মহামারী বনাম ঐশী ক্ষমা

সৈয়দ কামরুজ্জামান | Jun 28, 2021 02:03 pm
মহামারী বনাম ঐশী ক্ষমা

মহামারী বনাম ঐশী ক্ষমা - ছবি সংগৃহীত

 

মানুষের জীবনে দুর্ভোগ আসে তাদের মন্দ কাজের কারণে হয়। ভালো কাজের ফলাফল পুরস্কার এবং খারাপ কাজের ফল হলো নিন্দা বা শাস্তি। এ বার্তাই আল্লাহ মানুষের মাঝে বিভিন্ন দিক থেকে নানা উদাহরণ দিয়ে এবং বিভিন্ন নবী, রাসুলের মাধ্যমে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

“তোমাদের ধন-সম্পদের জন্য যে উত্তম জিনিস সরবরাহ করেছি তা ভক্ষণ কর, তবে সীমা অতিক্রম করো না। করলে, তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত, যাদের উপর আমার ক্রোধ অবতীর্ণ হয় তারা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যায়।”

(সূরা ২০ তাহা, আয়াত ৮১)

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন,
“তোমাদের পালনকর্তা কোন জনপদকে ধ্বংস করেন না যতক্ষণ না তিনি তার কেন্দ্রস্থলে একজন রাসূল প্রেরণ করেন এবং তিনি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করেন যখন এর সদস্যরা পাপ বা মন্দ কাজের অনুশীলন করে।”
(সূরা কাসাস ২৮, আয়াত ৫৯)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত যে, লোকেরা যখন তাদের জন্য নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে এবং অন্যায়, পাপ কাজে লিপ্ত হয় তখন আল্লাহ সেই অঞ্চলের লোককে ধ্বংস করতে বা বিশ্বজুড়ে সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ কষ্ট ঘটাতে বাধ্য হন। আল্লাহ কুরআনে এমন অনেক দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। বলা হয়েছে, “আমি মাদইয়ানদের (লোকদের) প্রতি তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর উপাসনা কর এবং শেষ বিচারের দিনকে ভয় কর, আর পৃথিবীতে দুষ্কর্ম করো না। অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, অতঃপর রাত্রে ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল এবং সকাল বেলা তারা নিজ নিজ ঘরে অধোমুখী হয়ে রইল। আদ (গোত্র) এবং সামুদকেও ধ্বংস করেছিলাম, স্পষ্টভাবে তাদের বাড়িঘরের চিহ্নগুলি থেকে বুঝা যাবে তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল। শয়তান তাদের কৃতকর্মকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল এবং তাদেরকে পথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, যদিও তারা বুদ্ধি এবং দক্ষতায় ছিল পারদর্শী। এবং ধ্বংস করেছিলাম কারূণ, ফেরাউন এবং হামানকে, মুসা যখন তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা মুসার সঙ্গে লাঞ্ছনার আচরণ করেছিল। তবুও তারা আমার শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারেনি। আমি তাদের প্রত্যেককেই তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম: তাদের মধ্যে কারোর প্রতি পাঠিয়েছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড টর্নেডো; কেউ কেউ আক্রান্ত হয়ে ছিল বজ্র ঝড়; কিছুকে আমি প্রোথিত করেছিলাম ভূতলে এবং কিছুকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম; আল্লাহ তাদের প্রতি কোন জুলুম করেননি; তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।” (সূরা আল আনকাবুত ২৯, আয়াত ৩৬-৪০)

কুরআনে মহামারীসংক্রান্ত বিষয়ে অনেকগুলি আয়াত রয়েছে। একটি আয়াতে বলা হচ্ছে :
“মানুষের মন্দ কাজের কারণেই জলে ও ভূমিতে নানা অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে ওদের কোন পাপের শাস্তি ওদের আচ্ছাদন করান হয় ; যাতে তারা ভাল রাস্তায় ফিরে আসতে পারে।”
(সূরা ৩০ আর রুম , আয়াত ৪১)

