পরিবেশ দূষণ ও ইসলাম

নাসিম ইমরান | Sep 08, 2022 04:23 pm
পরিবেশ দূষণ ও ইসলাম

পরিবেশ দূষণ ও ইসলাম - ছবি : সংগ্রহ

 

ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশের উপাদানগুলো যুক্ত হওয়ার দ্বারা পরিবেশের রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা পরিবেশগত ভারসাম্য ধ্বংস করে তাকে পরিবেশ দূষণ বলে।

পরিবেশ দূষণ মানুষের জীবন-মৃত্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। পরিবেশ দূষণ জৈবিক বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে, তাই এটি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক একটি সমস্যা। আদিকাল থেকেই পরিবেশ মানুষের মাধ্যমে দূষিত হয়ে আসছে। তবে এ সমস্যা তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে আঠারো শতকের শিল্প বিপ্লবের সূচনা থেকে। ঊনিশ শতকের ষাটের দশকে এসে দেখা গেল, পরিবেশ দূষণ কেবল সমস্যা নয়। এটি মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে পৃথিবী আজ বিপন্ন।

পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ মানুষের কাজ-কর্ম বা মানুষের বিশৃঙ্খলা। আধুনিক ব্যবস্থা শুধু মানুষের বস্তুজাগতিক বিশৃঙ্খলা নিয়েই কথা বলে, কিন্তু ইসলাম বস্তুজাগতিক বিশৃঙ্খলার সাথে আত্মিক বিশৃঙ্খলা নিয়েও কথা বলে। এই বিশৃঙ্খলার ফলে ঘটে পরিবেশ বিপর্যয়।

বিপর্যয় শব্দটির আরবি প্রতিশব্দ فساد (ফাসাদ), আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যার অর্থ- বিকৃতি, ভ্রান্তি, পচন, দুর্নীতি ইত্যাদি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফাসাদ শব্দ দ্বারা মানুষের নৈতিক আচরণগত ত্রুটি বিচ্যুতি, খারাপ কাজ, নিকৃষ্ট অভ্যাস অথবা আল্লাহর সৃষ্টি জগতে মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট বিপর্যয়কে বোঝানো হয়। পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে ফাসাদ শব্দ এসেছে, যাতে ভূ-পৃষ্ঠে মানব সৃষ্ট বিপর্যয়কে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, 'পৃথিবীতে শান্তি স্থাপিত হওয়ার পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না, তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকলে এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর।'
(সুরা আরাফ, আয়াত : ৮৫)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
'জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃত-কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।'
(সুরা রোম, আয়াত : ৪১)

উক্ত আয়াতে 'ফাসাদ' শব্দের ব্যাখ্যায় তাফসীরবিদদের মতপার্থক্য রয়েছে। তাফসীরে রূহুল মা'আনীতে বলা হয়েছে, বিপর্যয় (ফাসাদ) বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, শিকার (খাদ্যের) ঘাটতি, সবকিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কমে যাওয়া, ক্ষতি বেশি হওয়া ইত্যাদি আপদ বোঝানো হয়েছে।

পবিত্র কুরআনের ফাসাদ শব্দ দ্বারা আধুনিক বিশ্বের পরিবেশ দূষণ তথা ইকোসিস্টেমের বিপর্যয় বোঝানো যেতে পারে। কারণ পরিবেশগত পরিবর্তন যা মানব জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে তার সাথে পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ফাসাদ এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম

পরিবেশ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যা জীবনের সকল পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে। পরিবেশের রয়েছে মহান স্রষ্টা এবং মহাপ্রজ্ঞাবান পরিচালক আল্লাহ প্রবর্তিত একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। আল্লাহ বলেন,
'এটা আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর কীর্তি, যিনি প্রতিটি জিনিস সুষম করেছেন।'
(সুরা নমল, আয়াত : ৮৮)

ইসলাম কল্যাণমুখী এক জীবনব্যবস্থা। এতে মানুষের পরিবেশকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
'তোমরা কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন।'
(সুরা লোকমান, আয়াত : ২০)

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
'তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।'
(সুরা বাকারা, আয়াত : ২৯)

আল্লাহ ভূমিকে মানুষের কল্যাণে কীভাবে নিয়োজিত করেছেন তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
'তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে।'
(সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৩৩)

বৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
'যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।'
(সুরা বাকারা, আয়াত : ২২)

পরিবেশ ধ্বংসকে পবিত্র কুরআন 'বিশৃঙ্খলা' হিসেবে এবং অধুনা বিজ্ঞান 'দূষণ' নামে অভিহিত করেছে। পরিবেশের শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং পৃথিবীর জীবনকে অসম্ভব ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এমন যেকোনো অনাচারের বিরুদ্ধেই ইসলাম সোচ্চার। তা রোধে ইসলাম নানা উপায় ও বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার প্রবর্তন করেছে।

লেখক : গবেষণা বিভাগ, সেন্টার ফর ইসলামিক থট এ্যান্ড স্টাডিজ
nasimuzzamanimran@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us