বিয়ে সম্পর্কে যা বলে ইসলাম

মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী | Dec 17, 2020 05:05 pm
বিয়ে সম্পর্কে যা বলে ইসলাম

বিয়ে সম্পর্কে যা বলে ইসলাম - ছবি সংগৃহীত

 

বিয়ে সব নবীর সুন্নত। পৃথিবীর সব ধর্ম ও জাতির মধ্যে নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির আলোকে বিয়ে প্রচলিত রয়েছে। হাদিসে বিয়েকে ঈমানের অর্ধেক আখ্যায়িত করা হয়েছে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বিয়ের ভূমিকা ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। একজন যৌবনদীপ্ত মানুষ বিয়ে-শাদির মাধ্যমে তার জৈবিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়। এ ক্ষেত্রে পুরুষ-নারী উভয়েই সমান। একটি আদর্শ দম্পতিই একটি আদর্শ পরিবার নির্মাণ করতে পারে। আদর্শ পরিবার ছাড়া আদর্শ সমাজ সৃষ্টি করা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং আদর্শ পরিবার ও সমাজ গড়ার ভিত্তিপ্রস্তর হচ্ছে আদর্শ দম্পতি।

মনে রাখতে হবে, সমাজকে আদর্শ দম্পতি যত বেশি পরিমাণে উপহার দেয়া যাবে; সমাজ আদর্শ পরিবার, আদর্শ সন্তান ও আদর্শ প্রজন্ম তত বেশি আমাদেরও ফিরিয়ে দেবে। এ জন্য অপরিহার্য হচ্ছে- মা-বাবা এবং অভিভাবকের দায়িত্ব সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলোকে গড়ে তোলা। সুশিক্ষা ও নীতি-নৈতিকতার ওপর পরিচালনা করা। সন্তানদের জীবনের প্রতিটি ধাপে সঠিক দিকনির্দেশনা ও দীক্ষাদান করা। তাদের সামগ্রিক চলাফেরা, আচার-আচরণ, বন্ধু নির্বাচন এবং শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের যাবতীয় বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করা এবং সব প্রকার অশুভ, অকল্যাণকর ও মন্দ বিষয়াদি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা।

আদর্শ দম্পতি সৃষ্টি করার জন্য আরেকটি আবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে, বিয়েকে সহজ করা। সন্তানের বিয়ের বয়স হলে দেরি না করে বিয়ে সম্পন্ন করে দেয়া। আমাদের সমাজে বিলম্বিত বিয়ে মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়ের বয়স হওয়ার পরও অকারণে কিংবা বিভিন্ন অজুহাতে, যেমন- উচ্চশিক্ষা, ভালো চাকরি, উচ্চাকাক্সক্ষার পাত্র-পাত্রী ইত্যাদি কারণে সন্তান সন্ততির বিয়েতে অনেক কালক্ষেপণ করতে দেখা যায়। আনুপাতিক হারে বেশির ভাগ পরিবারেই এটি পরিলক্ষিত হয়। অথচ তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখানে ব্যাখ্যার কোনো প্রয়োজন নেই, উপযুক্ত সন্তান-সন্ততিকে যত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া যাবে সব দিক থেকেই তারা এবং জাতি তত বেশি উপকৃত হবে। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত এর প্রভাব ও ফলাফল তারা উপভোগ করতে সক্ষম হবে। উপযুক্ত বয়সে বিয়ে সম্পন্ন করে না দেয়াতে কী পরিমাণ ক্ষতি- তা আমাদের সমাজের চিত্র থেকে দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সা:- এর সাথে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোনো কিছু ছিল না। এ অবস্থায় আমাদের রাসূলুল্লাহ সা: বলেন- ওহে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা বিয়ে করে নেবে। কারণ, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান সুরক্ষা করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।’ (বুখারি : ৫০৬৬)

হাদিসে ‘যুব সম্প্রদায়’ কাদের বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে ইমাম নববি রহ: লিখেছেন, ‘যুবক-যুবতী বলতে তাদের বোঝানো হয়েছে যারা পূর্ণ বয়স্ক হয়েছে এবং ৩০ বছর বয়স পার হয়ে যায়নি।’

আর এ যুবক-যুবতীদের বিয়ের জন্য রাসূল সা: তাকিদ করলেন কেন, তার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি রহ: তার বিশ্ববিখ্যাত বুখারির ভাষ্যগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হাদিসে কেবল যুবক-যুবতীদের বিয়ে করতে বলার কারণ এই যে, বুড়োদের অপেক্ষা এ বয়সের লোকদের মধ্যেই বিয়ে করার প্রবণতা ও দাবি অনেক বেশি বর্তমান দেখা যায়। যুবক-যুবতীদের বিয়ে যৌন সম্ভোগের পক্ষে খুবই স্বাদপূর্ণ হয়। মুখের গন্ধ খুবই মিষ্টি হয়, দাম্পত্য জীবন যাপন খুবই সুখকর হয়, পারস্পরিক কথাবার্তা খুবই আনন্দদায়ক হয়, দেখতে খুবই সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, স্পর্শ খুব আরামদায়ক হয় এবং স্বামী বা স্ত্রী তার জুড়ির চরিত্রে এমন কতকগুলো গুণ সৃষ্টি করতে পারে যা খুবই পছন্দনীয় হয়, আর এ বয়সের দাম্পত্য ব্যাপার প্রায়ই গোপন রাখা ভালো লাগে। যুবক বয়স যেহেতু যৌন সম্ভোগের জন্য মানুষকে উন্মুখ করে দেয়। এ কারণে তার দৃষ্টি যেকোনো মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে এবং সে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় পড়ে যেতে পারে। এ জন্য রাসূল সা: এ বয়সের ছেলেমেয়েকে বিয়ে করতে তাকিদ করেছেন এবং বলেছেন- ‘বিয়ে করলে চোখ যৌন সুখের সন্ধানে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে না এবং বাহ্যত তার কোনো ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।’

দেখুন, উপর্যুক্ত হাদিসে রাসূল সা: যাদেরকে বিয়ে-শাদির ওপর উৎসাহ দিয়েছেন, তারা হচ্ছে যুবক-যুবতী। আবার বর্ণনাকারীর ভাষ্যমতে, তারা দরিদ্রও ছিলেন বটে। সুতরাং হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, বিয়ের সবচেয়ে উপযোগী সময় হচ্ছে উপযুক্ত বয়স। তথা যৌবনের সূচনাকাল। মোদ্দাকথা, ছেলেমেয়ের বিয়ের বয়স হওয়া মাত্র তাদের বিয়ে সম্পন্ন করে দেয়াই হাদিসের মর্মকথা। আরেকটু খুলে বললে, হাদিসের দাবি ও শিক্ষা হচ্ছে- বিয়েকে সহজ করা এবং নানা অজুহাতে বিয়েকে বিলম্বিত না করা। প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিয়েকে সহজ করা হলে এবং বিলম্বিত না করা হলে যুবক-যুবতীদের বিপথগামী হওয়া অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। সমাজ অনৈতিকতা ও চরিত্রহীনতার ভয়াল থাবা থেকে ধীরে ধীরে পরিত্রাণ পাবে। সর্বোপরি, আদর্শ দম্পতির চাহিদাও অনেকটা পূরণ হবে। ফলে আদর্শ পরিবার, আদর্শ সন্তান, আদর্শ প্রজন্ম, আদর্শ জাতি বিনির্মাণ শুরু হবে ইনশা আল্লাহ।

লেখক : সহকারী শিক্ষক, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, সিলেট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us