রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মাস

রহমান মৃধা | Apr 14, 2021 01:12 pm
রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মাস

রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মাস - ছবি : সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের মতো সারাবিশ্বে রমজান মাস শুরু হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের আগমন উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বের সব মুসলিম ভাইবোনকে রমজান মোবারক জানাতে শুরু করেছেন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান।

রমজান মাস ধর্মীয়ভাবে বিশ্লেষণ করলে বলতে হবে রোজা ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূলভিত্তির তৃতীয় স্তম্ভ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সঙ্গে যাবতীয় ভোগবিলাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ, যার অর্থ অবশ্য পালন করতে হবে। 'হে যারা ঈমান এনেছো তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা তাক্ওয়া অবলম্বন করতে পারো (সুরা বাকারা : ১৮৩)।

হযরত আদম আ. যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাওবাহ করেছিলেন তখন ৩০ দিন পর তার তাওবাহ কবুল হয়। তারপর তার সন্তানদের ওপরে ৩০টি রোজা ফরজ করে দেয়া হয়। নুহ আ.-এর যুগেও রোজা ছিল।

কারণ, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন : হযরত নুহ আ. ১ শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন। হযরত ইবরাহিমের যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন। হযরত দাউদ আ.-এর যুগেও রোজার প্রচলন ছিল। ইহুদিদের মাঝেও রোজা রাখা ছিল আল্লাহ'র আদেশ। মোসিহ তুর পাহাড়ে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ক্ষুৎ-পিপাসার ভিতর দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। মোসির অনুসারীদের মাঝে চল্লিশ রোজা রাখাকে উত্তম বলে বিবেচনা করা হতো। যিশুও চল্লিশ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছেন। মানব জাতির সৃষ্টির শুরু থেকে রোজার নির্দেশ রয়েছে। বাংলাদেশে এ মাসের গুরুত্ব বেশ জোরালো করতে সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্ন স্তরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়ের লোকের মুখে শোনা যাচ্ছে ভেজালের ওপর নানা কথা।

কেউ কেউ বলছেন, জিনিসপত্রে ভেজাল দিলে জেল জরিমানা থেকে শুরু করে ফাঁসির কাঠগড়ায় পাঠানোর আইন পাস করতে হবে। আমি বেশ অবাক হয়েছি জেনে যে শুধু রোজার মাসে ভেজাল নিয়ে কথা হচ্ছে। তাহলে কি আমরা আমাদের চিন্তাচেতনায় শুধু রোজার মাসে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী? শুধু রমজান মাস ছাড়া ভেজাল, ঘুষ দেয়া নেয়া বা দুর্নীতি করা চলবে কি তাহলে? কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত- এ পাঁচটি বিষয় মেনে চলা ইসলাম ধর্মের পরিকাঠামো এবং তা মেনে চলতে হবে বারো মাস।

সুইডেন বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর জন্য এবারের রমজান মাস বেশ কঠিন একটি সময় হবে। এ সময় দিন বড় হতে শুরু করেছে। সূর্যোদয় হচ্ছে এখন রাত ৫টার দিকে, আবার সূর্যাস্ত হচ্ছে রাত ৮টার দিকে। যেহেতু সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ওপর রোজার বেস্ট প্রাক্টিস নির্ভর করছে, সেক্ষেত্রে এখানে রোজা রাখতে হবে ১৫-১৮ ঘন্টা প্রতিদিন (নির্ভর করছে কে কোন অঞ্চলে বসবাস করছে)।

বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ মুসলমান বিধায় এ নয় যে বাকি ১৫ ভাগ তাদের ধর্ম পালন করছে না। সুইডেন বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে বেশিরভাগ অমুসলিমের বাস তার অর্থ এই নয় যে এখানে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী লোক নেই। বা তারা নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত দেয় না বা পালন করে না। কিন্তু যখনই কিছু লেখা হয় ইউরোপ থেকে অনেকের ধারণা এখানে ইসলামের কোনো বেস্ট প্রাক্টিস নেই।

এ ধরনের চিন্তার মানুষের অবগতির জন্য শুধু বলতে চাই, সংখ্যালঘু হলেও এখানে মসজিদ, মন্দির, গির্জা সবই রয়েছে। এখানেও সবাই যার যার ধর্মের প্রাক্টিস করছে। যারা ভৌগোলিক বন্ধন ছেড়ে এখানে এসেছে, তাদের এখানে আসার পেছনে যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। যেমন কেউ এসেছেন শিক্ষার জন্য, কেউ চাকরির জন্য, কেউ নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার কারণে এবং কেউবা এসেছেন অন্য কোনো কারণে।

আশা করি সবাই বিষয়টি মাথায় রেখে মন্তব্য করবেন। Better to be a stupid than to be a nonsense! মানবজাতির শ্রেষ্ঠ পাওয়া আল্লাহপাক রাব্বুল আল আমিনের থেকে তা হলো আমাদের বিবেক ও জ্ঞান। তা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করি বা যদি উদ্দেশ্যের সঙ্গে কারণ সংযুক্ত না করি তবে বিফল হবে সাধনা। কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব এবং যাকাত এগুলো একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ভেজাল, দুর্নীতি বা ধর্ষণ এসব ব্যক্তিগত ব্যাপার না। যারা ভেজাল দিচ্ছে, ধর্ষণ বা দুর্নীতি করছে তারা ভালো করেই জানে এটা অন্যায়।

জেনে শুনে এ ধরনের অন্যায় যারা করছে তারা মানুষের মাঝে দানব হয়ে বসবাস করছে। এরা ভালো মন্দের পার্থক্য ভুলে সমাজকে ধ্বংস করছে। এদেরকে শনাক্ত করতে হবে এবং দরকারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এরা মানসিকভাবে অসুস্থ।

এসব অসুস্থ দানবের কাছে রোজা, নামাজ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে এরা অন্যায় থেকে বিরত থাকত। কিন্তু এরা এখন পথভ্রষ্ট। যাদের মনে ও জ্ঞানে ভেজাল ঢুকেছে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ এবং তারা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। ভেজাল, দুর্নীতি বা ধর্ষণ এসব বিষয়ের প্রতি শুক্রবার মসজিদে আলোচনা হতে হবে।

সারাদেশে প্রত্যেকেরই প্রত্যেকের ওপর নজর রাখতে হবে যাতে কেউ পথভ্রষ্ট না হয়। প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে, কে কী করছে, কোথায় বা কার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে ইত্যাদি। ভেজাল, ধর্ষণ বা দুর্নীতি কোনো মাসেই হবে না, হলে সে অপরাধের জন্য কঠিন সাজা নির্ধারণ করতে হবে।

সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, জ্ঞান বা বিবেকের সমন্বয় না ঘটিয়ে যদি আমরা কিছু করি বা বলি তা স্বাভাবিকভাবে অসুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে যেমন ইউরোপ সম্পর্কে নিন্দা করা। অনুরোধ- Please use your brain before talking. Don’t talk nonsense. Behave yourself. Learn to forget and forgive, because Ramadan is for compassion, tolerance, love and understanding. Let us all cooperate for a safer, happier and prosperous Bangladesh Let us all live without fear, with dignity and tolerance and integrity! Let us all live in peace and love and with truth! Truth is beauty and love is power.

লেখক : সুইডেনপ্রবাসী; সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার rahman.mridha@gmail.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us