আল-কুরআন বুঝে পড়তে হবে কেন?

মো: সাইফুল মিয়া | Apr 09, 2022 02:58 pm
আল-কুরআন বুঝে পড়তে হবে কেন?

আল-কুরআন বুঝে পড়তে হবে কেন? - প্রতীকী ছবি

 

পৃথিবীর মহাবিস্ময়কর ও সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ আল-কুরআন। মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআন নাজিল করেছেন। মানুষের বাস্তব জীবনের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে আল-কুরআনে। কুরআন থেকে হেদায়াত লাভ করতে হলে, জীবন সমস্যার সমাধান পেতে হলে কুরআনকে অবশ্যই বুঝে পড়তে হবে। মানব সন্তান যদি আল-কুরআন পড়ে, তাতে কী বলা হয়েছে তা সঠিকভাবে বুঝতে পারে তাহলে তা মেনে চলা ও উপদেশ গ্রহণ করার মাধ্যমে বাস্তব জীবনকে সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করতে পারবে।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক-১) এ জন্য মানব জীবনে সাফল্য অর্জন করার জন্য কুরআন পাঠের বিকল্প কোনো গ্রন্থ পৃথিবীতে নেই।

আল-কুরআন বেশি বেশি পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নানা ধরনের মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। একজন মানুষ যদি নিয়মিত কুরআন পাঠ করে তাহলে জানতে পারবে আল্লাহ তায়ালা কোন পথে চলা এবং কাদের ভালোবাসেন। ফলে ওই বান্দার সাথে মহান আল্লাহ তায়ালার সুসম্পর্ক স্থাপন হবে এবং বান্দা সহজে আল্লাহর নৈকট্য ও নেকি অর্জন করতে পারবে। আরবি ভাষায় নাজিলকৃত আল-কুরআনের অর্থ বুঝে পড়ার মাধ্যমে যেমন মানুষ জীবন চলার সঠিক দিকনির্দেশনা লাভ করতে পারে, তেমনি শুধু তিলাওয়াতের মাধ্যমেও সওয়াব বা নেকি লাভ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে, বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে ১০ গুণ। এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মিম একটি অক্ষর।’ (তিরমিজি-২৯১)

বর্তমান সময়ে গবেষণারত গ্রন্থের মধ্যে আল-কুরআনের স্থান সব গ্রন্থের ঊর্ধ্বে। আল-কুরআন একটি বিজ্ঞানময় কিতাব। আজ প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিদিন নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার হচ্ছে। আজকের আধুনিক বিজ্ঞান যা নতুন আবিষ্কার করছে তা কুরআনে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে, তা প্রমাণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রিয়নবী সা:কে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আল-কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি এমন এক বরকতময় কিতাব নাজিল করেছি, যেন মানুষ তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, আর শুধু বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা তা থেকে (কুরআন) উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা সাদ-২৯)

আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার কথোপকথনের একমাত্র মাধ্যম হলো কুরআন পাঠ। আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী। যখন কোনো বান্দা কুরআন পাঠ করে তখন সে আল্লাহর সাথে কথোপকথন করে। এ জন্য খুবই আদব ও শ্রদ্ধার সাথে কুরআন পাঠ করতে হয়। হজরত আলী রা: বলেন, ‘আমার যখন মন চাইত আল্লাহর সাথে কথা বলব, তখন কুরআন তিলাওয়াত শুরু করে দিতাম।’

মানুষ কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহকে ভুলে যায়। ফলে তার হৃদয়ে ঝং ধরে। যখন কুরআন পাঠ করে আল্লাহর রহমতে মানুষের হৃদয় পরিষ্কার হতে থাকে। মানুষের মনে সুপ্রবৃত্তি জাগ্রত হয়। আবু মুসা আল আশআরি রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ হলো লেবুর মতো তার স্বাদও ভালো আবার ঘ্রাণও ভালো। মুমিনের উদাহরণ হলো খেজুরের মতো, তার স্বাদ ভালো কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই, আর কুরআন তিলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তির উদাহরণ হলো ওই ফুলের মতো ঘ্রাণ ভালো কিন্তু স্বাদ তিক্ত, আর যে কুরআন তিলাওয়াত করে না এমন হাফেজের উদাহরণ হলো মাকাল ফলের মতো যার স্বাদ তিক্ত এবং সুগন্ধ নেই।’ (বুখারি-৭৫৬০)

আল-কুরআন সর্বযুগের সর্বোত্তম কিতাব। হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: কুরআন পাঠকারী ও শিক্ষা প্রদানকারীকে সর্বোত্তম মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে কুরআন শেখায়।’ (বুখারি)

আল-কুরআন এসেছে জীবন্ত মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচিত করাতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমরা আল-কুরআনকে যেন মৃত ব্যক্তির কিতাব বানিয়ে ফেলছি। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে কুরআন পড়া শুরু করে দেয়। আবার মৃত ব্যক্তির চার দিন, ১০ দিন কিংবা ৪০ দিনের দিন টাকা দিয়ে আলেমদের দিয়ে আল-কুরআন খতম করানো হয়। এতে মৃত ব্যক্তির রুহের ওপর সওয়াব পৌঁছানো উদ্দেশ্য থাকে সন্দেহ নেই। কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে অবশ্যই সওয়াব আছে। কিন্তু জীবিতাবস্থায় কুরআনের অনুশীলন অনুসরণ না করে মৃত প্রায় বা মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কুরআন তিলাওয়াত কুরআন নাজিলের প্রকৃত উদ্দেশ্যেও সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনকে মানবজাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে নাজিল করেছেল। আল-কুরআন মানুষকে দুনিয়ায় শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন ও আখিরাত জীবনের সফলতার পথ দেখায়।

তাই আমরা নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করব। কুরআনের অর্থ ও ভাব অনুধাবন করব এবং কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করব। যারা কুরআন পাঠ করে অথচ সে অনুযায়ী আমল করে না, তাদের জন্য আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার দরবারে শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব। পবিত্র কুরআন পাঠকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় সম্মান বৃদ্ধি করে দেন এবং আখিরাতে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন পড়া, বোঝা এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us