মোবাইলে আসক্তি শিশুদের চোখে যেভাবে ক্ষতি করে

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Mar 01, 2021 01:43 pm
মোবাইলে আসক্তি শিশুদের চোখে যেভাবে ক্ষতি করে

মোবাইলে আসক্তি শিশুদের চোখে যেভাবে ক্ষতি করে - ছবি সংগৃহীত

 

এক সময় রূপকথার গল্প শুনিয়ে শিশুদের খাওয়ানো কিংবা ঘুম পাড়ানো হতো। আজকাল মোবাইলে কার্টুন কিংবা গেমসে ভোলানো হয় শিশুদের। ফলে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসে অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা।

করোনার এই দুঃসময়ে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ পরিবারে এখন শিশুদের খেলনার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে মোবাইল ফোন। শিশুর বায়না পূরণে মোবাইলে গেমস দেখা বা গান শোনা যেন এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোনের বিকিরণের কারণে অন্ধত্বসহ চোখে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে শিশুদের। করোনাকালীন বাচ্চারা ঘরে আবদ্ধ থাকায় মোবাইলের প্রতি আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের আবদারে স্মার্ট ফোন কিনে দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কোমলমতি শিশুদের এই মোবাইল আসক্তি একদিকে যেমন মেধা ধ্বংস করছে, তেমনি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে কর্মস্পৃহা। মাত্রাতিরিক্ত হারে সেলফোন ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বাস্তবিক জগতের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি মোহ ও আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা বুঁদ হয়ে থাকছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসে। শারীরিকভাবেও শিশুরা নানা সমস্যায় পড়ছে শুধু এই অতি-আসক্তির কারণে। এমনও অনেক অভিযোগ আসছে যে শুধু শহরে নয়, এখন গ্রামপর্যায়ে স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের বায়না মেটাতে মা বাবাকে ধারদেনা করে হলেও কিনে দিতে হচ্ছে দামি মোবাইল সেট।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু। প্রতিদিন এক লাখ ৭৫ হাজার অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ২৫ শতাংশের বয়সই ১০ বছরের কম। ফেসবুকসহ সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়সই ১৮ থেকে ২৯-এর মধ্যে।

বাংলাদেশেও ইন্টারনেট প্রসারের মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী, যাতে রয়েছে শিশুরাও। বিটিআরসির ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রায় ৩.৫ শতাংশ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার বড় একটা অংশই যুক্ত থাকে নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের সঙ্গে।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বাসসকে বলেন, ‘আমার বাচ্চার সকালটা শুরু হয় মোবাইল দিয়ে। এটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল করতে পারছি না। মোবাইল না দিলে কিছু খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। তখন বাধ্য হয়ে ফোন দিতে হয়। কি করবো? আসলে করোনার সময়ে বাচ্চারা বাইরে যেতে পারছে না। ঘরে বসে কিভাবে লম্বা সময় কাটাবে? হয় টিভি দেখে আর তা নাহলে ফোনে গেমস খেলে ওরা সময় কাটায়।’

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র ফারাবী হোসেন বাসসকে সে জানায়, খাওয়ার সময় দেখি, ঘুমানোর সময়ও দেখি। দেখতে খুব ভালো লাগে তাই দেখি। এখন করোনার কারণে অনেক দিন ধরে স্কুল বন্ধ। তাই বাসায় বসে মোবাইলে ফেসবুক চালাই বা গেমস খেলি।’

নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি বিষয়ে বলেছেন, এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘণ্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমস খেলে, খুব অল্পবয়সে তাদের চোখের সমস্যা হবে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
আরিক ইসলাম মতিঝিল বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। তার বাবা খাইরুল ইসলাম জানালেন, আরিকের আগের রুটিন নষ্ট হয়েছে। মোবাইলের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে বহু গুণ। আগে রুটিনের ভেতরে ছিল। এখন সেটা নেই। এখন রাতে ঘুমায় দেরি করে, সকালে ওঠে দেরি করে। উঠেই মোবাইল খোঁজে। কিছু বললে বলে মোবাইলে পড়ালেখা করবে।

তিনি বলেন, ‘এটা একটা বিরাট সমস্যা। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় এগুলো মনিটরিংও করতে পারছি না। তাকে মোবাইল রাখতে বললেই উত্তর আসে, তাহলে আমার সঙ্গে খেলো। কিন্তু আমরাও তো সময় দিতে পারছি না।’
করোনার প্রাদুর্ভাবে আগের চেয়ে বেশি শিশুরোগী পাচ্ছি। একথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী বলেন, চোখের জ্বালাপোড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ পিটপিট করা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এসব অভিযোগই বেশি শিশুদের।

তিনি বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শিশুদের চোখের মাইনাস পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। যাকে বলে মায়োপিয়া। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা কাছের জিনিস ভালো দেখলেও দূরের জিনিস দেখতে পায় না। এ সমস্যা বাড়লে দূরের বস্তু আর দেখবেই না। দূর থেকে আসা যানবাহনও দেখতে পাবে না।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা.গোলাম মোস্তফা বলেন, একটানা কম্পিউটার, মোবাইল বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তাকিয়ে থাকাটা বড় ছোট সবার চোখের জন্যই ক্ষতিকর। ছোটদের বেলায় সেটা আরও বেশি বিপজ্জনক। অভিভাবকদের অনেকে ভাবেন, শিশুদের চোখের সমস্যা বোধহয় কম হয়। এই ধারণা থেকে তারা ওদের চোখ পরীক্ষাও করান না। এসব শিশুর জন্য তখন সমস্যাটা আরও প্রকট হয়।

তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে শিশুরা চোখ আর মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে বেশি আসছে। এর কারণ, রিফ্লেক্টিভ এরর। অর্থাৎ তাদের চশমার প্রয়োজন হচ্ছে।

সূত্র : বাসস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us