ইয়াওমে আশুরা : স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দ্বীপ্ত শপথের দিন

ডক্টর মোহাম্মদ ইদ্রিস | Aug 04, 2022 01:53 pm
ইয়াওমে আশুরা : স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দ্বীপ্ত শপথের দিন

ইয়াওমে আশুরা : স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দ্বীপ্ত শপথের দিন - ছবি : সংগ্রহ

 

আশুরা আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে দশম। মহান আল্লাহ রববুল আলামীন বছরের কিছু দিনকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আর বিশেষায়িত করেছেন বিভিন্ন ঘটনা ও ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। এমনি একটি দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ এই দিনটি। আল্লাহর নবী মুসা আলাইহিস সালাম ফিরআউন ও তার বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছিল এই দিনে। তাই এই দিনটি হচ্ছে শিরকের উপর তাওহিদের বিজয়ের দিন, তাগুতের উপর রিসালাতের পতাকাবাহীদের বিজয়ের সময় এবং মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা স্মরণে শুকরিয়া দিবস। এ দিনটি মুহাররমের দশ তারিখ হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয় আশুরা।

আশুরার ফজিলত
আশুরার দিন সিয়াম পালন করা উচিত। আশুরার সিয়াম ফেরআঊনের কবল থেকে নাজাতে মূসার আ. শুকরিয়া হিসাবে পালিত হয়। এই সিয়াম মূসা ও ঈসার শরীআতে চালু ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়াতেও আশূরার সিয়াম পালিত হত। দ্বিতীয় হিজরীতে রামাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সিয়াম সকল মুসলমানের জন্য পালিত নিয়মিত সিয়াম হিসাবে গণ্য হতো। রামাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পরে এই সিয়াম ঐচ্ছিক সিয়ামে পরিণত হয়। এই সিয়ামের ফজিলত হিসাবে বিগত এক বছরের গোনাহ মাফের কথা বলা হয়েছে। এত বেশি নেকি আরাফার দিনের নফল সিয়াম ব্যতীত অন্য কোন নফল সিয়ামে নেই। আশুরার সিয়াম সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করে ছিলেন, তখন মদিনার ইহুদীদেরকে আশুরার রোজা রাখতে দেখে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা আশুরার রোজা কেন রাখ? উত্তরে তারা বলল, এ দিনটা অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত, কেননা এই দিনে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলদেরকে তাদের শত্রু ফেরাউন হতে পরিত্রাণ দিয়ে ছিলেন। এ কারণে আমরা রোজার মাধ্যমে ঈদ বা খুশি পালন করি, যেন তার স্মরণ সব সময় বিদ্যমান থাকে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এর বিজয়ের দিন পালনে আমরা তোমাদের থেকে বেশি অধিকারী। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নিজে রোজা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। [সহিহ বুখারি, মুসলিম ও আবুদাউদ]

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, রামাযানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হল মুহাররম মাসের সিয়াম অর্থাৎ আশূরার সিয়াম এবং ফরয সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হল রাতের নফল সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত। [সহিহ মুসলিম]

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় হিজরত করে ইহুদিদেরকে আশুরার সিয়াম রাখতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এটি একটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ পাক মূসা আ. ও তাঁর কওমকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাআঊন ও তার লোকদের ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়া হিসাবে মূসা আ. এ দিন সিয়াম পালন করেছেন। অতএব আমরাও এ দিন সিয়াম পালন করি। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তোমাদের চাইতে আমরাই মূসা আ.-এর (আদর্শের) অধিক হকদার ও অধিক দাবিদার। অতঃপর তিনি সিয়াম রাখেন ও সকলকে রাখতে বলেন (যা পূর্ব থেকেই তাঁর রাখার অভ্যাস ছিল)। [সহীহ মুসলিম]

আশুরার সিয়ামের সাথে হোসাইন বিন আলী রা.-এর জন্ম বা মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই। হোসাইন রা.-এর জন্ম মদীনায় ৪র্থ হিজরীতে এবং শাহাদাত ইরাকের কূফা নগরীর নিকটবর্তী কারবালায় ৬১ হিজরিতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর ইন্তিকালের ৫০ বছর পরে হয়। [আল-ইছাবাহ আল-ইস্তিআব] মোটকথা আশূরায়ে মুহাররমে এক বা দুদিন নফল সিয়াম ব্যতীত আর কিছুই করার নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম যে আশুরা পালন করেছেন ও যে আশুরা পালন করতে উম্মতে মুহাম্মদীকে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে কারবালার ঘটনার কোনো ভূমিকা ছিল না। কারবালার এ দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রা., আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা., আব্দুল্লাহ ইবন আমর রা., আনাস ইবন মালেক রা., আবু সাঈদ খুদরী রা., জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রা., সাহল ইবন সায়াদ রা., যায়েদ ইবন আরকাম রা., সালামা ইবনুল আকওয়া রা.সহ বহুসংখ্যক সাহাবায়ে কিরাম জীবিত ছিলেন, তারা আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার কারণে কোনো কিছুর প্রচলন করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আশুরা পালন করেছেন তারা সেভাবেই তা অনুসরণ করেছেন। অতএব কারবালাকেন্দ্রিক যে আশুরা পালন করা হয়ে থাকে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীরা এভাবে পালন করেননি।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের স্মৃতি বিজড়িত ইসলামী হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররম। পবিত্র মাহে মুহাররমেই হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত আম্বিয়ায়ে কেরামদের অনেক বিস্ময়কর ঘটনা প্রবাহ সংঘটিত হয়েছে। এ মাসের ১০ তারিখ অনেক বরকত ও ফজিলত পূর্ণ দিন ইয়াওমে আশুরা। একই সাথে অন্যায় ও অসত্যের মুকাবিলায়, নমরুদ-ফিরআউনের মতো সকল যুগের জুলুমবাজ ও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মজলুম মানবতার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক পবিত্র মাহে মুহাররম ও আশুরা।

পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ্পাক চারটি মাসকে পরম সম্মানিত ও পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা জেনে রাখ এই চারটি মাস বড় ফজিলত ও বরকতপূর্ণ, তোমরা এই মাসগুলোতে পাপাচার করে নিজেদের উপর জুলুম করোনা।’ [সূরা আত-তওবা: ৩৬] উল্লেখিত চার মাস যথা- মুহাররম, রজব, জিলহজ্ব, জিলক্বদ। তন্মধ্যে অন্যতম পবিত্র মাস হলো মুহাররম। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হলো আল্লাহর মাস মুহাররম। অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে- জনৈক সাহাবী রাসূল সা.-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ কোনটি? উত্তরে ইরশাদ হয়েছে তাহাজ্জুদের নামাজ। সাহাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, রমজানের পর রোজার সর্বোত্তম মাস কোনটি? রাসূল সা. ইরশাদ করেন, রমজানের পর রোজার সর্বোত্তম মাস মাহে মুহাররম। [মুসলিম ও আবু দাউদ] বছরের সব মাস আল্লাহর হলেও মুহাররমকে আল্লাহ নিজের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম]

হযরত আলী রা.-কে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছেন, রমজানের পর এমন কোন মাস আছে যাতে আমাকে রোজা রাখার আদেশ দিবেন? তিনি বললেন, আমার উপস্থিতিতে ঠিক একই রকম প্রশ্ন জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর খেদমতে পেশ করেছিলেন। রাসুল সা. প্রতি উত্তরে ইরশাদ করেন, মাহে রমজানের পর যদি রোজা রাখতে চাও, তাহলে মুহাররম মাসে রেখো কেননা এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেই দিনে অন্যান্য জাতির তাওবা কবুল করবেন। [আত-তিরমিযী]
আশুরার ঘটনা প্রবাহ: ১০ মুহাররম ইয়াওমে আশুরা। এই দিনটি অত্যন্ত মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ। হজরত আদম আ.-এর জামানা থেকে উম্মতি মুহাম্মদী সা.-এর এই যুগ পর্যন্ত আশুরার মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারীর লেখক আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি রহ.-এর ভাষ্য অনুযায়ী ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং আল্লাহ তা‘য়ালা ওই দিন দশজন বিখ্যাত নবীকে সম্মান দান করেছেন বিধায় দিনটি আশুরার দিন হিসেবে খ্যাত।

হযরত ইকরামার র. বর্ণনামতে হযরত আদম আ. এর দোয়া আল্লাহ তা‘য়ালা ওই দিন কবুল করেছেন এবং ওই দিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং ঐ দিনই তিনি দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই দিন হযরত ইবরাহীম আ. জন্ম লাভ করেন। হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন। হযরত ইউসুফকে আ. কুপ থেকে বের করা হয়। হযরত নূহ আ.-এর কিস্তি মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি লাভ করে জুদী পর্বতে এসে অবতরণ করে। হযরত আইয়ুব আ. তার জটিল রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন। হযরত মুসা আ.-কে আল্লাহ তা‘য়ালা এই দিন ফেরআউনের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। নীলনদের বুকে তার জন্য রাস্তা করে দিয়েছেন এবং ফেরআউনের সৈন্যবাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছেন। হযরত দাউদ আ.-এর তাওবা কবুল হয় এবং ইয়াকুব আ.-কে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হযরত ঈসা আ. আল্লাহর অসীম কুদরতে পিতার ঔরশ ব্যতীত মাতৃগর্ভ হতে জন্মলাভ করেন এবং এই দিনই তাঁকে বনী ইসরাইল এর হাত থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ঐ দিন হযরত সুলাইমান আ. সাম্রাজ্যের রাজত্ব লাভ করেন। হযরত ইদ্রিস আ. জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করেন। এছাড়া নবী দৌহিত্র হজরত হোসাইন ইবনে আলী রা. তাঁর সাথী সহচরগণ ঐতিহাসিক কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। কারবালার এই মর্মান্তিক বিষাদপূর্ণ ঘটনা মুসলিম জাতির হৃদয়ে এক করুণ বেদনার ছাপ এঁকে দিয়েছে। (উমদাতুল কারী)

