হিংসা একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি

যোবায়ের বিন জাহিদ | Aug 26, 2020 03:28 pm
হিংসা একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি

হিংসা একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি - ছবি : সংগ্রহ

 

হিংসা মানুষের একটি আত্মিক ব্যাধি। আত্মার যে ব্যাধিগুলো মানুষের ঈমানি শক্তিকে দুর্বল করে মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় হিংসা তার অন্যতম। হিংসা শুধু ব্যক্তিকেই নয়, বরং পাড়া প্রতিবেশীসহ পুরো সমাজ ও জাতিকে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির আগুনে নিক্ষেপ করে। আজ সমাজে যত মারামারি, হানাহানি, খুন-খারাবি, হত্যা ও গুম হচ্ছে তার বেশির ভাগই হচ্ছে হিংসার কারণে। তাই প্রিয় নবী সা: হিংসা পরিহার করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করো। কেননা, হিংসা নেক আমলগুলোকে এমনভাবে গ্রাস করে নেয় যেমনভাবে আগুন লাকড়িকে গ্রাস করে নেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ হাদিস : ৪৯০৩)

আখিরাতে মানুষের অনেক বড় সম্বল হবে নেক আমল। যাদের নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে তারা হবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ হিংসা মানুষের এই মূল্যবান নেক আমলগুলো নিঃশেষ করে দেয়।

আরেক হাদিসে এসেছে, হিংসা মানুষের দ্বীনকেই বিনাশ করে দেয়। হজরত জোবায়ের ইবনে আওয়াম রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্বের উম্মতদের রোগ হিংসা-বিদ্বেষ তোমাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। আর এই রোগ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলছি না যে, তা চুল মুণ্ডন করে দেয়; বরং তা দ্বীনকে মুণ্ডন করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস-২৫১০)

পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে এই রোগ খুব প্রকট আকারে ছিল। আর এ রোগের কারণে তারা ধ্বংসও হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের এই রোগের নিন্দা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নাকি তারা এ কারণে মানুষের প্রতি হিংসা করে যে, তিনি তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ দান করেছেন। আমি তো ইবরাহিমের বংশধরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছিলাম এবং তাদের বিরাট রাজত্ব দিয়েছিলাম।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৫৪)

আরেক আয়াতে বলেছেন, ‘কিতাবিদের অনেকেই তাদের কাছে সত্য পরিস্ফূট হওয়ার পরও তাদের অন্তরের হিংসাবশত কামনা করে, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর পুনরায় কাফির বানিয়ে দিতে পারত। তোমরা ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ ফায়সালা পাঠিয়ে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১০৯)
হিংসুক এতটাই নিন্দিত যে আল্লাহ তায়ালা তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার কথা বলেছেন। লাবিদ ইবনে আসাম নামক এক ইহুদি রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি হিংসাবশত জাদু করলে আল্লাহ তায়ালা সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাজিল করেন এবং এ সূরা দুটির আয়াতগুলোর মাধ্যমে প্রিয় নবী সা:কে আল্লাহর কাছে তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার আদেশ করেছেন। সূরা ফালাকের সর্বশেষ আয়াতে ‘আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।’

তাই কোনো মুমিনের মাঝে হিংসার ব্যাধি থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হয় না। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস-৩১০৯)

আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ করো না, তোমরা সবাই আল্লহর বান্দাহ, ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৬০৬৫)

তাই আমাদের বর্তমান সমাজে ঝগড়া-বিবাদ থেকে শুরু করে মারামারি, হানাহানিসহ সব ধরনের বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রিয় নবী সা:-এর নির্দেশনা মোতাবেক হিংসা-বিদ্বেষ এবং একে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ পরিহার করে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে চলার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হিংসা পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক, মাদরাসা রায়হানুল উলুম,
মিরপুর, ঢাকা

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us