আহ... ফিজ আর লিটন

আফফান উসামা | Jul 06, 2021 01:29 pm
মাঠে মোস্তাফিজ, সাথে সাকিব

মাঠে মোস্তাফিজ, সাথে সাকিব - ছবি : সংগৃহীত

 

হাথুরুসিংহের সময়ে বাংলাদেশ নতুন এক যুগে পদার্পণ করেছিল। পৌঁছে গেছিলো নিজেদের সর্বকালের সফলতার শিখরে। পার করেছিল নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সময়, পেয়েছিল রাঘববোয়াল শিকারের সুন্দর সব সুখানুভূতি। অর্জন করেছিল গর্ব করার মতো বেশ কিছু সোনালি স্মৃতি। সেই সুন্দর বর্ণালী সব স্মৃতি খুঁজে পেতে হাথুরুসিংহে খুঁজে নিতেন সম্ভাবনাময়ী প্রতিভাধর তরুণদের। তার পরিকল্পনায় সর্বদা প্রাধান্য পেত তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা। সেই সুবাদেই নিজের বাঘেদের হয়ে বিশ্বকাপ পরবর্তী দ্বিতীয় এসাইনমেন্টে এক দিবসী ক্রিকেটের জন্য খুঁজে নিয়েছিলেন দু'জনকে।

বিশ্বকাপে নজরকাড়া পারফর্মের পর এটা ছিল বাঘেদের দ্বিতীয় সিরিজ। প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপে উত্তাপ ছড়ানো ওই ভারত। যে ভারতের বিপক্ষে বিতর্কিতভাবে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে হেরে দেশে ফিরেছিল, বাঘেরা সেই ভারতের বিপক্ষেই ছিল দেশের মাটিতে সিরিজ। বড় নাম আর বড় পারফর্মারে ভরপুর ভারত দল এসেছিল বাঘের ডেরায়। অতঃপর? অতঃপর সেই ছন্দের বাস্তব রূপ : 'আহত বাঘ হিংস্র বড়, যাস না তো কভু ভুলে; প্রাণ হারাবি বাঘের লেজে কাঁটা কান চুলকালে।'

যাহোক সেই সিরিজে ওয়ানডে ক্রিকেটে হাথুরুসিংহে অভিষেক করান সম্ভাবনাময়ী দুজন টাইগারের। লাল-সবুজের জার্সিতে দুজন একসাথে প্রথমের স্বাদ নিলেও দুজনের পথটা ছিল ভিন্ন। একজন ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ, ঘরোয়া ক্রিকেটের সামান্য খোঁজখবর রাখা প্রতিটি চোখের দেখা অপ্রতুল প্রতিভার এক নতুন সম্ভাবনা। অন্যজন তখনো ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো ম্যাচই খেলেননি।

আমি যাদের কথা বলছি, নিশ্চয়ই বুঝতে বাকি নেই আপনার। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ ওরা যে এখন অনেক বড়, জাতীয় দলেও আছে নিয়মিত। কিন্তু তবুও একটা কিন্তু আছে, একরাশ হতাশায় কপাল কুঁচকে উঠে। কালো মেঘে আঁধার নামে মন মানসপটে। এমন তো হবার কথা ছিল না। ওরা তো চাঁদ নয়, সূর্য ছিল। তবুও কেন আজ এমন হলো? মোস্তাফিজ হয়তো খানিকটা এগিয়ে গেছেন, কিন্তু লিটন দাস যে এখনো আটকে আছেন!

লিটন দাস কি আদৌ জানেন তার সক্ষমতা? প্রশ্নটা আমার মনে প্রায় সময়েই বার বার উঠে, হয়তো আপনার মনেও। উঠার যথেষ্ট কারণও আছে। আমরা যে লিটনকে এখন দেখি, তার সম্পর্কে কি এমনি সাধারণ ধারণা রাখি? অবশ্যই না। যদি তাই হতো তবে কি নামের মূল্যায়নে ব্যবহার করি ক্রিকেট মাঠের মোনালিসা! তবে কি তার ব্যাটিং প্রশংসায় লিখি শিল্পীর আঁকা ছবি?

সবুজের ক্যাম্পাসে উইলোর রং-তুলি হাতে ছয় আউন্সের চর্মগোলক নামক রঙ দিয়ে কত নিখুঁত ছবি আঁকতে পারেন তা ক্ষণে ক্ষণে বেশ ভালো ভাবেই জানান দিয়েছেন লিটন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্বপ্নের সিরিজ বা ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রথম শতক তারই জ্বলন্ত সাক্ষী। সাক্ষী আমরাও, সাক্ষী আমাদের চোখ দুটিও। আমরা তো সৌন্দর্যের পূজারী, আমরা কী করে ভুলবো ওই সকল স্মৃতি?

