ইস্তেগফারে যেসব কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে

আবদুল্লাহ আল মামুন আশরাফী | Oct 04, 2020 02:19 pm
ইস্তেগফারে যেসব কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে

ইস্তেগফারে যেসব কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে - ছবি সংগৃহীত

 

সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আমাদের জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। জীবনজুড়ে এ দুয়ের আগমন অনস্বীকার্য। জীবনের কোলাহল যেখানে সুখ-দুঃখের উপস্থিতিও সেখানে। কখনো আমাদের জীবনবৃক্ষ সুখের সুনির্মল বাতাসে আন্দোলিত হয়। ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে যায়। আবার কখনো দুঃখের ঝড়ো হাওয়ায় সে বৃক্ষটি নুইয়ে পড়ে। দুমড়ে মুচড়ে যায়। কখনো অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে দুলতে থাকে আমাদের জীবনতরী। হতাশায় ছেয়ে যায় আমাদের হৃদয়াকাশ। অধরা সুখপাখিটা যেন কোন সুদূরে হারিয়ে যায়। জীবনপাতার এ কঠিন অধ্যায়ে আমাদের অনেকে ‘ভিন্নপথে’ পা বাড়ায়। সুখের বদলে মরীচিকার পিছনে ছুটে বেড়ায়। অধরা সুখ আর ধরা দেয় না।

প্রিয়বন্ধু! সুখ পেতে হলে আমাদের চিরসুখের সুনির্মল ঠিকানা ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকময় নির্দেশনাগুলো যথার্থভাবে অনুসরণের মাঝেই মানবজীবনের কাক্সিক্ষত সফলতা, নিরাপদ জীবনের প্রকৃত ঠিকানা নিহিত।
পবিত্র ও নিরাপদ জীবন লাভে কুরআন সুন্নাহর গুরুত্বপূর্ণ ও অতি ফলপ্রসূ একটি নির্দেশনা হচ্ছে ‘ইস্তেগফার’। ইস্তেগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্ব, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা।

বাস্তবিকপক্ষে প্রতিটি মানুষই দুর্বল। অসহায়ত্বের চাদরে মোড়ানো মানবজীবন। চিরসত্য এ কথাটিই ইরশাদ হয়েছে পবিত্র কুরআনুল করিমে : ‘আর মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে’ (সূরা নিসা : ২৮)।
তাই দেখা যায় ‘দূর্বল মানুষ’ প্রায়ই প্রবৃত্তির তাড়নায় নানা গোনাহে জড়িয়ে নিজের জীবনকে অশান্তির দাবানলে ফেলে দেয়। নিজেকে ভয়াবহ শাস্তির উপযুক্ত করে নেয়।
দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তার দুর্বল অসহায় বান্দাদের একটি অনন্য উপায় বাতলে দিয়েছেন। অশান্তির দাবানল থেকে বেঁচে সুখের নির্মল উদ্যানে বিচরণের একটি অব্যর্থ পাথেয় প্রদান করেছেন। আর সেটি হচ্ছে ইস্তেগফার।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অতঃপর তাঁর দিকেই ফিরে যাও। তিনি তোমাদেরকে এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং যে কেউ বেশি আমল করবে তাকে নিজের পক্ষ থেকে বেশি প্রতিদান দেবেন। (সূরা হুদ : ৩)
উল্লেখিত আয়াতে ইস্তেগফারের বিনিময়ে দুনিয়াতে উত্তম জীবন তথা নিরাপদ সুখময় জীবনলাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

ইস্তেগফারকারীকে আল্লাহ তায়ালা আজাব থেকে রক্ষা করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তেগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল : ৩৩)

ইস্তেগফারের মাধ্যমে ধনসম্পদে সমৃদ্ধি আসে। সন্তান-সন্ততিতে বরকত হয়। সুখময় নিরাপদ জীবনলাভের তাওফিক হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চিতভাবে যেন তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন। এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্যে নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দিবেন। (সূরা নূহ : ১০-১২)

মানবেতিহাসের সবচেয়ে সফল ও পবিত্র মানুষ হজরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর পবিত্র অভ্যাস ছিল বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। হৃদয় খুলে প্রভুর দরবারে নিজের দীনতা হীনতা প্রকাশে সদা তৎপর থাকতেন তিনি।
হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম!! আমি দৈনিক সত্তর বারেরও অধিক আল্লাহ তায়ালার কাছে ইস্তেগফার করি ও তাঁর অভিমুখী হই। (সহিহ বুখারি : ১১/৬৩০৭, জামে তিরমিজি : ৫/৩২৫৭, মুসনাদে আহমাদ :২/২৮২,৩৪১)।
হজরত আগার বিন ইয়াসার আল মুযানী রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ তায়ালার অভিমুখী হও এবং কাছে ইস্তেগফার করো। জেনে রেখো, আমি প্রতিদিন একশ’বার আল্লাহ তায়ালার অভিমুখী হই। তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। (সহিহ মুসলিম : ৪/২০৭৫)

ইস্তেগফারের মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়। সঙ্কট নিরসন হয়। আয় উপার্জনে প্রভূত বরকত নসিব হয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে আল্লাহ তায়ালা তার সব সঙ্কীর্ণতা দূর করে দেন। দুশ্চিন্তা-বিপদাপদ দূরীভূত করে দেন। আল্লাহ এমন জায়গা থেকে তার রিজকের ব্যবস্থা করে দেন যে, যে কল্পনাও করতে পারে না। (সুনানে আবু দাউদ)
আজ পৃথিবীর সর্বত্রই সঙ্কট আর সঙ্কট। ব্যক্তিগত সঙ্কট। পারিবারিক টানাপোড়েন। বৈশ্বিক বিপর্যয়। এক কথায় সঙ্কট আর বিপদাপদের ঝড়ো হাওয়ায় প্রতিটি জনপদ আজ বিধ্বস্ত। এক কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীটাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলছে।

তাই আসুন আমরা সবাই ইস্তেগফার করি। আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রতিনিয়ত নিজেদের দীনতা হীনতা পেশ করি। আল্লাহ তায়ালার অভিমুখী হই। নিরাপদ সুখময় জীবন লাভ করি।

লেখক : মুহাদ্দিস, তারাব সিরাজুল উলুম আরাবিয়া মাদরাসা ঢাকা ও খতিব, বাইতুস সালাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, নোয়াপাড়া বাজার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us