মুফাসসিরগণ বলেন যে, জমিনে দুর্ভোগের অন্তর্ভুক্ত হলো; দুর্ভিক্ষ, মহামারী (বিভিন্ন প্রকার রোগ ব্যাধি ইত্যাদি), আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, বজ্রপাত ঝড় ইত্যাদি এবং জলের কারণে অশান্তির অন্তর্ভুক্ত হলো; বন্যা, সুনামি, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি, যা মানুষের উপর সহসা এসে পড়ে মন্দ কাজের ফলস্বরূপ। মানুষের প্রশান্তি তার ভাল কাজের, যার প্রতিদান আল্লাহর কাছ থেকে আসে এবং মানুষের ভোগান্তি তাদের মন্দ কাজের সাজা। মহামারী সম্পর্কিত বাণী বাইবেলেও দেখতে পাওয়া যায়। এখানে একটি ওল্ড টেস্টামেন্ট বা তাওরাত অংশ থেকে এবং অন্যটি নিউ টেস্টামেন্ট বা ইঞ্জিল অংশ থেকে উদ্ধৃত করা হলো। তাওরাতে বলা হয়েছে, “তোমরা যদি এ বইয়ে লেখা সমস্ত কথা এবং অনুশাসন যত্ন সহকারে পর্যবেক্ষণ না কর এবং যিহোবা তোমাদের গড এর গৌরবময় এবং সশ্রদ্ধ নামটিকে ভয় না কর, তবে যিহোবা তোমাদের এবং তোমাদের বংশধরদের উপর অত্যন্ত মারাত্মক বিপর্যয় ঘটাবেন, যা হতে পারে মহামারী ও স্থায়ী যন্ত্রণা ও প্লেগ ও স্থায়ী অসুস্থতা।” 

ইঞ্জিল অংশে বলা হয়েছে,
“যখন কোন জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তাদের উপর চড়াও হয় এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজ্য শত্রতায় লিপ্ত হয় এবং যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে প্রবল ভূমিকম্প হবে এবং একের পর এক জায়গায় খাবারের ঘাটতি ও মহামারী দেখা দেবে এবং ভয়াবহ দর্শনীয় স্থান এবং স্বর্গ থেকে এর বড় চিহ্নগুলি দেখা যাবে।”
(লুক ২১: ১০-১১, ইঞ্জিল অংশ, বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট )

বাইবেলের উপরের দুটি বাণী থেকে এটি প্রকাশ পায় যে, মন্দ কাজের ফল খারাপ জিনিস নিয়ে আসে, যেমন মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি। যখন কোন শক্তিশালী জাতি সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতির উপর অত্যাচার ও অন্যায় অবিচার করে এবং যখন ক্ষমতাধর দেশ অন্য কোন ক্ষমতাহীন দেশকে আক্রমণ করে ও অন্যায়ভাবে মহিলা ও শিশুকে হত্যা করে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহর তরফ থেকে এ ধরনের মহা বিপদ মানুষের উপর নেমে আসে।

এ ধরণের শাস্তি যখন কোন অঞ্চল বা দেশে নেমে আসে তখন তা ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বয়স নির্বিশেষে পুরো জনগোষ্ঠীর ওপরেই আসে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ সা: বলেছেন, “যখন আল্লাহ্ কোন জাতির উপর শাস্তি অবতীর্ণ করেন, তখন তা গোটা জাতির মানুষের উপর আসে, পৃথকভাবে করো উপর আসে না। তারপরে প্রত্যেকের জবাবদিহিতা পুনরুত্থানের দিনে তাদের কর্মফল অনুসারে হবে।” (সহীহ বোখারী হাদিস # ৬৬০৯)
বড় ধরনের দুরাচার, যা চূড়ান্তভাবে আল্লাহর সীমানা অতিক্রম করে, এ ধরনের কাজগুলি হলো:
১. অন্যের সাথে আল্লাহর অংশীদারি করা (আল্লাহ একমাত্র এবং একক, তাঁর মতো আর কেউ নেই)।
২. বিনা বিচারে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা।
৩. পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা।
৪. মিথ্যা কথা বলা
৫. মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
৬. নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করা।
৭. মানুষের অধিকার, প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা।
৮. কুরআন (আল্লাহর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত কেতাব) এবং হাদিস (রাসূলের সুন্নাহ) এবং অন্যান্য আসমানি কেতাবে বিশ্বাস না করা ইত্যাদি।
৯. অনৈতিক বা অশ্লীল কাজ করা।
১০. ব্যভিচার করা।
১১. শালীনতা বজায় না রাখা।
(কুরআন: সূরা ২৪ নূর, আয়াত ৩০ - ৩১; সূরা ৩৩ আল- আহযাব, আয়াত ৩৩ এবং ৫৯; হাদীসঃ সহীহ বোখারী হাদীস # ৫৪৫৭, সহী আবু দাউদ হাদীস # ৬৪৫, ৪০৮৬, ৪০৮৭ এবং ৪১০৪)
(বাইবেল: এবহবংরং ২৪: ৬৪-৬৫; গধঃঃযবি ৫ : ২৭-২৮; ১ ঈড়ৎরহঃযরধহং ১১: ৪-৮) ইত্যাদি।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবয়বে পৃথিবীতে এসেছে, এটা নতুন কিছ নয়। মানব বিবর্তনের প্রাথমিকপর্যায় থেকেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানের মধ্যে এটি অনুভূত হয়েছে। মানুষকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনার জন্য আল্লাহ এ ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এগুলির কিছু কিছু নি¤েœ আলোচনা করা হলো।