আমরা না ভুললেও ভুলে যান হয়তো লিটন। নয়তো এমন সুন্দর ইনিংস খেলার পরও কিভাবে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন স্বয়ং নিজের উপর থেকে স্বয়ং নিজেই! তাইতো মনে ওই প্রশ্ন ভাসে, লিটন কি সত্যিই নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে জানেন? বুঝে কি তার দৌড়ের সীমারেখা কত দূর? যদি বুঝতেনই তবে কি আর বার বার আত্মহত্যা করে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন? আপনি কি করেন জানি না, তবে লিটন মাঠে থাকলে আমি জায়গা থেকে নড়চড় করি না। কারণ তার দিনে তিনি যে সত্যিই শিল্পী।

কিন্তু আফসোস... আমাকে বার বার প্রায় বার হতাশ হতে হয়। কারণ তার দিন সম্পর্কে তিনিই অজ্ঞাত। ওহে লিটন... আমার বা আমাদের, এককথায় পুরো দেশের চাওয়া যে তোমার থেকে আরো বেশি। কারণ আমরা তোমার সক্ষমতা সম্পর্কে জানি। প্লিজ লিটন, আর হতাশ করো না। নিজেকে চিনে নাও, বুঝে নাও, খুঁজে নাও।

এবার ফিরি দ্য ফিজে। যেভাবে আবির্ভাব ঘটেছিল তার বাইশ গজের সবুজ ক্যানভাসে, তা কি কভুও ভোলা যাবে? ভুলিনি, ভুলব না, ভোলা যায় না। কী করে বলি বলুন, তিনি যে ভয়ঙ্কর সুন্দর। ব্যাটিং শক্তির দাপট নিয়ে দম্ভ করা ভারতকে একা হাতে চূর্ণ করা মুহূর্তগুলো যে আজও চোখে ভাসে। কাটার মাষ্টার নাম কী আর হয় সাধে? তার ফণা তোলা কাটারে কাঁপেনি কে আছে? বিশ্বসেরা কোহলিও তো হার মেনেছেন নত শিরে।

উইকেট ছত্রখান কিংবা বিস্ময়ের বিস্ফোরণে কাঁপিয়ে ছিলেন ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেটের বর্ণালী সংস্করণ আইপিএলের আসরে সেরা উদীমান ক্রিকেটারের পুরস্কারটাও এসেছে ঝুলিতে। এখনো আছে, তবে হারিয়েছেন পুরনো ধার। ফিরে আসার চেষ্টা করছেন, উইকেটও পাচ্ছেন, কিন্তু প্রতিপক্ষ নেই আগের মতো কম্পমান। কারণ দুটি, নতুনত্ব না আনতে পারা, আর ইঞ্জুরি প্রবণতা।

যদি সঠিক পথে শুরুর আলোতে পথ চলতে পারতেন তবে সমবয়সী বুমরাহ আর রাবাদার মতো তিনিও হালের ক্রিকেটের সেরা বোলারদের একজন হতেন। তিনিও আছেন, তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মলিনতার দাগ পড়েছে। ইতিহাসের অংশ হতে হলে যে ওই ফরম্যাটে ভালো করতেই হবে।

এখনো সময় আছে। মোস্তাফিজের আবার দ্য ফিজ হয়ে উঠার। তবে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, নতুনত্ব আনতে হবে, হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত। নিজের মাঝে জিদ আনতে হবে, ঠিক করতে হবে লক্ষ্য। অর্থ উপার্জন নয়, ইতিহাসের সোনালি পাতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করায় দিতে হবে মন। আর তার জন্য কী করতে হবে, তা তার থেকে ভালো আর কে জানে?

চলুন না একটা স্বপ্ন দেখি। সাকিব, মুশফিক আর তামিম, মাহমুদউল্লাহর সাথে লিটন, মোস্তাফিজও আছেন নিজের ছন্দে, পারফর্ম করছেন ধারাবাহিকতা রেখে, তবে? নিশ্চয়ই ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বদলে দিতে এটুকুই অনেকটা সহায়ক হবে। আহ, স্বপ্নটা যদি সত্যি হতো...


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us