যে সৌরভে সুবাসিত ক্রিকেট নন্দন

আফফান উসামা | Jul 08, 2021 05:16 pm
যে সৌরভে সুবাসিত ক্রিকেট নন্দন

যে সৌরভে সুবাসিত ক্রিকেট নন্দন - ছবি : সংগৃহীত

 

পতনের শিকার হয়েছেন উত্থানের সূচনা লগ্নেই। ছুঁড়েও ফেলা হয়েছে একাধিকবার, অভিযোগের তিক্ত তীর ধেয়ে এসেছে বার বার। কিন্তু তিনি লড়াই করেছেন, দাঁতে দাঁত চেপে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হৃদে লড়ে গেছেন। নিজেকে গড়ে পুনরায় ফিরে এসেছেন, অতঃপর জয় করেছেন। চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছুটে চলেছেন বীরের বেশে। নামটা তার সৌরভ গাঙ্গুলী। কিন্তু তার বিমোহিত সৌরভের সংজ্ঞা কী পরিচয়ে দেব? ব্যক্তি সৌরভ, ক্রিকেটার সৌরভ, না অধিনায়ক সৌরভ? এখন তো আরো যোগ হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্ব ক্ষমতা!

সৌরভের সুরভিত সুবাসে সর্বক্ষেত্রেই সর্বদা আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। ফলেই তো আজ নিখিল বিশ্বের প্রিয় ‘দাদা’ তিনি, ভারতীয়দের মুখে-মুখে ‘প্রিন্স অফ কলকাতা’। তিনিই তো দ্য ওয়াল দ্রাবিড়ের সেই ‘অফসাইড ঈশ্বর', আর বোদ্ধাদের ভাষ্যে ‘ইতিহাসের সেরা দলনেতা'! যার জন্য প্রাণ দিতেও দ্বিধা নেই সতীর্থ যুবরাজের, অকপটে বলে যান ‘এমন অধিনায়কের জন্য তো আমি মরতেও পারি'। যার জন্য মানুষ আজও পাগল, তাই তো তার অসুস্থতার সংবাদে শত-হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কোটি প্রাণ প্রার্থনা করে নতশিরে স্বীয় প্রভুর দরবারে।

ক্রমাগত ব্যর্থতা, স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি ও হারের চক্রে ধুঁকতে থাকা ভারতীয় দল যখন ওডিআই র‍্যাংকিংয়ে আট নম্বরে অবস্থান করছে, তখন দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সৌরভ। এরপর শুধুই ইতিহাস রচনা করেছেন, লিখেছেন রূপকথার গল্প! আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বে বদলে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের খোলনলচে। দলকে নিয়ে এসেছেন র‍্যাংকিংয়ের সেরা দুইয়ে। তাছাড়া দেশ ছাপিয়ে দেশের বাইরের মাটিতে ভারতের দাপট দেখানোর শুরুটাও সৌরভের অধিনায়কত্বেই। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিজয় রথ থামিয়ে দেয়ার নাম সৌরভ। পাকিস্তানে সিরিজ জেতার নাম সৌরভ। ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দেয়ার সূতিকাগার সৌরভ। যে সৌরভ আজও ভেসে আসে বিরাট কোহলিদের আগ্রাসনে। কিংবা ধোনির বিশ্বজয়ের সুখময় স্মৃতিতে। আর লর্ডসের ব্যালকনিতে তার জার্সি খুলে উন্মত্তভাবে হাওয়ায় দুলিয়ে বুনো উল্লাসের ওই দৃশ্য তো আজও বাংলার মানুষকে শিহরিত করে।

শুরুতেই বলেছি আজ যে সৌরভে গৌরববোধ করছি, ওই সৌরভের নিজেকে গড়ে তোলাটা এতো সহজ ছিলোনা৷ ১৯৯২ সালে ২০ বছর বয়সে, ভারতীয় দলে ডাক পান সৌরভ। ক্যারাবীয় দ্বিপে দুঃস্বপ্নের অভিষেকে মাত্র ৩ রানই করেই ফেরেন সাজঘরে। দ্বিতীয় ম্যাচে মূল একাদশে আর সুযোগ হয়নি। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচেই তাকে অহংকারী তকমায় তড়িঘড়ি করে দেশে পাঠিয়ে দেয় বিসিসিআই। সেই সাথে জাতীয় দলের দরজাটাও তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভেঙে পড়েননি, নিজেকে গড়েছেন নতুন করে, যন্ত্রণার আগুনে নিজেকে দগ্ধ করে শক্ত করেছেন নিজেকে। আর খুলতে বাধ্য করেছেন জাতীয় দলের বন্ধ দুয়ার।

