নবাব আব্দুল লতিফের পিতার লেখা ‌'জামিউত তাওয়ারিখ' : পাঠপ্রতিক্রিয়া

হাসীবুল্লাহ সাবির | May 01, 2021 08:27 am
বইটি প্রথম ১৮৩৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। সেই প্রথম প্রকাশনারই চিত্রানুলিপি এটি

বইটি প্রথম ১৮৩৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। সেই প্রথম প্রকাশনারই চিত্রানুলিপি এটি - ছবি : সংগৃহীত

 

২০০৯ সালে চট্টগ্রাম অবস্থানের সময় জানতে পারি যে নবাব আব্দুল লতিফের পিতা কাজি ফকির মুহম্মদ (১৭৭৩-১৮৪৩)-এর একটি বই আছে। নাম 'জামিউত তাওয়ারিখ (সর্বজনীন ইতিহাস)।'

তখন থেকে বইটি পড়ার, অন্তত একটিবারের জন্য হলেও দেখার আগ্রহ লালন করে আসছিলাম। নিজের এলাকার লেখকের বই বোলে কথা।

২৮ এপ্রিল ২০২১ আমার জীবনে এমন একটি দিন- যে দিন কাঙ্ক্ষিত বইটি হাতে পেয়েছি। এ দিন গুগলবুক থেকে জামিউত তাওয়ারিখের পৃষ্ঠাগুলো পড়তে সক্ষম হই।
(বইটি প্রথম ১৮৩৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। সেই প্রথম প্রকাশনারই চিত্রানুলিপি এটি।)

তিনি ভূমিকায় নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-
احقر العباد فقیر محمد ولد قاضی محمد رضا مرحوم، ساکن راجه پور، پرگنه سانتور، متعلقه چکله بهوسنه، مضاف صوبه بنگاله.
(অর্থাৎ 'অধম বান্দা ফকির মুহম্মদ, পিতা- কাজি মুহম্মদ রেজা, সাং- রাজাপুর, পরগনা- সাঁতোর, চাকলা- ভূষণা, সুবা- বাঙ্গালা।')।

তখন মানুষ ফরিদপুর-বোয়ালমারী চিনত না; চিনত ভূষনা, সাতৈর...।
লেখক তৎকালীন ঠিকানাই ব্যবহার করেছেন।

অবাক হয়েছি যে এখন থেকে ২৫০ বছর আগে (ফরিদপুর জেলাধীন) 'রাজাপুর'-এর মতো একটা পাড়াগাঁয়ে জন্ম নেওয়া ব্যক্তি কিভাবে ওই রকম একটি বই লিখলেন! তা-ও ফার্সি ভাষায়!

হালকা নজর বোলানোসহ দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টিয়েও ৫ ঘণ্টায় শেষ করতে পারলাম না। ৪১২ পৃষ্ঠার বই।
তবে পলাশীযুদ্ধের বিবরণটা ভালো করে পড়ার চেষ্টা করেছি। তার জন্মের কিছু আগেই যুদ্ধটা হয়েছিল।

বর্তমান সময়ে স্কুল-কলেজের বইয়ে ইতিহাসের ঘটনাবলির ইংরেজি তারিখ দেয়া থাকে। কিন্তু ফকির মুহম্মদ তার ইতিহাসে ইসলামি (হিজরি) সাল-তারিখ ব্যবহার করেছেন। লিখেছেন- মুহররম, সফর, রমযান, রবিউল আউয়াল...। কোথাও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি... লিখেননি।

আমরা বইতে পড়ি- পলাশীযুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। কিন্তু ফকির মুহম্মদ উক্ত যুদ্ধের তারিখ লিখেছেন- '১১৭০ সনের ৫ শাওয়াল, বৃহস্পতিবার।'

বইটায় তিনি কিছু বাদ রাখেননি। তার সংগ্রহে থাকা পৃথিবীর প্রায় সকল জাতির ইতিহাস উল্লেখ করেছেন।

সৃষ্টিজগৎ, নবিগণ, প্রসিদ্ধ সাহাবি, খলিফা, রাজা-বাদশা, সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল, আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস খান, বাবর, হুমায়ুন, ইংরেজ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, পৃথিবীর ভৌগোলিক বিভাজন, দ্রাঘিমা-অক্ষাংশ নির্ণয়- সবই আছে তার বইয়ে।

এটি লিখতে তিনি অনেক বই পড়েছেন। তাযকিরা হাফত ইকলিম, আখলাকুল আরিফিন, আকবরনামা, তারিখ-ই-ফিরিশতা, সিয়ারুল মুতাআখখিরিন, খুলাসা তারিখ-ই-হিন্দসহ অনেক বই থেকে সহায়তা নিয়েছেন বোলে ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন। এমনকি তাকে 'মহাভারত'-ও পড়তে হয়েছে।

এখন যেমন ইংরেজিতে বই লিখলে সেটা বেশি মূল্যায়ন করা হয়, আন্তর্জাতিক মান পায়; তেমনি কাজি ফকির মুহম্মদ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তদানীন্তন রাজকীয় ভাষা 'ফার্সি'তে লিখেছেন।

জানি না, এ ধরনের প্রয়োজনীয় আরো কত বই আমাদের দৃষ্টির অগোচরে রয়ে গেছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us