কারবালা ও আশুরা
ইমাম হোসাইন রা.-এর শাহাদাত মানব ইতিহাসে এক অসাধারণ ঘটনা। স্বৈরচারীরা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরকে নির্মমভাবে শহীদ করে এবং শিরোচ্ছেদ করে। আশুরায়ে মুহাররম আমাদের দেশে শোকের দিন হিসাবে পালিত হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে। সরকারী ছুটি ঘোষিত হয় ও সরকারীভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি পালিত হয়। কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ বা শাহাদতবরণ করলে তার জন্য মৃত্যুবার্ষিকী পালনের বিধান ইসলামে নেই। রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম কখনো কারো জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেননি। হোসাইন রা.-এর শাহাদত বরণের মর্মান্তিক ঘটনাটিও মুসলমানদের জন্য নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কিন্তু এর জন্য সেদিন শোক দিবস হিসাবে পালন করা শরি‘য়াত সম্মত নয়। আবার অসতর্কতাবশত মু‘আবিয়া রা.-কে কারবালার ঘটনার জন্য দায়ী করে গালমন্দ করাও ঠিক নয়। কেননা সাহাবিদেরকে গালমন্দ বড় গুনাহের কাজ।

আশুরার দিন রাস্তায় তাযিয়া বা শোক মিছিল করা হয়। মিথ্যা শোক প্রদর্শন করে বুক চাপড়ানো হয়, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। ‘হায় হোসেন’ ‘হায় হোসেন’ বলে মাতম করা হয়। রক্তের নামে লাল রং ছিটানো হয়। রাস্তা-ঘাট রং-বেরং সাজে সাজানো হয়। লাঠি-তীর-বলম নিয়ে যুদ্ধের মহড়া দেয়া হয়। হোসাইনের নামে কেক ও পাউরুটি বানিয়ে বরকতের পিঠা বলে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল মিছিল করে কারবালা যুদ্ধের মহড়া দেয়। কালো পোশাক পরিধান বা কালো ব্যাজ ধারণ করা হয় ইত্যাদি। এ ছাড়াও রেডিও-টিভি, পত্র-পত্রিকা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা আলোচনা করা হয়।

কিন্তু কেন? নবী দৌহিত্র হযরত হোসাইন ইবনে আলী রা. তাঁর সাথী সহচরগণ ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে ঐতিহাসিক কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন আমরা এর জবাব অনুসন্ধান করি না। তাঁদের অপরাধ শুধু এটাই যে, তাঁরা ইসলামি শাষণতন্ত্রের বদলে রাজতন্ত্রের স্বীকৃতি দেননি। ইমাম হোসাইন ইবনে আলী রা. ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে বিরাট পরিবর্তনের লক্ষণ অনুভব করছিলেন। ইসলামী খিলাফতের বদলে রাজতন্ত্র বা স্বৈরশাসন কায়েমের গতিরোধ করেছিলেন জীবন দিয়ে। অন্যায় ও অসত্যের মোকাবেলায় হক ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় হোসাইনি চেতনায় ও প্রেরণায় উজ্জ্বীবিত হওয়ার জন্য ইসলামী শাষণতন্ত্রের মূলভিত্তি ও উদ্দেশ্যাবলী এ দিনে মানুষের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। সাহিত্যের রঙ্গ-রস দিয়ে অথবা অতিবচন দিয়ে শুধু কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা নয়, এর শিক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরা আজ বড় প্রয়োজন।

প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে এই মাস, এই দিন আমাদের কাছে উপস্থিত হয়। জাতিকে বুঝাতে হবে এই দিন মসজিদে মহল্লায় মিলাদ পড়ে খিচুড়ী খাওয়ার দিন নয়, এই দিন মাতম করার দিন নয়। এই দিন আমাদের শিক্ষার দিন। এই দিন জানমাল ত্যাগের দিন। এই দিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দিন। এই দিন জালিম ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দ্বীপ্ত শপথের দিন। আশুরার দিনে সিয়াম পালন ও নিজের পাপ কাজের জন্য বিনয় সহকারে তাওবা ইস্তেগফার করা দরকার। কারণ এ দিনে তাওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশুরার মাহাত্ম ও মর্যাদা উপলব্ধি করে সমাজ ও পরিবারের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে, যাবতীয় কুসংস্কারমুক্ত, হক ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা দরকার। আসুন, আমরা অন্যায় ও অসত্যের মোকাবেলায় হক ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় হোসাইনি চেতনায় ও প্রেরণায় উজ্জ্বীবিত হই। আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল প্রকার শিরক-বিদ‘য়াত থেকে বেঁচে থেকে আশুরার ফজিলত পূর্ণ আমল করার তাওফীক দান করুক। আমিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সাঁথিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ সাঁথিয়া, পাবনা।
ই-মেইল: drmidris78@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us