হাদিয়া গ্রহণ কি জায়েজ?

উম্মু নুসায়ের | Mar 21, 2021 03:56 pm
হাদিয়া গ্রহণ কি জায়েজ?

হাদিয়া গ্রহণ কি জায়েজ? - ছবি সংগৃহীত

 

আজকাল বিভিন্ন দিবস পালন করার সুবাদে হাদিয়া বা উপহার দেয়ার প্রচলন অনেক বেড়ে গেছে। যদিও ইসলামে এসব দিবসের কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি এসব দিবসে উপহার দেয়ার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করাও শরিয়াহসম্মত নয়, যা অমুসলিমদের অনুসরণ করারই নামান্তর। অমুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার বর্তমান প্রজন্মকে এতটাই আকর্ষণ করে যে, তারা বিধর্মীদের এসব সংস্কৃতিতে নিজেদের আপডেট রাখতে গর্ববোধ করে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের অভাবে এ মুসলিম প্রজন্ম জানেই না ইসলামের অপার সৌন্দর্য, যা সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য। রাসূলুল্লাহ সা: বহু বছর আগেই হাদিয়া দিতে এবং নিতে উৎসাহিত করে গেছেন। তিনি নিজেও দিতেন এবং গ্রহণও করতেন সন্তুষ্টচিত্তে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো। এর দ্বারা তোমাদের অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যাবে’ (তিরমিজি-২১৩০)।

পরিপূর্ণ জীবনবিধান ইসলামে এমন কিছু নেই , যার জন্য কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া নেই। তেমনই গিফট আদান-প্রদানে রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের চমৎকার সব শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি উপহারকে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে অবহিত করেছেন- ‘তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও এতে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে’ (আল-আদাবুল মুফরাদ-৫৯৪)।

ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় হাদিয়া তা যতই ছোট বা স্বল্পমূল্যের হোক না কেন, তা তুচ্ছজ্ঞান না করতে এবং উপহারদাতাকে হেয় করে কোনো অযাচিত কমেন্ট না করতে। বুঝে না বুঝে আমরা অনেক সময়ই আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলি যা শিষ্টাচারবহির্ভূত। হতে পারে আপনার অধীনস্থ অসচ্ছল কেউ আপনাকে ভালোবেসে, তার সামর্থ্য অনুযায়ী কোনো হাদিয়া দিলো সেটা হয়তো খুবই সামান্য কিছু। এ ক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে এই হাদিয়া দেয়ার পেছনের আন্তরিকতাটাকেই বড় করে দেখা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে মুসলিম মহিলাগণ! কোনো মহিলা প্রতিবেশী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশীর প্রদত্ত হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে। এমনকি স্বল্প গোশতবিশিষ্ট বকরির হাড় হলেও’ (বুখারি-২৩৯৬)।

তবে এখানে লক্ষণীয় যে, গিফট দেয়ার পেছনে উদ্দেশ্য যদি থাকে কাউকে নিজের ফেভারে আনা বা নিজের কোনো কার্য হাসিল করা। সে ধরনের গিফট অবশ্যই বর্জনীয়। উপহার প্রসঙ্গ এলেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আসে তা হলো- গিফট কেমন হওয়া উচিত? এ ক্ষেত্রে ইসলামিক শিষ্টাচার হলো গিফটটা যেন প্রেজেন্টেবল হয়। গিফট গ্রহীতার মানমর্যাদা স্ট্যাটাসের ব্যাপারটা মাথায় রাখা উচিত। এমন কিছু দেয়া উচিত নয় যা উপহার গ্রহীতাকে বিব্রত করবে। অর্থাৎ আপনি নিজের জন্য যা পছন্দ করেন না এমন কিছু কাউকে দেয়াটা ইসলামিক শিষ্টাচারের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু আমরা এ কাজটা অনেক সময়ই করে থাকি। অথচ রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার নিজের জন্য যা পছন্দ করো, তা তোমার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো’ (বুখারি)।

আবার হয়তো আপনার কাছের কেউ যাকে কিছু উপহার দিতে চান। হয়তো আপনার হাতে সময় নেই হাদিয়া কেনার। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্যবহার্য জিনিস আপনি হাদিয়া দিতে পারেন। যদি তার সাথে আপনার সম্পর্কটা এমন হয়ে থাকে যে, সে কিছু মনে করবে না। সে ক্ষেত্রে শিষ্টাচার হলো আপনার প্রিয় এবং বেস্ট জিনিসটাই দেয়ার চেষ্টা করা। কারণ প্রিয় জিনিসই সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হয়। এমন কিছু দিতে যাবেন না যা তাকে বিব্রত করবে এবং আপনার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে তার মনে। এমন কিছু দেয়ার চেয়ে না দেয়াই উত্তম।
এ ছাড়া কেউ গিফট দিলে তাকে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানানো ও প্রতিদানে তাকেও কিছু দিতে রাসূলুল্লাহ সা: উৎসাহিত করেছেন, যা তিনি নিজেও করতেন। কিন্তু সামর্থ্য না থাকলে তার জন্য দোয়া করতে বলেছেন। এমনভাবে দোয়া করা যেন আপনি অনুভব করতে পারেন যে, আপনি প্রতিদান দিতে পেরেছেন। নিঃসন্দেহে প্রিয়জনদের দোয়াই সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার যে কারোর জন্যই।

এত এত উপলক্ষের সুবাদে গিফট দেয়ার মাধ্যমে দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণ করাটাই মুখ্য হয়ে গেছে এখন। কিন্তু মুসলিমরা শরিয়াহসম্মত দিবস বা অন্যান্য যেকোনো সময় হাদিয়া আদান-প্রদান করবে যার উদ্দেশ্য হবে অনেক বড় স্বার্থ- আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুন্নাহ পালনের মাধ্যমে নেকি অর্জন। সর্বোপরি রাসূল সা: যে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য আমাদের গিফট দিতে উৎসাহিত করেছেন- মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন ও ভালোবাসা সুদৃঢ় করা, তার বাস্তবায়ন। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে হাদিয়া আদান-প্রদানে ইসলামী শিষ্টাচারগুলো মেনে চলা, যাতে করে এই সুন্দর প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারি।

লেখিকা : ইসলামী গবেষক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us