টউপো হ্রদের কাদা-ফোটা

নাহিদা ইয়াসমিন | Jul 06, 2021 01:07 pm
টউপো হ্রদের কাদা-ফোটা

টউপো হ্রদের কাদা-ফোটা - ছবি : সংগৃহীত

 

নিউজিল্যান্ডের রোটোরুয়ার টউপো হ্রদে দেখা যায় বিস্ময়কর এক ঘটনা। অবিরত ফুটন্ত পানির মতোই ফুটছে সেখানকার কাদামাটি। পুরো ঘটনাই হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে।

ঘটনার সূত্রপাত নিউজিল্যান্ডের রোটোরুয়ার শহরের একটি বাড়ির উঠান থেকে। হঠাৎ করেই একদিন বুদবুদ আকারে কাদামাটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেখানে।

প্রশাসন নিরাপত্তার জন্য এই বাড়ির লোকদেরসহ এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয় এবং মানুষের চলাচল বন্ধ করতে বিশাল আকারের বেষ্টনী তৈরী করে।

কোনো তরল পদার্থ অনেকক্ষণ ধরে উত্তপ্ত করলে যেমনভাবে ফুটতে থাকে, তেমনি কাদামাটিও প্রতিনিয়ত ফুটতে থাকে।

আবার সময়ে সময়ে ফুটন্ত কাদামাটি ধারণ করছে বিভিন্ন আকার। ঘন কাদার আস্তরণ ভেদ করে বাবল গামের মতো ফুটে উঠছে নরম মাটি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কাদামাঠি এভাবে টগবগ করে ফুটছে কেন? ধারণা করা হচ্ছে, মাটির নিচের তাপমাত্রার কারণেই এমনটা হচ্ছে। মাঠির নিচের স্তরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকায়, ভূপৃষ্ঠে থাকা কাদামাঠি ফুটতে থাকে সবসময়। কিছু জায়গায় অবশ্য পানিও ফুটছে, কিন্তু সেই জায়গাগুলোতে শুধুই ধোঁয়া দেখা যায়।

ফুটন্ত কাদার এ দৃশ্য সবচেয়ে বেশি নজরে পড়ে নিউজিল্যান্ডের রোটোরুয়া হ্রদের দক্ষিণে অবস্থিত শহরটিতে। শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, বিশ্বের আরো অনেক জায়গায়ই এমন প্রাকৃতিক ফুটন্ত কাদা দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নিউজিল্যান্ডের ওই গ্রামটিতে রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য জিয়োথার্মাল শক্তি। এর প্রভাবে সেখানে তৈরী হয়েছে অসংখ্য উষ্ণ প্রস্রবণ বা গিজার।

এই অঞ্চলে এত ভূ-তাপীয় শক্তির উৎপাদন হয় যে, এর ফলে এ অঞ্চলে বাতাসে সালফার গ্যাসের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। আর এ কারণে শহরের আনাচে-কানাচে সালফারের পচা ডিমের গন্ধ সবসময় পাওয়া যায়। এজন্য রোটোরুয়া ‘সালফার সিটি’ হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত।

রোটোরুয়ার গিজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে পোহুটু গিজারটি। পোহুটুর আশেপাশে থাকা অন্যান্য প্রস্রবণের চেয়ে বেশ আলাদা। কারণ সাধারণ গরম পানির গিজার এটি নয়। সেখানে গরম পানির সাথে মিশে থাকে মাটি, ফলে তৈরি হয় কাদার গিজার।

হ্রদের বুকে এই ফুটন্ত কাদা মাটির গিজার তৈরি হওয়ার পেছনে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। এখন পর্যন্ত গবেষকরা কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে পাননি কেন ফুটছে কাদামাটি? তবে গবেষকদের মতে, নদী এবং হ্রদের পানি নির্দিষ্ট এই স্থানে উত্তপ্ত পাথরের উপরে প্রবাহিত হয় বলেই এমন হচ্ছে বলে ধারণা।

তবে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে আগ্নেয়গিরী দ্বীপে এরকম কাদার হ্রদ তৈরি হয় যার নীচ থেকে গ্যাস বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তারপর এগুলো চূড়ার মতো উঁচু হয়ে মাড ভলকানো সৃষ্টি করে থাকে। যদিও এই লেকের সঙ্গে মাড ভলকানোগুলোর কিছু অমিলও রয়েছে।

এই অদ্ভুত গিজারের জন্য রোটোরুয়া নিউজিল্যান্ডের বিশেষ এক দ্রষ্টব্য স্থান। প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু পর্যটক এই দর্শনীয় স্থান দেখতে আসে। সকলেই হ্রদের এই ফুটন্ত কাদামাটি দেখে বিস্মিত হন। এই অন্য রকম সৌন্দর্য অবলোকন করতে পর্যটকদের ভিড় সেখানে লেগেই আছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us