত বছর পর্যন্ত চললেও তা অতিক্রম করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩২৫১)
আর্থিক সঙ্কটের অবসান এবং নাটকীয় রিজিক যারা আল্লাহর ওপর রিজিকের জন্য পূর্ণ আস্থাশীল হবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ্ তাদের উত্তরণের পথ করে দেবেন এবং নাটকীয়ভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন বলেন, ‘এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিজিক। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ্ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সূরা আত-তালাক : ০৩)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ্ তায়ালার ওপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেয়া হতো। এরা সকাল বেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (সহিহ, ইবনু মাজাহ : ৪১৬৪)
তাকওয়াবান ধৈর্যশীলদের জন্য শুভ পরিণতি যারা ধৈর্যের মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের আল্লাহ্ এমন পরিণতি দেন যা উত্তম ও কল্যাণকর। তাদের পুরস্কার কখনো বিনষ্ট হয় না। আল্লাহ বলেন, ‘বাস্তব বিষয় এই যে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, আল্লাহ্ এমন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।’ (সূরা ইউসুফ : ৯০)

মহান রাব্বুল আল-আমিন পুরস্কারস্বরূপ আরো প্রদান করেন উত্তম শেষ পরিণতি। তিনি বলেন, ‘এসব গায়েবের সংবাদ আমরা আপনাকে ওহি দ্বারা অবহিত করছি, যা এর আগে আপনি জানতেন না। কাজেই আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই শুভ পরিণাম মুত্তাকিদেরই জন্য।’ (সূরা হুদ : ৪৯)
অর্থাৎ সব বিষয়ের কল্যাণকর পরিণাম তো যারা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, তাঁর ফরজকৃত বিষয়সমূহ আদায় করে, অবাধ্যতা পরিত্যাগ করে তাদেরই জন্য। তারাই আখিরাতে যাবতীয় নিয়ামত পেয়ে সফল হবে। দুনিয়াতেও তারা তাদের চাওয়া বিষয়াদি লাভ করবে। যেভাবে শেষ পর্যন্ত নূহ ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা আল্লাহর নির্দেশ মানার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণ করে দুনিয়াতে সফলতা লাভ করেছিলেন এবং ধ্বংস থেকে নাজাত পেয়েছিলেন। আখিরাতে আল্লাহ তাদের যা দেয়ার দিলেন এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিলেন। আর যারা মিথ্যারোপ করেছিল তাদের ডুবিয়ে ছিলেন এবং তাদের সবাইকে ধ্বংস করেছিলেন। (তাবারি)

অফুরন্ত নিয়ামতের আশায় আমরা যেন মুত্তাকিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, অন্তরে গেঁথে নিতে পারি আল্লাহর ভয়। যে ভয়ে আমাদের অন্তর হবে প্রকম্পিত ও খণ্ডবিখণ্ড। আর বিনিময়ে পেতে পারি অফুরন্ত নিয়ামতের জান্নাত।

লেখিকা : কবি, সাহিত্যিক ও ইসলামী গবেষক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us