‘হিজাবি কেক শিল্পী' নাদিয়ার ভারত বিজয়

ইমরান ইনামদার ও সোবিয়া ইনামদার | Mar 11, 2021 08:08 pm
‘হিজাবি কেক শিল্পী' নাদিয়ার ভারত বিজয়

‘হিজাবি কেক শিল্পী' নাদিয়ার ভারত বিজয় - ছবি : সংগৃহীত

 

ঘরটাই যেন বেকারি। গৃহস্থের আগোছালো ঘরে ঘুরে বেড়ায় নানা রকম ক্রিমের গন্ধ। ক্যানভাসের উপর তুলির এক একটা রঙিন টান যেমন– নাদিয়ার হাত যেন সেই তুলি। যা তৈরি করে ফেলে নানা স্বাদের কেক– চকোলেট থেকে কত কী। একসময়ের হোমমেকার গত তিন বছরে পরিণত হয়েছেন কেকমেকারে। গোয়ার পাঞ্জিমের বাসিন্দা নাদিয়া আসলামের নাম এখন এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে বেশ পরিচিত ‘হিজাবি কেক শিল্পী’হিসেবে। কেক থেকে চকোলেট নিমেষে তৈরি করে ফেলেন নাদিয়া। নাদিয়া হোম সায়েন্সে স্নাতক। তার শখ সেলাই করা ছিল। তিন সন্তানের মা হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার আবেগকে অনুসরণ করে এবং তার নিকটতমদের বিশেষ অনুষ্ঠানে বেকারি সামগ্রী প্রস্তুত করতে পছন্দ করেন।


পাম থেকে প্লেন ফ্রুট থেকে বাটার– আবার রেড ভেলভেট– ট্রাফল– ব্ল্যাক ফরেস্ট– নাদিয়া ঘরোয়া বেকারিতেই তৈরি করে ফেলেন একটার পর একটা নানা স্বাদের কেক। বাড়ির তৈরি ক্রিম– চকোলেট দিয়েই কেক বানান নাদিয়া। বিশেষত্ব ঠিক এইখানেই। নাদিয়ার হিজাবি টাটকা কেক পেতে রোজই অর্ডারের ঝড় বয়ে যায়। গোয়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে অর্ডার আসে রোজ। সবটাই একা সামাল দেন নাদিয়া। কেকের প্যাকেটিং থেকে ডেলিভারি একাই করেন। নাদিয়ার কথায়– ‘পরিচিতি বাড়াতে পরিশ্রম করতে ভয় পাই না– তাই কেকের ডেলিভারি একাই করি।’

প্রতিযোগিতার ময়দানে নাদিয়া নেমেছেন নিজের দক্ষতায়।

তরুণী কেক শিল্পী নাদিয়া আসলাম তিন সন্তানের মা হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার আবেগকে অনুসরণ করে এবং তার নিকটতমদের বিশেষ অনুষ্ঠানে বেকারি সামগ্রী প্রস্তুত করতে পছন্দ করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি তার আবেগকে মায়ের সহায়তায় ব্যবসায় পরিণত করতে পারেন। এরপর তিনি লোকদের কাছ থেকে কাস্টমাইজড অর্ডার গ্রহণ করতে শুরু করলেন এবং এখন শহরের অন্যতম সেরা কেক শিল্পী। নাদিয়া নিয়মিতভাবে নাদিয়ার মিষ্টির ব্যানারে কেক তৈরির ক্লাসও নেন। তিনি কয়েক ডজন মেয়েকে আত্মনির্ভর স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে বলতে গিয়ে নাদিয়া বলেন– হিজাবি মুসলিম মহিলারা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিবারকে সহায়তা করতে পারে। ব্যবসার ক্ষেত্রে আমার ধারণা এবং সৃজনশীলতা প্রদর্শনের জন্য আমার পরিবারের সমর্থন আমি পেয়েছি। নাদিয়া বলেন– আমরা ইসলামকে অনুশীলন এবং এর নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করে দিব্যি আমাদের পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারি।

নাদিয়ার মা তার সবচেয়ে বড় সমর্থক হওয়ার কারণটি হলো, তার মাও অনেক আগে থেকেই একজন বিউটিশিয়ান ছিলেন এবং বলা হয় যে একজন শিল্পী কেবল শিল্পের সংজ্ঞা বুঝতে পারে। সম্ভবত নাদিয়া তার মায়ের কাছ থেকে সৃজনশীলতা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর শিল্পও উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। তার কাজগুলিতে স্পষ্টভাবে তা দেখা যায়। পরিবারের কাজের সময় সহ্য করে তিনটি বাচ্চার যত্ন নেন কিন্তু বেকিং তার ঘুমকে বেশ কয়েকবার নষ্ট করে দেয়। পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার জন্য পুরো কেকের প্রস্তুতিতে ১৭ ঘণ্টা লাগে বলে তার বিশ্রামের সময় নেই। এ ছাড়াও যখন তিনি কর্পোরেট সেক্টর এবং গ্র্যান্ড পার্টিগুলির কাছ থেকে অর্ডার পেতে শুরু করলেন– তখন তা আরও পরিশ্রমের হয়ে উঠেছ। নিখুঁত নামক ট্র্যাকটিতে স্বাদ– সাজসজ্জা ও সৃজনশীলতা রাখা তার শিল্প ও তিনি এটিকে নিখুঁতভাবে পরিচালনা করেন। নাদিয়ার স্বামী রেহান শেখ নাদিয়ার সাফল্যের জন্য আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে– ইসলামি নির্দেশিকাগুলি অনুসরণ করার সময় কোনও মহিলা যদি তার কেরিয়ার অনুসরণ করেন তবে তা দোষের নয়। যোগ্যতা প্রমাণের জন্য স্বামীদের উচিত তাদের স্ত্রীদের সমর্থন করা উচিত।

স্বপ্ন কী? নাদিয়ার উত্তর– সব মহিলা যেন তার মতোই নিজের স্টার্ট আপ শুরু করেন। তাই– মহিলাদেরই কেক তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আগামীতেও আরও দিতে চান নাদিয়া। স্বপ্নও আছে ঈশান কোণে। নাদিয়ার স্বপ্ন– একদিন বেকারির অন্যতম ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে ‘হিজাবি কেক’। হয়তো বা নাহুমসের মতোই লাইন সামলাবে নাদিয়ার কনফেকসনারি।

সূত্র : পুবের কলম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us