নূহ নবীর সময়ের প্লাবন
নূহের প্লাবনের কথা কুরআন ও বাইবেলের তাওরাত অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। নূহের সময়ের প্লাবনের বিবরণ কুরআন এর, সূরা ১১ হুদ, আয়াত ৩২ - ৪৯ এবং সূরা ৭১ নূহ , আয়াত ১-২৮ এ বিষদভাবে বলা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সূরাতে উল্লেখ আছে। এ বিষয়ে বাইবেলে বলা হয়েছে, “গড-এর দৃষ্টিতে পৃথিবী নষ্ট হয়ে গেছে এবং পরিপূর্ণ হয়েছে হিংসাত্মক ও হিংস্রতামূলক কাজে। তাই গড নূহ নবীকে বলেছিলেন, তিনি সকল জীবকে ধ্বংস করতে চান, কারণ পৃথিবী এদের অন্যায় কাজের কারণে নষ্ট হয়েছে। তাই আমি পৃথিবীর সাথে তাদের একসঙ্গে ধ্বংস করে দেব।” (এবহবংরং ৬: ১১ এবং ১৩)

অ্যান্টোনিন প্লেগ
এটি একটি প্রাচীন মহামারী ছিল, যা এশিয়া মাইনর (আধুনিক কালের তুরস্ক), মিসর, গ্রিস এবং ইতালিকে প্রভাবিত করেছিল। এ প্লেগের কারণ এখনও অজানা। রোমক সৈন্যরা ১৬৫ খ্রিস্টাব্দে মেসোপটেমিয়া থেকে ফিরে আসার সময় এটি রোমে নিয়ে এসেছিল। ৫ মিলিয়নেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। এ সময়টি ছিল ‘সেন্ট পল’ এর রোমে ধর্মোপদেশ এবং ‘মিনি’র পারস্যের মেসোপটেমিয়াতে ধর্মোপদেশ প্রদানের মাঝামাঝি সময়ে।

জাস্টিনিয়ান প্লেগ
এটি বাবোনিক প্লেগ নামে প্রাদুর্ভূত হয়, যা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের উপর প্রভাব ফেলেছিল (এটি রোমান সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত যখন তাদের রাজধানী ছিল কনস্টান্টিনোপল) এবং ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর শহরগুলিকে দারুণভাবে বিপর্যস্থ করেছিল। এ রোগে ৫৪১- ৫৪২ সালের মধ্য প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়।
দ্য ব্ল্যাক ডেথ
১৩৪৬-১৩৫৩ সাল অবধি প্লেগের প্রাদুর্ভাব ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়াকে বিধ্বস্ত করেছিল, যার কারণে মৃত্যু হয়েছিল ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন। এটি এশিয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং ইঁদুরের গায়ে বসবাসকারী নীলমাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ইঁদুরগুলি ঘন ঘন চলাচলকারী বণিক জাহাজের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিবাহিত হয়েছিল।

তৃতীয় কলেরা মহামারী
এটি প্রথমে ভারতের গঙ্গা নদীর অববাহিকা থেকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৫২-১৮৬০ সালের মধ্যে কলেরা মহামারী এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকাতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ মহামারীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ব্রিটিশ চিকিৎসক, জন স্নো শনাক্ত করেছেন যে এ রোগটি পানি দিয়ে সংক্রমিত হয়।

ফ্লু মহামারী (১৮৮৯-১৮৯০)
একে ‘এশিয়াটিক ফ্লু’ বা ‘রাশিয়ান ফ্লু’ বলা হত। এটি ছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়। ১৮৮৯ সালে প্রথম এ ভাইরাস প্রথম তিনটি পৃথক স্থানে দেখা গেছে । (১) মধ্য এশিয়ার বুখারা (তুর্কমেনিস্তান), (২) উত্তর কানাডার আথাবাস্কা (অঃযধনধংপধ) এবং (৩) গ্রিন ল্যান্ড। ১৮৮৯ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল।
ষষ্ঠ কলেরা মহামারী
অন্যান্য পাঁচটি কলেরা মহামারীর মতোই এর জন্মও ভারতে হয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১০-১৯১১ সালের মধ্যে ৮ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।

