৪০-এর পর যেসব সমস্যায় পড়েন নারীরা

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Feb 21, 2020 08:51 am
৪০-এর পর যেসব সমস্যায় পড়েন নারীরা

৪০-এর পর যেসব সমস্যায় পড়েন নারীরা - ৪০-এর পর যেসব সমস্যায় পড়েন নারীরা

 

দেহযন্ত্র সবসময়ই কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ে। তবে ৪০ বছর একটি বিশেষ মাইলফলক। এর পর দেহঘড়ি একটু ভিন্ন রকম আচরণ করতে থাকে। এই পরিবর্তন ঘোষণা দিয়ে আসে, তা নয়। আবার ব্যক্তিভেদে পরিবর্তনও হয় একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। নারী ও পুরুষদের ক্ষেত্রেও সমস্যা ও এর প্রকৃতি আলাদা আলাদা। এখানে নারীদের সমস্যাগুলো বিবেচনা করা যাক।

হর্মোন
বয়স বাড়ার প্রতিটি দশকে, নারীদের শরীরে ও মনে অদ্ভুত ধরনের পরিবর্তন হয়। ১০, ২০, ৩০ আর তারপর ৪০! এই সময়ে নারীদের মারাত্মক রকমের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

চল্লিশকে বলা হয় প্রিমেনোপজাল ফেজ। এই সময় শরীরে ইস্ট্রোজেন হর্মোনের নিঃসরণ হ্রাস পেতে থাকে। হর্মোনের ঢেউ হঠাৎ স্তিমিত হওয়ার সঙ্গে শরীর চট করে মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে দেখা দেয় হৃদযন্ত্রে গোলযোগ, ডায়াবেটিস, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, চুল ঝরতে শুরু করা, চোখে কম দেখার মতো সমস্যা, মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন ইত্যাদি। যারা এখনো সন্তান ধারণ করেননি, তাদের প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত সমস্যারও আশঙ্কা থাকে।

ত্বক ও চুল : ইস্ট্রোজেন হর্মোনের নিঃসরণ হ্রাস পাওয়ার ফলে ত্বক কুঁচকে যেতে থাকে। মেচেতা দেখা দেয়, ত্বকের জৌলুস কমতে থাকে, চোখের চারপাশে ডার্ক সার্কেলসহ বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা দিতে পারে। চুল উঠতে থাকে গোছা গোছা। পাকতেও শুরু করে। ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ওষুধের সাহায্যে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

চোখ : গ্লকোমা, ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের সমস্যা চল্লিশ থেকে জানান দিতে পারে। শুরু হতে পারে ‘নিকট’ দৃষ্টির সমস্যাও। কারো কারো ছানি পড়ার সমস্যাও শুরু হয়। তাই চোখের সমস্যা হলে এড়িয়ে যাবেন না। সময়ে চিকিৎসা শুরু করান।

হাড়ের সমস্যা : চল্লিশের পর ক্যালশিয়াম জমা হওয়া কমতে থাকে। হাড় ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মেরুদণ্ডের হাড়ের ক্ষয়ের কারণে পিঠ ব্যথার উপসর্গও দেখা দেয়। নখ ভঙ্গুর ও কালো হতে থাকে। ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায়। তাই নিয়মিত ক্যালশিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার দিকে নজর দিন ও অন্তত প্রতিদিন ১০ মিনিট রোদে থাকুন।

মেদ : এই বয়সের পর শরীরের মেটাবলিজমের হার বা খাদ্যগ্রহণ, শোষণ ও আত্তীকরণের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে পড়ে। ফলে শরীরে জমতে পারে মেদ, বিশেষ করে পেটের মেদ বাড়তে থাকে। আবার ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

হার্ট ও স্ট্রোকের সমস্যা : রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বন্ধ্যাত্ব : অনেকেই কাজ বা গবেষণার জন্য চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তান নেন না। এদিকে চল্লিশের পরে কমে আসে ওভামের সংখ্যা। ওভামের গুণগত মানও স্বাস্থ্যকর থাকে না। ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। সন্তানধারণ করলেও মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আবার চল্লিশের পর প্রেগন্যান্সি আসলে উচ্চ রক্তচাপ, জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার আশঙ্কা বাড়ে, যা প্রেগন্যান্সিকে ঝুঁকিবহুল করে তোলে। তাই সবচেয়ে ভালো কাজ হলো, বয়স কম থাকতে ওভাম সংরক্ষণ করে রাখা।

ক্যান্সারের উপসর্গ : প্রি মেনোপজাল থেকে মেনোপজ হওয়া পর্যন্ত মেনস্ট্রুয়েশনে ব্লিডিং ক্রমশ কমতে থাকে। অথচ কিছু মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় মাত্রাতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে বা মেনস্ট্রুয়েশন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি মোটেই হেলাফেলার নয়। কারণ সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার, ইউটেরাইন ক্যান্সার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারেও এমন লক্ষণ দেখা যায়। চল্লিশের পর ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই টিউমার বা অস্বাভাবিক কিছু নজরে এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মেজাজের পরিবর্তন : হর্মোনের বিপুল পরিবর্তনে অনিদ্রা দেখা দেওয়া আশ্চর্য নয়। এছাড়া মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অবসাদে ভোগা, রাতে ঘুমানোর সময় ঘাম হওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

সম্পর্ক : ইস্ট্রোজেনের অভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সমস্যা হয়। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স : এই বয়সের পর বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। কারণ ব্লাডারের ইউরিন ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেলে ও ব্যায়াম করলে সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কী করবেন?
 ভাত, রুটি, আলুর মতো শর্করাজাতীয় খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে ফেলুন। চিনি, গুড়, মিষ্টি, চকোলেট খাওয়া কমান। দু’বেলা খাবার মেন্যুতে রাখুন ১০০ গ্রাম মাছ বা চিকেন অথবা ডিম। দেহের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাবে প্রোটিন। শরীর দ্রুত ভেঙে যাবে না। ক্যালশিয়ামের জন্য খান ডিমের সাদা অংশ, দুধ। ফ্যাটও জরুরি। তাই সারাদিনে দু’চারটি আমন্ড খান। খেতে পারেন চিয়া সিড। ভাজাভুজি খাওয়া যথাসম্ভব কমান। বরং বেশি করে পাতে রাখুন সবুজ ও রঙিন শাকসব্জি। রোজ একটি করে মরশুমি ফল খান। মনে রাখবেন, চল্লিশের পর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টই আপনার সবচাইতে বেশি প্রয়োজন।

 প্রতিদিন ৩৫ মিনিট হাঁটুন। খালি হাতের ব্যায়াম ও সম্ভব হলে ওজন তোলা অভ্যেস করুন। মোট কথা পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ান। নাহলে শরীরের ভার পড়বে হাড়ের উপরে, যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যার উদ্রেক ঘটাতে পারে।

 চল্লিশের পর নিয়মিত বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জরুরি। বছরে অন্তত একবার বোন ডেনসিটি টেস্ট, ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং, রক্তচাপ ও লিপিড টেস্ট করান। দরকার নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করানোর। সঙ্গে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার জানতে প্যাপ টেস্ট এবং ইউটেরাস সহ এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে পেলভিক একজামিনেশনও (আলট্রাসাউন্ড) জরুরি।

পরামর্শে স্পর্শ ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট এবং ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম।
সূত্র : বর্তমান

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us