একটি পরামর্শে যেভাবে আকবর আলী এখন সম্রাট আকবর

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর অফিস | Feb 12, 2020 07:58 pm
আকবর আলীর বাবা-মা (ইনসেটে আকবর আলী)

আকবর আলীর বাবা-মা (ইনসেটে আকবর আলী) - নয়া দিগন্ত

 

বিকেএসপিতে ভর্তির দিন সনদ নিয়ে বিড়ম্বনায় পরা ছেলেটিই এখন বিশ্বসেরা অধিনায়ক। গ্রামে খেলার সময় স্বপ্ন দেখতেন বোলার হওয়ার। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে উইকেট কিপার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন আকবর আলী। যিনি এখন বিশ্বসেরা অধিনায়ক।

তার বাড়ি রংপুর মহানগরীর পশ্চিম জুমাপাড়ায়। নয়া দিগন্তের অনুসন্ধানে আকবরের বিশ্বসেরা হওয়ার গল্প উঠে এসেছে তার বাবা মায়ের আলাপনে। এদিকে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ঘোষণা দিয়েছেন, আকবর আলীকে দেয়া হবে গণসংবর্ধনা। যে সংবর্ধনা এর আগে কেউ কখনো পাননি।

রংপুর মহানগরীর পশ্চিম জুমাপাড়া, খুব একটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেখানে। রাস্তার পাশেই বাড়ি আকবর আলীর । নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যেমন দশা, তাদেরটাও একই রকম। পিতা মোহাম্মদ মোস্তফা একজন পেশায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী। তার চার ছেলে এক মেয়ের মাঝে তৃতীয় আকবর। সেই ভদ্র নম্র ছেলেটিই এখন সারাবিশ্বে আলোচিত নাম। ক্রিকেট দুনিয়ার কিং টাইগার। আকবর এখন বিশ্ব সেরা উইকেট কিপার। অবশ্য বোলার হতে চেয়েছিলেন আকবর । কিন্তু মেজ ভাই আরমানের ইচ্ছাতেই হয়ে গেলেন উইকেটকিপার।

মেজো ভাই আরমান হোসেন জানান, আমরা বাড়ির সরু গলিতেই একসাথে সব সময় ক্রিকেট খেলেছি। এজন্য অনেক বকাঝকাও শুনেছি। মূলত আকবর বাড়িতে খেলার সময় বোলারই হতো। বোলার হওয়ার ইচ্ছাও ছিল তার। কিন্তু বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর সে আমাকে বললো আমি কী করবো।

তখন আমি বললাম, উইকেট কিপিং নে। আমার কথা মতো বোলার হওয়ার শখ বাদ দিয়েছিল সে। উইকেট কিপিং বেছে নিলো। আজ আমার ভাই, বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে তুলে ধরলো। প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জয় করলো। এটা আমার এতই ভালোলাগা যে বোঝাতে পারবো না।

আকবরের বড় ভাই মুরাদ হোসেন জানান, অনেক কষ্ট করেছে সে। বিকেএসপিতে কঠিন পরিশ্রম করে খেলেছে। জেলায় খেলেছে। বিভাগে খেলেছে। ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ তে খেলেছে। খুব ভালো খেলেছে। তারপর সে ১৯ এ খেলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে গর্ব এনে দিয়েছে। আমি ভাই হিসেবে এই গর্ব কিভাবে প্রকাশ করবো বলতে পারবো না।

অন্যদিকে আকবরের মা সাহিদা বেগম। আকবরের কৃতিত্বে অত্যন্ত গর্বিত তিনি বলেন, ছোট্র ছেলেটা আমার কষ্ট করেছে। অনেক। কোনোদিনও বাড়ি থেকে টাকা নেয় নি। সব সময় নিজের টাকা নিজেই জোগাড় করে পড়াশুনা করেছে। ছেলেটা আমার খবুই ভদ্র, নম্র।
এখন আমার স্বপ্ন ছেলে জাতীয় দলে খেলবে।

আকবরের পিতা মোহাম্মদ মোস্তফার চোখেও পানি। বলেন, করিমিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিল প্রথমে। পরে সেখান থেকে লায়ন্স স্কুলে। সেখানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার পর ২০১২ সালে ভর্তি হয় বিকেএসপিতে। বিকেএসপিতে ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ন হলেও ভর্তি নিয়ে মহাঝামেলায় পড়ে যান। সেই গল্প শোনালেন তার বাবা। তিনি জানালেন, ভুলে সার্টিফিকেট নিয়ে যাই নি আমি। সে কারণে কোনোভাবেই ওকে ভর্তি নিচ্ছিল না। এক পর্যায়ে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্ণেল সাহেব আমার অসহায়ত্বের কথা শুনলেন। আকবরের সাথে আলাপ করলেন। কিছুক্ষন পর বললেন একটা সাদা কাগজে দরখাস্ত লিখে দিতে। আমি দরখান্ত লিখে দিলাম। তার পর ওকে ভর্তি করে নেয়া হলো। সেদিন যদি কর্নেল সাহেব ওই সুযোগ না দিতেন, তাহলে আমার ছেলে কোনদিনো বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারতো না। আজ কর্নেল সাহেবের সেই উদারতায় আমার ছেলে বিশ্বসেরা হয়েছে। আমি আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া করছি।

পাশাপাশি তিনি সেই কর্নেল সাহেব, বিকেএসপি, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়।

তিনি বলেন, আকবর পড়ালেখা করেছে খুব কষ্ট করে। কোনদিনো বাড়ি থেকে একটি টাকা নেয়নি। নিজেই টাকা কামাই করেছে পড়েছে। সে খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করতো। সব কিছুই সে করেছে নিজের টাকায়। ওর কষ্টের কথাগুলো মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে। আবার অনেক ভালো লাগে। আজ সে অনেক উচ্চতায় গেছে। আজ আকবর মানে বাংলাদেশ।

তিনি আরো জানান, পড়ালেখা খেলা, সবখানেই ভাল আকবর। আচরণে ব্যবহারে মুগ্ধ সবাই।

আকবরের ভাবী (বড় ভাইয়ের স্ত্রী) জানান, ২৩ তারিখে ওর ছিল গ্রুপ পর্বের খেলা। তার আগের দিন ওর একমাত্র বোন সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা গিয়েছে। ওর এই জয়ে সব থেকে যে বেশি খুশি হতো। কারণ আকবর আলী ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে গেলেই জায়নামাজে বসে থাকতেন একমাত্র বড় বোন খাদিজা খাতুন রানী। জায়নামাজে বসে ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া করতেন তিনি। যেন ভাই ভালো খেলে সুস্থ শরীর আর জয় নিয়ে ফিরতে পারে ঘরে। সেই আকবর আলী যুব বিশ্বকাপ জয় করেছে। কিন্তু তা তো দেখতে পারলেন না সেই বোন খাদিজা খাতুন রানী। গত ২২ জানুয়ারি যমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা যান।

একমাত্র বোনের মৃত্যুরশোককেই শক্তিতে পরিণত করেছিলেন আকবর। সেদিন শোককে সে শক্তিকে পরিণত করে দেশের জন্য খেলেছে। দেশকে সারা বিশ্বের মধ্যে বড় করেছে। ও আরও ভালো করবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us