একজন জেনারেল যেভাবে ভরাডুবির শিকার হলেন

ইকরাম সেহগাল | Apr 10, 2020 09:43 pm
জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্ট

জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্ট - সংগৃহীত

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ১৯৬৪ সালে আমেরিকান গৃহযুদ্ধে কনফেডারেসির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্টকে মার্কিন সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ১৮৬৫ সালে জয়লাভ করেন। যুদ্ধের সময় তার প্রায় সব মূল স্টাফ ছিলেন বেসামরিক। কিন্তু তাতে সামরিক সাফল্য পেতে কোনো সমস্যা হয়নি।

জেনারেল গ্রান্ট ১৮৬৯ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮তম প্রেসিডেন্ট হন। ওই সময় পর্যন্ত তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। নিজে অত্যন্ত বিবেকবান ও সৎ হওয়া সত্ত্বেও তার প্রশাসন নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। জেনারেল গ্রান্ট তার আশপাশে থাকা লোকজনের মধ্যে তার চিফ অব স্টাফ রাওলিনসকে সবচেয়ে অপরিহার্য বিবেচনা করতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিওএস হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ৫ মাসের মাথায় তিনি যক্ষ্মা রোগে পরলোকগমন করেন।

এরপর জেনারেল গ্রান্টের দুর্ভাগ্য হলো যে তার ঘনিষ্ঠ অনেক উপদেষ্টা তাকে ভয়াবহভাবে ডুবিয়ে দেয়। তাদের কর্মকাণ্ডই তাকে তার সম্ভাবনা বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাওলিনসের স্থানে নিয়োগ পাওয়া অরভিল ব্যাবককের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়, ক্যাবিনেট বিভাগ ও নিয়োগে তিনি কলকাঠি নাড়াতেন বলে অভিযোগ আসে।

যুদ্ধক্ষেত্রে অভিন্ন অভিজ্ঞতার কারণে ব্যাবকককে সব ধরনের রাজনৈতিক আক্রমণ থেকে গ্রান্ট আড়াল করতেন। ১৮৭৫ সালে ‘উইস্কি রিং’-এর সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত হলেও গ্রান্ট তাকে রক্ষা করে তার পক্ষ হয়ে তাকে লিখিত সাফাইয়ের কারণে। ফলে ব্যাবকক খালাস পান।

তবে আরো কিছু কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাবকককে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যালিটন ফিশের কাছ থেকেও চাপ এসেছিল। তাকে বিবেচনা করা হয গ্রান্টের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে দক্ষ অফিসার।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রেসিডেন্ট গ্রান্টের মন্ত্রিসভার সদস্য, স্টাফ ও উপদেষ্টারা ছিলেন যেনতেনভাবে বাছাই করা। নিজে খুবই সৎ হলেও জেনারেল গ্রান্ট মানুষ চিনতেন না। তিনি ভুল লোককে নিয়োগ করতেন এবং অসৎ ও সুযোগসন্ধানী হিসেবে প্রমাণিত লোকদের খুবই অনুগত হয়ে পড়তেন।

তার প্রশাসনের কেলেঙ্কারি তার উভয় মেয়াদি প্রেসিডেন্ট আমলেই ছিল। তিনি সদেচ্ছাপূর্ণ লোক হলেও ছিলেন ক্ষীণদৃষ্টির। তিনি এখন এক পক্ষের, পরে আরেক পক্ষের কথা শুনতেন। কখনো জেনারেলদের, কখনো মন্ত্রিসভার সদস্যদের, কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো উপদেষ্টাদের কথায় কান দিতেন। ইতিহাসবিদ হেনরি ওয়াল্টন্যান বলেছেন, গ্রান্টের রাজনৈতিক আনাড়িপনা তার কার্যকারিতা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তার সততা ও আন্তরিকতার কথা কি কারো মনে আছে?

যেসব ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা সৎ বা দক্ষ নয়, তারা সাধারণত নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকে। এদের কারো থাকে ক্ষমতার লিপ্সা, কারো থাকে প্রতিশোধের আকাঙ্ক্ষা, কারো থাকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তির ইচ্ছা। আবার অনেকে ঈর্ষার বশবতী হয়ে বা দায়িত্ব পালনে অনুপযুক্ত বিবেচনা করে কাউকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us