অন্য ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ : ইসলাম যা বলে

নূর মুহাম্মদ রাহমানী | Oct 09, 2020 02:22 pm
অন্য ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ : ইসলাম যা বলে

অন্য ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ : ইসলাম যা বলে - ছবি : সংগৃহীত

 

ইসলাম কাউকে ঘৃণা করতে শেখায় না, সবাইকে ভালোবাসতে শেখায়, বিধর্মীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করুক। তাতে ইসলাম বাধা দেয় না। কিন্তু বিধর্মীদের ধর্মীয় বা আনন্দ উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণ করা, তাদের সাথে নাচ-গানে অংশ নেয়া, পূজার প্রসাদ খাওয়া, অনুরূপ এতে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা বা একে অপরকে অভিনন্দন জানানো কিছুতেই জায়েজ নয়। সুতরাং বিধর্মীদের শিআর ও শিরকি কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করা স্পষ্ট কুফুরি। আর মনে ঘৃণা রেখে এমনিই কৌতূহলবশত অংশগ্রহণ করা হারাম। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আর যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং অসার কার্যকলাপের সম্মুখীন হলে আপন মর্যাদা রক্ষার্থে তা পরিহার করে চলে।’ (সূরা ফুরকান : ৭২)

তাবেয়িনে কেরাম অনেকেই এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুশরিকদের ধর্মীয় দিবস ও আনন্দ উৎসবে না যাওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ এটি মুমিনদের একটি বৈশিষ্ট্য যে, তারা মুশরিকদের উৎসবে যোগদান করবে না। আল্লামা ইবনে কাসির রহ: এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এটাও রহমানের বান্দাদের একটি গুণ যে, তারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না। কারো মতে এখানে ‘আয-যুর’ অর্থ শিরক ও মূর্তিপূজা। কারো মতে এর অর্থ মিথ্যা, পাপাচার, কুফর, বেহুদা ও বাতিল কর্মকাণ্ড। মুহাম্মদ বিন হানাফিয়া রহ: বলেন, এর অর্থ অসার কাজ ও গানবাজনা। আবুল আলিয়া রহ:, তাউস রহ:, ইবনে সিরিন রহ:, জাহহাক রহ:, রবি বিন আনাস রহ:-সহ অনেকেই বলেছেন, এর অর্থ মুশরিকদের ধর্মীয় দিবস ও আনন্দ উৎসব।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/১১৮) আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি অনারব তথা অমুসলিম দেশে বাসস্থান নির্মাণ করে এবং তাদের নওরোজ ও মেহেরজান উৎসব পালন করে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, অতঃপর এ অবস্থার ওপরই তার মৃত্যু হয়, তাহলে ওই সব কাফেরদের সাথেই তার হাশর হবে।’ (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৯/৩৯২) নওরোজ ও মেহেরজান ইরানের অগ্নিপূজারীদের বিশেষ দুটি উৎসব ছিল। এতে বিভিন্ন শিরকি ও কুফুরি কর্মকাণ্ড থাকার পাশাপাশি তা বিজাতীয় ঐতিহ্য হওয়ায় মুসলমানদের জন্য তা পালন করা ও তাতে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ।

হজরত ওমর রা: বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকো।’ (আসসুনানুল কুবরা, হাদিস : ১৮৮৬২) অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাজিল হয়ে থাকে।’

ইমাম শামসুদ্দিন জাহাবি রহ:-এর মতে মুসলিমগণ কাফেরদের কোনো উৎসবে অংশ নেবে না, যা কিনা তাদের ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঠিক যেমন করে কোনো মুসলিম অন্য ধর্মের অনুশাসন এবং উপাসনার লক্ষ্যবস্তুগুলোকে গ্রহণ করতে পারে না।’ (তাশাব্বুহুল খাসিস বি আহলিল খামিস : ৪/১৯৩)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন, ‘কাফেরদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয়।’ (মাজমুয়ুল ফাতাওয়া-২৯ : ১৯৩)

তাদের সাথে ধর্মীয় ও আনন্দ উৎসবে যোগদান মানে তাদের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, তাদের কর্মকে সমর্থন করা; অথচ আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে বারণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও; অথচ যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তারা তা অস্বীকার করেছে। তারা রাসূল ও তোমাদের বহিষ্কার করেছে এ কারণে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখো।’ (সূরা মুমতাহিনা : ০১) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস করে তাদের আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতিগোষ্ঠী হয়।’ (সূরা মুজাদালাহ : ২২) এ ছাড়াও এতে অংশগ্রহণ করার দ্বারা তাদের কুফুরি ও মন্দ কাজে সহযোগিতা পাওয়া যায়। অথচ কুরআনে আল্লাহর অবাধ্যতা ও মন্দ কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করো এবং পাপ সীমালঙ্গনে একে অপরকে সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শাস্তিদানে কঠোর।’ (সূরা মায়িদা : ০২)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির রহ: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে উত্তম তথা সৎকর্ম করার এবং অসৎকর্ম পরিত্যাগ তথা তাকওয়া অবলম্বনের ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। আর ভ্রান্ত কাজে পরস্পরকে সাহায্য এবং পাপ ও হারাম কাজে একে অপরকে সহায়তা করতে নিষেধ করছেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/১০) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। এবং সকল শিরক-মিশ্রণ হতে মুক্ত থেকে খালেস মিল্লাতে ইবরাহিমির ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : উস্তাজুল ফিকহ ওয়াল হাদিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণঞ্জ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us