মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের তালিকায় আর নেই এইডস

মেহেদী হাসান | Jun 03, 2019 02:42 pm

-

 

তালিকার শীর্ষে হৃদরোগ, দ্বিতীয় স্ট্রোক বিশ্বব্যাপী দুই রোগে এক বছরে মারা গেছে এক কোটি ৫২ লাখ মানুষ সবচেয়ে বেশি এইডস আক্রান্ত মানুষের বাস দক্ষিণ আফ্রিকায়

বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল এইডস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০০ সালের এ তালিকায় এইডসের স্থান ছিল সপ্তম। আর একই সংস্থা প্রণীত ২০১৬ সালের মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের তালিকায় নেই এইডসের নাম। গত বছর মে মাসে প্রকাশিত এ তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে ডায়াবেটিসের নাম।

গত প্রায় তিন দশক ধরে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হিসেবে আবির্ভূত হয় এইডস রোগ। এখন পর্যন্ত এ রোগের পূর্ণ নিরাময় বা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এইডস ছড়ানো এবং এইডসের মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে সারা বিশ্বে এইডসে মারা যায় ১৫ লাখ মানুষ। আর ২০১৬ সালে মারা যায় ১০ লাখ। ২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় শীর্ষ ১০টি মৃত্যুর কারণের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে যক্ষ্মার নাম। ২০১৬ সালে যক্ষ্মায় মারা গেছে ১৩ লাখ মানুষ। সপ্তম স্থানে থাকা ডায়াবেটিসে মারা গেছে ১৬ লাখ। অথচ ২০০০ সালে ডায়াবেটিসে মারা গেছে ১০ লাখ মানুষ। ২০০০ সালে মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের তালিকায়ও ছিল না ডায়াবেটিসের নাম। এ ছাড়া ডায়ারিয়ায় মৃত্যুও কমেছে। অপর দিকে ২০০০ সালে তালিকায় ডায়ারিয়ার স্থান ছিল পঞ্চম আর ২০১৬ সালের তালিকায় ডায়ারিয়ার স্থান কমে হয়েছে নবম। ২০০০ সালে ডায়ারিয়ায় মারা যায় ২৪ লাখ মানুষ আর ২০১৬ সালে মারা গেছে ১৪ লাখ মানুষ।

মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের তালিকায় প্রথমে রয়েছে হৃদরোগ। দ্বিতীয় স্থানে স্ট্রোক। বিশ্বব্যাপী এ দুই রোগে ২০১৬ সালে মারা গেছে এক কোটি ৫২ লাখ মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে তিন কোটি ৬৭ লাখ মানুষ এইডস রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, শতকরা হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি এইডস আক্রান্ত (বয়স্ক মানুষ) দেশগুলো হলো সুইজারল্যান্ড ২৭ ভাগ, লেসেথো ২৫ ভাগ, বসনিয়া ২১ দশমিক ৯০, দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ দশমিক ৯০, নামিবিয়া ১৩ দশমিক ৮০, জিম্বাবুয়ে ১৩, জাম্বিয়া ১২ এবং মোজাম্বিক ১২।
সবচেয়ে বেশি এইডস আক্রান্ত মানুষের বাস দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭১ লাখ, নাইজেরিয়ায় ৩২ লাখ এবং ভারতে ২১ লাখ।

এইডস হলো এইচআইভি নামক ভাইরাসে সৃষ্ট একটি রোগ যা মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে একজন মানুষ সহজেই যেকোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়, যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। চিকিৎসা গ্রহণ না করলে সর্বোচ্চ ১১ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে রোগী। আর চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুকে আরো কিছুকাল বিলম্বিত করা যায়, কিন্তু পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। ২০০৯ সালে আরভি ১৪৪ নামক যে ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়েছে, তা এইডস সংক্রমণ ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে মর্মে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি বাজারে ছাড়ার লাইসেন্স দেয়া হয়নি। ব্যয়বহুল এন্টিরিট্রোভাইরাল থেরাপি নামক চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশে এইডস রোগীদের মৃত্যু কিছুটা বিলম্বিত করা সম্ভব হয়েছে এবং তারা অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাপনও করতে পারছে।

এইডস প্রথম চিকিৎসাগতভাবে শনাক্ত করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালে। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকগ্রহণকারী এবং সমকামী কিছু পুরুষের শরীরে তখন এ রোগ ধরা পড়ে, যদিও এর উৎপত্তি ১৯ শতকের শেষে আর ২০ শতকের শুরুতে পশ্চিম আফ্রিকায় বলে গবেষণায় বলা হচ্ছে।

অনিরাপদ অবাধ যৌনতার মাধ্যমে বিশ্বের দেশে দেশে একসময় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এইডস। ১৯৯০ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে এটি প্রচণ্ড ভীতিকর একটি রোগ হিসেবে আবির্র্ভূত হয়। সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়াও ধর্মীয়ভাবেও এ রোগ ও রোগীদের নিয়ে নানা ধরনের সংস্কার ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, একসময় মনে করা হতো প্রতিরোধ করা না গেলে আফ্রিকার কিছু কিছু দেশ বিরানভূমিতে পরিণত হতে পারে। এরপর থেকে গত প্রায় তিন দশক ধরে দেশে দেশে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নিরাপদ যৌনতা নিশ্চিত করা। গবেষণায় বলা হচ্ছে- কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us