আতরের সুবাস ছড়িয়ে চলেছেন জাহিদুল

সেখ কুতুবউদ্দিন, কলকাতা | Jan 02, 2021 08:44 pm
পার্ক স্ট্রিট-শেকসপিয়ার সরণি সংযোগস্থলে ‘ভবন চৌধুরি’ মসজিদের প্রবেশদ্বারে এক মুসল্লি আমিরুল ইসলামের হাতে আতর লাগিয়ে দিচ্ছেন জাহিদুল ইসলাম

পার্ক স্ট্রিট-শেকসপিয়ার সরণি সংযোগস্থলে ‘ভবন চৌধুরি’ মসজিদের প্রবেশদ্বারে এক মুসল্লি আমিরুল ইসলামের হাতে আতর লাগিয়ে দিচ্ছেন জাহিদুল ইসলাম -  ছবি : সঞ্জয় পুরকাইত

 

মোগল সম্রাট হুমায়ুনের কাছে ছেলে হওয়ার সুখবরটা যখন আসে, তখন তিনি নিঃস্ব। এত আনন্দের খবর পেয়ে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কোনো উৎসব পালন করবেন, ওই সংহতিও তার ছিল না। শোনা যায়, আতরের ছোট একটা শিশি খুলে সঙ্গীদের মধ্যে সেই সুগন্ধি ছড়িয়ে দিয়ে হুমায়ুন বলেছিলেন, এই আতরের গন্ধের মতো তার ছেলের খ্যাতি যেন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

৪৫০ বছর পার। রাজনীতি-সমাজ-অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আতরের সেই সুগন্ধ এতটুকুও ম্লান হয়নি।

গোলাপ, জুঁই, রজনীগন্ধা, বেলের মতো সুগন্ধি ফুল তামার পাত্রে গরম করে সেই ফুলের নির্যাস বের করে নেন এক ধরনের ওস্তাদ বা আতর প্রস্তুতকারক। ওই নির্যাস চন্দন তেলের সঙ্গে মিশিয়ে যা তৈরি করা হয়, তাতেই লুকিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আতরের সুগন্ধের রহস্য। আর সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়েই তৈরি হয় আতর। আবার অ্যালকোহল-সহ বিভিন্ন রাসায়নিকের সঙ্গে নানা ধরনের ফুলের নির্যাস মিশিয়ে তৈরি করা হয় পারফিউম।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে পার্ক স্ট্রিট-এর দিকে একটু এগোলেই দেখা মেলে বড় মসজিদ। জুম্মার দিনে ওই মসজিদে ভিড়ও বেশ জমে। মসজিদের গেটের সামনে আতরের ছোট্ট একটি বাক্স নিয়ে বসেন রিপন স্ট্রিটের ইলিয়ট লেনের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম। সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, লম্বা দাঁড়ি। বেশ সুঠাম চেহারা। তার এক মাত্র ইচ্ছা বিনা পয়সায় জুম্মার নামায পড়তে আসা সকলকে আতরের সুগন্ধে ভরিয়ে তোলা। তাই ৪/৫ বছর ধরে প্রতি জুম্মাবারে এই মসজিদের সামনে আতরের বাক্স নিয়ে বসেন। আর সুগন্ধ লাগিয়ে দেন। কারোর আতর পছন্দ হলে কিনেও নিয়ে যান।

১০ থেকে ১১ বছর ধরে আতর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। পার্ক সার্কাস, ধর্মতলা চত্বরে ঘুরে ঘুরে আতর বিক্রি করেন। শুধু বিক্রি করা নয়, বিনামূল্যে আতরও লাগিয়ে দেন। জাহিদুল সাহেবের ১২ নম্বর তাঁতি বাগান লেনে ‘আয়ান ফারফিউমারি’ নামে একটি আতরের ছোট্ট দোকানও রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কারণে বিক্রিবাট্টা কম, তাই দোকান এখন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এখন ঘুরে ঘুরে আতর বিক্রি করার পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজ করে চলেছেন তিনি। বহু অমুসলিমও তার আতরের গন্ধে ছুটে আসেন। বিনাপয়সায় আতর মেখে যান তিনি। তার ইচ্ছা জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি তার আতরের ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোই এক মাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

তার কাছ থেকে জানা গেল, ভালো মানের আতরের ১০ গ্রামের দাম ৩০০ রুপি থেকে ১০ হাজার রুপি, এমনকী তার বেশিও হতে পারে। রাসায়নিকের অনুপস্থিতি এবং সুগন্ধের স্থায়িত্বই আতরের এমন চড়া মূল্যের প্রধান কারণ। সুগন্ধ ভেদে আতরের কতই না নাম। কারো পছন্দ দেনিজ, কারোর ‘নাজুম’, তো কেউ ‘জান্নাত-উল-ফিরদৌসে’র পছন্দে মোহিত। কারো বা বাধা ব্র্যান্ড ‘শাহ-ই-ইরান’। পারফিউম, ডিও স্টোরে রমরমা বাজারে এখনো মাথা উঁচু করেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে আতর। তিনি জানান, পুরনো প্রজন্মের একটা বড় অংশ তো বটেই, এমনকী নতুন প্রজন্মের অনেকেও সংগ্রহে রাখতে চান পছন্দসই সুবাসের আতর।

সূত্র : পুবের কলম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us