ফ্লু মহামারী (১৯১৮-১৯২০)
এ ফ্লু মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ -৫০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। এটি অন্য ফ্লু থেকে পৃথক ছিল। অন্য মহামারীতে রুগ্ণ ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয়েছিল, আর এটিতে যারা যুবক এবং সুঠামদেহের অধিকারী তারা বেশি আক্রান্ত হয়।

এশিয়ান ফ্লু
এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা সাব টাইপ দ্বারা সংক্রমিত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল চীনে যা ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সাল অবধি ছিল। এ ফ্লুতে প্রায় দুই মিলিয়ন লোক মারা যায়, এর মধ্যে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই মারা যায় ৭০ হাজার লোক।

ফ্লু মহামারী (১৯৬৮)
ফ্লু মহামারী ১৯৬৮ দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ফ্লু মহামারী যা হংকং ফ্লু নামেও পরিচিত। এটি সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছড়িয়ে পড়েছিল। এ মহামারীতে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল।

এইচআইভি-এইডস মহামারী
১৯৭৬ সালে প্রথম এইচআইভি ভাইরাস কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে শনাক্ত করা হয়েছিল। পরে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। এ রোগ নিজেকে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে প্রমাণ করেছে। ২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এইচআইভি বা এইডস থেকে বার্ষিক বৈশ্বিক মৃত্যু ২.২মিলিয়ন থেকে ১.৬ মিলিয়নে নেমে গেছে।

কোভিড-১৯ (২০১৯)
কোভিড-১৯ হচ্ছে রোগের নাম, যা ‘নভেল করোনাভাইরাস’ নামে পরিচিত নতুন ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এ রোগের সংক্রমণ এখনও চলছে। এরই মধ্যে টিকা আবিষ্কার হয়েছে এবং তার প্রয়োগও শুরু হয়েছে।

হজরত মুহাম্মদ সা: এর একটি হাদিস রয়েছে :
হজরত ওসামা ইবনে জায়েদ রা: এর কাছে থেকে বর্ণিত। “হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেন, যখন তোমরা শোন যে কোনো স্থানে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে তখন সেখানে যেও না। আর কোন স্থানে প্লেগ মহামারী দেখা দেয়ার সময় তোমরা যদি সেখানে থাক, তবে সেখান থেকে কোথাও চলে যেও না।”
- সহীহ বোখারী, হাদীস নং ৫৩০৮

আমরা যদি কুরআন, হাদিস, বাইবেল এবং ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে পর্যালোচনা করি, তবে দেখা যায় যে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক কারণে মানুষ বিপর্যস্ত বা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। কখন আজাব আসবে আলিমুল গায়েব আল্লাহই ভালো জানেন এবং সাধারণভাবে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের কোনো রদবদল করেন না। দুর্ভোগ তাদের যারা মন্দ কাজের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। সৌভাগ্যবান তারা যারা সঠিক কাজের জন্য পুরস্কৃত হয়।

এ প্রসঙ্গে শেখ সাদী রা: এর লেখা ‘গুলিস্তাঁ’ গ্রন্থ থেকে অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করা হলো;
“প্রার্থনাকারীর উত্তম কাজ হলো তার পাপের জন্য,
আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
যদিও সে গুণসম্পন্ন ও মর্যাদার যোগ্য,
তবুও কেউই পূর্ণাঙ্গ মানুষ নয়।
আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমা থেকে কোন জনপদই বাদ পড়ে না,
আর তার অফুরন্ত ভালবাসা সর্বদা সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।
আল্লাহ্ কোন বান্দার সম্মানহানী করেন না
যদিও সে হয় বড় ধরনের পাপী,
এমনকি বড় ধরনের অপরাধের জন্য তাদের অন্নও বন্ধ করেন না।”
(গুলিস্তাঁ : শেখ মুসলেহ-উদ্দিন সা’দী শিরাজী)

সুতরাং, যখন মহামারীর আযাব আমাদের উপর গজব আকারে আসে তখন আমাদের উচিত সমবেতভাবে সরল হৃদয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ্ ‘কুরআনে’ আশ্বাস দিয়েছেন যদি কেউ ভুল করে এবং সে যদি বুঝতে পারে যে সে ভুল করেছে এবং তার জন্য অনুতপ্ত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আল্লাহ্ বলেন,
“আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল যে তওবা করে, বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে ও সত্য পথের নির্দেশনা দেয়।”
- সূরা ২০ তাহা, আয়াত ৮২

বর্তমান বৈশ্বিক মহামারীর এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ইত্যাদি নির্বিশেষে সবাইকে এক কণ্ঠে আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের কাছে আমাদের সকল মন্দ কজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না করার জন্য অঙ্গীকার করতে হবে।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us