ওই দরজা খুলতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে চার-চারটি বছর। টানা দুই রঞ্জি ট্রফি মৌসুমে রানের বন্যা বইয়ে পুনর্বার ১৯৯৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে দলে সুযোগ পান। তিন টেস্টের সিরিজে প্রথমটিতে খেলতে না পারলেও, দ্বিতীয়টিতে মূল একাদশে জায়গা পেয়ে যান। আর নিজেকে প্রমাণের জন্য এই ম্যাচটিই বেছে নেন। কারণ, তিনি জানেন সুযোগ সদ্ব্যবহার না করলে পুনরায় জায়গা হারাতে হবে। ফলে সবুজের ক্যানভাসে ব্যাট নামক তুলি হাতে গাঙ্গুলির একেঁ ফেলেন এক অনিন্দ্য সুন্দর রূপকথার গল্প।

যে গল্প শচিন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা বা রিকি পন্টিংয়ের মতো রথী-মহারথীরা লিখতে পারেননি, সেখানে অভিষেক টেস্টেই ক্রিকেটের তীর্থখ্যাত ইংল্যান্ডের লর্ডসে সেঞ্চুরির স্বাদ আস্বাদন করে বিখ্যাত ‘অনার্স বোর্ডে’ নাম লেখান গাঙ্গুলি। সেই যে শুরু... পথচলা পুনরায় থামে ২০০৫ সালে। ফর্মহীনতায় অধিনায়কত্ব ছেড়ে বাদ পড়তে হয় দল থেকেও। এবারও গাঙ্গুলি থেমে যাননি। ফিরেছেন দশ মাসের ব্যবধানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার এই প্রত্যাবর্তন যেন রাজকীয়তার স্বীকৃতি পায়। প্রত্যাবর্তনটা যে তিনি রাঙিয়ে ছিলেন দুর্দান্ত সব স্ট্রোকের তুবড়ি ছুটিয়ে ৯৮ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে!

সেখান থেকে আর থামতে হয়নি, এমনকি পেছন ফিরেও তাকাতে হয়নি। ক্যারিয়ারের শেষ সময়েও তিনি ছিলেন অনন্য উজ্বল। তবে এমন দারুণ ক্যারিয়ার শেষের ইনিংসটা ছিল শূন্য রানের। তবে তত দিনে খেলে ফেলেছেন তিনশোর অধিক ওয়ানডে আর শতাধিক টেস্ট ম্যাচ। ৩১১ ওয়ানডেতে রান সংখ্যা ১১,৩৬৩। উইকেটও আছে ১০০টি। ১১৩ টেষ্টে রান ৭১১২, উইকেট সংখ্যা ৩২। দারুণ একটা পরিসংখ্যান বলি, ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ অব্দি, ওয়ানডেতে বা সাদা পোষাকের ক্রিকেটে ৪০-এর নিচে গড়টা কখনোই নামেনি। আরেকটা বিষয়, উভয় ফরম্যাটে তার ম্যাচ সংখ্যা দেখেছেন কি? হ্যাঁ, টেস্ট আর ওয়ানডে দুটোই লিখতে হয় একটা ৩ আর দুটি ১ সংখ্যা দিয়ে (৩১১>১১৩)।

ক্রিকেটের দাদা ‘দাদাগিরি' করছেন বেশ দাপটের সাথে টিভি পর্দায়ও। সেই সাথে ক্রিকেট বোর্ডেও চলছে তার দাদাতন্ত্র। যেই তন্ত্রে শতভাগ সফল হবার সুযোগ এখনো পায়নি সৌরভ। করোনার দাপটে এখন সমগ্র বিশ্বের মতো তিনিও কপোকাত বলা চলে। তবে খুব শিগগিরই সামনে সুযোগ আসছে। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ আসর আসতে চলেছে। দেখা যাক কী হয়...

যার সম্পর্কে এত কিছু বলা, তার জন্ম ৮ জুলাই, ১৯৭২ সালে কলকাতার বেহালায়। বাবা চন্ডীদাস গাঙ্গুলি এবং মা নিরুপমা গাঙ্গুলি। তখনকার সময়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেট থেকে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বেশি ছিল। বাল্যবয়স থেকে তাই সৌরভেরও ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁকটা বেশি ছিল। তবে বিধাতার ইচ্ছে ভিন্ন ছিল, ফলেই তো ক্রিকেট তার দাদাকে খুঁজে পেল।

আজ দাদার ৪৯তম জন্মদিন৷ রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা।

–শুভ জন্মদিন সৌরভ গাঙ্গুলি!
–শুভ জন্মদিন ক্রিকেটের দাদা!

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us