করোনা বিপর্যয়ে মানবিক উদ্যোগ

পার্থ এমএন | Apr 23, 2020 06:05 pm
করোনা বিপর্যয়ে মানবিক উদ্যোগ

করোনা বিপর্যয়ে মানবিক উদ্যোগ - সংগৃহীত

 

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে এখন নির্জনতা আর ভুতুরে নীরবতা বিরাজ করছে। গরম বাতাসে ঝরে পড়া পাতাই কিছু শব্দ করছে। 

কিন্তু শহরতলীর একটি রেস্তোরাঁয় চলতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ৮ থেকে ১০ জন খিচুরি রান্নায় ব্যস্ত। বিশাল বিশাল ডেগচিতে চলতে রান্নার কাজ।
তারা নগরীর গৃহহীন, বস্তিবাসী ও অভিবাসী ৫ হাজার লোকের খাবার তৈরী করে প্যাকেজজাত করার দায়িত্বে নিয়োজিত।

মুম্বাইয়ের কর্মীবাহিনীর কাউকে যাতে না খেয়ে রাত কাটাতে না হয়, সেজন্য KhaanaChahiye.com যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এই রেস্তোরাঁ তারই একটি অংশ বাস্তবায়ন করছে। এ ধরনের আরো ৫টি স্থানে রান্না চলছে। মোট ৭০ হাজার মিল প্রস্তুত হচ্ছে দিনে।
‘খানা চাহিয়া’ নামের এই উদ্যোগের পেছনে থাকা আয়োজকেরা বলছেন যে এই নগরীর ক্ষুধার্তদের অবস্থা জানার জন্যই এই প্রয়াস।
তাদের ওয়েবসাইটটি ক্ষুধার্তদের খাওয়ার অর্থ যোগার করার জন্য দান গ্রহণ করে, কোথাও ক্ষুধার্ত লোক আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করে।

ভারতে গত ২৫ মার্চ লকডাউন জারি করা হয় করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। প্রথমে তিন সপ্তাহের জন্য তা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে তা ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের এক চতুর্থাংশের বেশি দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বের বৃহত্তম লকডাউনে তাদের মধ্যে নজিরবিহীন দুর্দশা নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিতক ও গরিবদের জন্য খুবই খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করেছে।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়েই সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তবুও ভারতের নগরী ও গ্রামের হৃদয়বান লোকজনের ওপর দায়িত্ব বর্তেছে শূন্যতা পূরণ করার।
যেভাবে শুরু হলো খানা চাহিয়ার
KhaanaChahiye.com –প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগর হলেন প্রজেক্ট মুম্বাই নামের একটি অমুনাফামূলক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা শশির যোশি।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, আমার কাছে খেতে না পাওয়া লোকদের খবর আসছিল। এক বন্ধুর সাথে আলাপকালে ধারণাটি উদয় হয়। আমি তখন আরো দুজনের সাথে কথা বলি।

তাদের একজন হলেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ রুবেন ম্যাসকারেনহাস। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, কর্মীবাহিনীর ক্ষুধায় কষ্ট পাওয়ার অনেক খবর আমার কাছে আসছিল। ২৯ মার্চ আমরা একত্রিত হয়ে ১২ শ’ মিল প্রস্তুত করি।
তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কে এই খাবার বিলি শেষ হয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবকেরা বলেন, খাবারের জন্য মারামারি লেগে গিয়েছিল। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, আমাদের পরিস্থিতি যাচাই করা দরকার।
তিনি বলেন, আমরা লোকজনের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা শুরু করলাম। কয়েকটি রেস্তোরাঁও এগিয়ে এলো। তারা তাদের রান্নাঘর খুলে দিয়ে খাবার তৈরী করার ব্যবস্থা করে দিলো।

খানা চাহিয়ার খাবার তৈরী করতে নীতি গোয়েল তার ৫টি রেস্তোরাঁ খুলে দিয়েছিলেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, আমি একটি পত্রিকায় পড়েছিলাম যে শ্রমিকদের সন্তানেরা মাটিতে বসে খাবার খাচ্ছে।
তিনি বলেন, এটা আমার কাছে আতঙ্কের খবর মনে হলো। এখন খাবার খেতে বসছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। তাদের অনেকে পরিস্থিতির শিকার।

তাদের এই উদ্যোগে আরো লোক এগিয়ে এলো। তিন সপ্তাহ পরে মুম্বাইজুড়ে ৭০ হাজার লোকের খাবার সরবরাহ করার ব্যবস্থা হয়েছে।

লকডাউনের প্রথম কয়েক দিন পানি খেয়ে ছিলাম
প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টায় ছয়টি ট্রাক ও কয়েকটি প্রাইভেট কার নগরীর ছয়টি স্থান ও মোড়ের দিকে রওনা হয়ে যায়।
শনিবার এসব গাড়ির একটি থামে পূর্ব মুম্বাইয়ের একটি বস্তির কাছে। এখানে ইতোমধ্যেই এক হাজার লোক লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে।
ম্যাসকারেনহাস বলেন, আমরা এনজিওগুলোর সমন্বয়ে কোথায় সবচেয়ে বেশি খাবার প্রয়োজন তা শনাক্ত করার চেষ্টা করি।

এখানে যারা লাইনে রয়েছে, তাদের অনেকে জুতা কারখানার শ্রমিক। লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ রয়েছে।
ইন্দ্রজিত নামের একজন বলেন, লকডাউনের প্রথম দিকে ক্ষুধা লাগলে তিনি কেবল পানি পান করতেন। তার পরিবার রয়েছে উত্তর ভারতে। তবে কয়েক দিন ধরে দিনে এক বেলা করে খাবার পাচ্ছি।
তিনি বলেন, লকডাউনের শুরুতেই জুতা কারখানার মালিকেরা তাদের ফোন বন্ধ করে দেন। ফলে শ্রমিকদেরকে নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়।
ইন্দ্রজিত বলেন, ট্রেন চলাচল শুরু হলেই তিনি গ্রামে ফিরে যাবেন।

লজ্জার কথা
তবে ৮ বছর বয়স্কা শামার কাছে বিষয়টি তত খারাপ লাগছে না। মুখে উড়না পেঁচিয়ে সে খাবার সংগ্রহ করল। ‘আমি ভাত পেয়েছি’ বলেই লাফিয়ে ওঠল মেয়েটি। তারপর দিলো দৌড়।
কম্পিউটার পেশাজীবী প্রতীক মুনি আল জাজিরাকে বলেন, কী অবস্থা বুঝতে পারছেন? তিনি বলেন, এখানে যারা খাবারের জন্য লাইন ধরেছে, তাদের প্রায় সবাই দিনমজুর। তাদের মালিকেরা পাওনা না দিয়েই তাদেরকে বিদায় করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবার তাদের গৃহকর্মীদের দায়িত্ব নিলে তাদের কাজ অনেক কমে যেত।
তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে তারা অভিবাসী শ্রমিক ও গৃহহীনদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারতেন।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা মনে করছেন, চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন আরো ৫ হাজার মিলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

আল জাজিরা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us