সবচেয়ে বড় জিহাদ কোনটি?

মুফতি জাকারিয়া মাসউদ | Oct 05, 2020 05:20 pm
সবচেয়ে বড় জিহাদ কোনটি?

সবচেয়ে বড় জিহাদ কোনটি? - ছবি সংগৃহীত

 

মনের খেয়াল খুশি মতো চলার নামই হলো প্রবৃত্তির দাসত্ব। প্রবৃত্তি মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। যত শত্রুর বিরুদ্ধে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়, যুদ্ধ করতে হয়, তার মধ্যে প্রবৃত্তি সবচেয়ে কঠিন শত্রু যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অপরিহার্য দায়িত্ব; তাই বিশ^নবী সা: বলেন, প্রবৃত্তির বিরোধিতা করা সবচেয়ে বড় জিহাদ। তাই তো বিশ^নবী সা: যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে এসে বলতেন, তোমরা এখন ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছ। (দাইলামি, কানযুল উম্মাল)।

প্রবৃত্তির সংজ্ঞা : আভিধানিক অর্থে কোনো বস্তুর প্রতি আকর্ষণ এবং ভালোবাসাকে প্রবৃত্তি বলে। (আল-মাগরিব ফি তারতিবিল মু‘রাব: ২/৩৯২) পারিভাষিক অর্থে প্রবৃত্তি বলা হয় শরিয়তের সীমারেখার বাইরে কামনা পূরণে কোনো বস্তু থেকে স্বাদ গ্রহণের প্রতি মনের আকর্ষণকে। (আত্তারিফাত লিল জুরজানি : ৩২০)।

আল্লাহ তায়ালা প্রবৃত্তির অনুসরণকে সরাসরি নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা বিচার করতে গিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না। (সূরা নিসা ১৩৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে শাসন করো এবং খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না, তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। (সূরা সদ :আয়াত ২৬)। আবার অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা পথভ্রষ্টদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতেও নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না, যারা আমার নির্দেশনাবলিকে মিথ্যা বলে, যারা পরকালে বিশ^াস করে না এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সমতুল্য অংশীদার স্থাপন করে।’ (সূরা আনআম আয়াত ১৫১)।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে কাফিরদের উদ্দেশে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের খুশিমতো চলব না। কেননা তাহলে আমি সুপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হবো না।’ (সূরা আনআম : আয়াত ৫৬)। আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, ‘এবং এই সম্প্রদায়গুলোর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।’ (সূরা মায়িদা : আয়াত ৭৭)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যার হৃদয় আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছে, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুসরণ করবেন না।’ (সূরা কাহফ : আয়াত ২৮)।

এ সব আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ কাফেরদের প্রবৃত্তির কথা বলেছেন অর্থাৎ যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে। তাদের প্রবৃত্তি তো শয়তানের অনুসরণেই পরিচালিত হয়। সুতরাং তাদের অনুসরণ অর্থই হলো শয়তানের অনুসরণ করা।

আবার বিশ্বনবী সা: ওই ব্যক্তির নিন্দা করেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের নফসের প্রবৃত্তির অনুসরণে গুনাহ করে। হজরত আবু ইয়ালা শাদ্দাদ বি আউস রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেন, ‘এবং অক্ষম ওই ব্যক্তি যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুসারী বানিয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৪২৬০)।
প্রবৃত্তির বিরোধিতার উপকার : প্রবৃত্তির বিরোধিতা করতে পারলেই কোনো মানুষ হয়ে যাবে কামেল মুমিন। আর তখন সে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজেকে অবনত করতে পারবে আর সে হয়ে যাবে জান্নাতের অধিবাসী। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’ ( সূরা নাজিয়াত, আয়াত ৪০-৪১)।

তবে শুধু প্রবৃত্তি কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তার কোনো শাস্তি হবে না যতক্ষণ তা আমলে পরিণত না হবে। এ জন্যই বারবার বলা হয়েছে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। অনুসরণ বলতে শুধু চিন্তা করাকে বুঝায় না। অনুসরণ হলো বাস্তবে রূপদান করা। সুতরাং যখন কাজে পরিণত হবে তখন তার শাস্তি ভোগ করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন, বনি আদমের ওপর তার জিনার অংশ লিখে রাখা হয়েছে, অবশ্যই সে তা প্রাপ্ত হবে। চোখের জিনা হলো নজর করা, কানের জিনা হলো শ্রবণ করা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, হাতের জিনা হলো স্পর্শ করা, পায়ের জিনা হলো গমন করা, অন্তর আকৃষ্ট হয় ও কামনা করে, আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (মুসলিম শরিফ হাদিস নং ২৬৫৭)।

আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের সবাইকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন

লেখক : প্রধান মুফতি, কাশফুল উলুম নেছারীয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স, নেছারীবাদ, সিংড়া, নাটোর


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us