সুরন্জনা,ওইখানে যেয়োনাকো তুমি

সাদিয়া ইয়াসমিন | Apr 17, 2021 07:08 pm
জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ - ছবি : সংগৃহীত

 

সুরন্জনা,ওইখানে যেয়োনাকো তুমি,

বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরন্জনা:

নক্ষত্রের রুপালী আগুন ভরা রাতে;
চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিসার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তী কারুকার্য; অতি দূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়াছে দিশা।

অনেকে হয়তো বুঝতে পেরেছেন কার সম্পর্কে বলছি। তিনি রূপসী বাংলার কবি শ্রী জীবনানন্দ দাশ, যার জন্ম হয়েছিলো উনিশ শতকের সূচনালগ্নে ১৮৯৯ সালে, বরিশাল জেলায়। তার সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের মন্তব্য : 'একজন কমলালেবু' এক অনবদ্য রচনা। যেখানে লেখক খুব সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় জীবনানন্দের জীবনী ও তার সাহিত্যিক কার্যপটু সুনিপুণভাবে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন।

সে দিন ১৪ অক্টোবর, ১৯৫৪ ট্রামের ক্যাচারে আটকে যাওয়া আহত জীবনানন্দকে আনা হয় শম্ভুনাথ হাসপাতালে। এরপর আরো আট দিন এরপর আর তাকে ল্যান্সডাউন রোডের ১৮৩ নম্বর বাড়িতে দেখতে পাবো না।

জীবনানন্দ দাশের ডাকনাম মিলু।
মাতা: কুসুমকুমারী দাশ
বাবা: সত্যানন্দ দাশ
স্ত্রী : লাবণ্য দাশ
মেয়ে: মন্জুশ্রী দাশ
ছেলে:সমরান্দ দাশ
বোন:সুচরিতা
ভাই : অশোকান্দ

জীবনানন্দ এক সাহিত্যিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার পড়াশোনা এবং সাহিত্যের হাতেখড়ি হয়েছে মাতা কুসুমকুমারী হাতে, যিনি সকলের নিকট পরিচিত তার বরেণ্য বহুল পঠিত কবিতা 'আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।'

কবির স্কুল জীবনের সূচনা হয় ৫ম শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে, ছোটবেলা থেকেই কুসুমকুমারী চাইতেন, তার ছেলেটিও কথায় না বড় হয়ে কবে কাজে বড় হবে। তিনি ছোটবেলা থেকেই কবিকে সাহিত্যে অণুপ্রেরণা দিতেন মাঝেমাঝে জোর করতেন সাহিত্য চর্চা করার জন্য। কিন্তু সাহিত্যচর্চার পথ এতটুও সুখকর ছিল না। পদে পদে তিনি সমালোচনায় পড়েছেন তার সৃষ্ট সাহিত্য কর্মের জন্য, তার প্রথম কবিতা (ঝরাপালক) লেখেন ১৯১৯ সালে ২০ বছর বয়সে, প্রকাশিত হয় নিজ অর্থায়নে ১৯২৭ সালে। এছাড়া তার রয়েছে ২৫০০ কবিতা, ২০টি উপন্যাস, শতাধিক গল্প, ৫০টি প্রবন্ধ, ৪,০০০ লিটারেরি নোটস।

তার জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বেকার হিসেবে, চাকরি খুঁজতে হয়েছিলো জীবনের শেষকালেও। জীবনে দু'বার শিক্ষকতা করেছেন, করেছেন পত্রিকার সম্পাদনাও। কিন্তু বেশি দিন কাজ করতে পারেননি নানা প্রতিকূলতায়। চাকরি হারানোর চার বছর পরও যখন চাকরি পাচ্ছিলেন না তখন মনে মনে ভাবছিলেন

'I wish i would be bachelor again,Aghast when i think of the domestic life.'

সংসারে তার বিশেষ কোনো মনোযোগ ছিলো না, ছিলো না স্ত্রীরর সাথে কাটানো সুখকর স্মৃতি। সংসারে তার কৃতিত্ব ছিলো শুধু বাচ্চাদের পেন্সিল কেটে দেয়া। তার জীবনে একজন নারী চরিত্র থাকে, যাকে নিয়েই সাজিয়েছিলেন তার কল্পনারাজ্য, তিনি হলেন 'শোভনা।' তার চাচতো বোন।

জীবনানন্দ তার জীবনে সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনটি গুরুত্ববহ ঘটনাবলির কালের সাক্ষী ১৯১৪ সালের ১ম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৩৯ সালের ২য় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের।

তিনি কাব্য রচনার মাধ্যমে সক্রিয় থেকেছেন সকল আন্দোলনে। জীবিত থাকাকালীন তিনি যথাযথ কবি মর্যাদা লাভ করতে পারেননি। তার দিন কেটেছে ক্লায়কিষ্টে। তিনি নিররুপম যাত্রা গল্পে উল্লেখ করেছেন
'বিপদ এই যে, সামান্য দাঁড়ি কামাতে, একটা দেশলাই ব্যবহার করতেও যে সাহায্য দরকার সেই পয়সায় নেই।'

জীবনের শেষ প্রান্তে যখন সবাই কেবল তার প্রতিভার মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে ঠিক তখনি তাকে আমরা আবিষ্কার করবো ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে হাসপাতালের বেডে মৃতুকামী কবিকে যিনি ১১টা ৩৫ মিনিটে তার জীবনলীলা সাঙ্গ করেন।

তার এক কবিতায় তিনি লিখেছিলেন
'মানুষটা মরে গেলে যদি তাকে ওষুধের শিশি
কেউ দেয়- বিনি দামে-তবে কার লাভ-'

সবশেষে শূন্যে ভেসে রইল অমীমাংসিত সেই জিজ্ঞাসা, জীবনানন্দের মৃত্যু কি দুঘর্টনা? আত্মহত্যা? হত্যাকাণ্ড?

আমার মনে হয় এটা একটা দুর্ঘটনা, কারণ তিনি অনেকবার আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু,আবার ভাবতেন যত দিন বেঁচে থাকবেন তত দিন সাহিত্য চর্চা করবেন, সেদিন হয়তে কবি অন্যমনস্ক ছিলেন... সে জন্য দুর্ঘটনাবশত ট্রামের ক্যাচারে আটকে যান।

এখন পর্যন্ত ট্রামের ক্যাচারে আটকে যাওয়া প্রথম ও শেষ ব্যক্তি হলেন জীবনানন্দ দাশ।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us