সড়কের দু'ধারে বাসক পাতা : সৌন্দর্যে ভরে মন

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Apr 07, 2021 03:11 pm
সড়কের দু'ধারে বাসক পাতা

সড়কের দু'ধারে বাসক পাতা - ছবি : বাসস

 

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অধুনালুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার কাঁচা-পাকা ৮ কিলোমিটার সড়কের দুইধারে বাসক পাতার সৌন্দর্য দেখলেই মন ভরে যায়। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে দাসিয়ার ছড়া। নতুন কেউ এখানে আসলেই মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলে রাখেন।

ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাস্তবায়িত স্বপ্ন প্রকল্পের ১৭ জন নারীকর্মী ১০ বছরের জন্য বাসক পাতা চাষের জন্য লিজ নিয়েছেন। তাদের অনেকে বাড়ির আশেপাশে খোলা জায়গায় বাসক চাষ করে বাড়তি আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন। সড়কের ধারে ঔষুধি গাছ বাসকের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। তাদের চাষ করা ঔষুধি বাসক পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন নামকরা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

দাসিয়ার ছড়ার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের শেষ দিকে দাসিয়ার ছড়ায় রাস্তার ধারে ১৮ হাজার বাসকেরচারা রোপণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন সাবেক জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। ৮ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও পতিত জায়গায় বাসকের চারা রোপণ করেন উদ্যোক্তারা। এক বছরের বেশি সময় পর প্রথম পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম বার বাসক পাতা ১১ হাজার টাকা বিক্রি করেন। ৪ মাস পর দ্বিতীয় দফায় ৩১ হাজার টাকার বাসক পাতা বিক্রি করেন। এখন প্রতি কেজি শুকনো বাসক পাতা ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ১৭ জন স্বপ্ন প্রকল্পের কর্মীদের যৌথ একাউন্টে টাকা জমা করা হয়। বাসক পাতার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকলেও অনেকে এর ঔষুধি উপকারিতা না জানার কারণে আগাছা ভেবে উপড়ে দেন। এ কারণে ১৮ হাজার চারার মধ্যে এখন অর্ধেকের কম চারা রাস্তার ধারে চোখে পড়ে। ঔষুধি উপকারিতা না জানায় অনেকে বাসক গাছ কেঁটে সেখানে উদ্ভিদ গাছ লাগাচ্ছেন। যার ফলে বাসক গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

স্বপ্ন প্রকল্পের ইউনিয়ন ফেসিলেটর মোছা. হেলেনা খাতুন বলেন, চার মাস পরপর বাসকের কাঁচাপাতা সংগ্রহ ও গাছ পরিষ্কার করতে হয়। এরপর দু-তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে পাতা শুকাতে দিতে হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ থেকে তিন মাস পরপর চার কেজি কাঁচা পাতা পাওয়া যায়, যা শুকিয়ে হয় এক কেজি। তিনি বলেন, কিছু মানুষ এই গাছের উপকারিতা না জেনেই কেটে ফেলছে। এ কারণে গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

উুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ জানান, ছোট থাকতে অনেক বাসক চারা নষ্ট হয়েছে। এখন সবাই পরিচর্যা করে। বাসকের পাতায় কিছুটা দুর্গন্ধ থাকায় পশুরা খায় না। কেউ যদি স্বেচ্ছায় বাসক গাছের ক্ষতি করে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, বাসক পাতা এক প্রকার ভেষজ ঔষধি পাতা গাছ। বাসক পাতা দিয়ে তৈরি হয় কাশির সিরাপ। বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। বাসক পাতা অনেকের কাছে ফেলনা মনে হলেও ভেষজ চিকিৎসায় এর জুড়ি নেই। বহুকাল থেকে ঠান্ডা-কাশির চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে কুড়িগ্রামে বাসকের বাণিজ্যিক চাষ নেই বললেই চলে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বাসক পাতার যে চাহিদা রয়েছে তার ১০ ভাগ দেশ থেকে যোগান দেয়া হয়। বাকি কাঁচামাল পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ জানেই না বাসক গাছেরওষুধি ও বাণিজ্যিক মূল্য।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘রাস্তার ধারে উদ্ভিদ গাছের পরিবর্তে ভেষজ বা ওষুধি গাছ লাগালে আয় হবে, পরিবেশ ভালো থাকবে এবং মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাসক পাতার অনেক সম্ভাবনা আছে। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চায় আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।’

সূত্র : বাসস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us