ইটভাটায় কাজ করে স্কুল-কলেজ পার, ঢাবিতে এসে আর চলছে না বাচ্চুর

ইসমাঈল সোহেল | Nov 01, 2020 04:32 pm
বাচ্চু

বাচ্চু - ছবি সংগৃহীত

 

ইচ্ছে ছিল অন্য আট-দশজনের মতোই পড়াশোনা করে বড় হওয়ার। কিন্তু সাধ এবং সাধ্যে কুলাচ্ছিল না তার। আর্থিকভাবে ভঙ্গুর পরিবার থেকে বেড়ে উঠে লেখাপড়ার ইচ্ছেটা ছিল অনেকটাই দুঃস্বপ্নের মতো। তবুও সাহস হারায়নি। সব প্রতিকূলতা জয় করে হাসতে চেয়েছেন সুখের হাসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই হাসি ধরে রাখার ধৈর্যে পেরে উঠতে পারছেন না। ইটভাটায় কাজ করে, অন্যের ফসল কেটে দিয়ে পার করেছেন স্কুল-কলেজ; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এখন যেন আর চলছে না তার।

গল্পটা শত প্রতিকূলতা জয় করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বাচ্চুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তিনি। করোনার কারণে বর্তমানে ঝিনাইদহের কয়ারগাছী আবাসন প্রকল্পে (সরকারি বস্তি) পরিবারের সাথে রয়েছেন।
মো: আবু তাহের এবং জবেদা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে বাচ্চু তৃতীয়। বড় ভাই আদম আলী (বিবাহিত) পেশায় ভ্যানচালক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টানাটানির সংসার তার। বড় বোন ইয়াছমিন খাতুন বিবাহিত। ছোটবোন জেসমিন খাতুন ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী।
এর আগে বাচ্চুর পরিবার যশোর জেলার কেশবপুরে থাকতেন। দাদার সামান্য একটু জমি থাকলেও সেটা ছোট চাচার নামে লেখে দেন তিনি (বাচ্চুর দাদা)। কেশবপুরে কাজের সুবিধা না থাকা এবং নিজের পরিবারের কোনো স্থায়ী জমিজমা না থাকায় ঝিনাইদহে চলে আস তার পরিবার। ২০০৪ সাল থেকে কয়ারগাছী বস্তিতে বাস করছেন তারা।

ঝিনাইদহের বিষয়খালী এস এম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তবে তার স্কুল-কলেজের জীবনও ছিল বেশ সংগ্রামের। প্রতিকূলতা জয় করতে করতে নিজেকে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে ভর্তি করাতে সক্ষম হন তিনি।
স্কুল-কলেজের পড়ালেখা এবং এর খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। এমন কোনো কাজ নেই যেটা করিনি; আর যেটা পারি না। ইটভাটায় ইট উল্টানোর কাজ করেছি, কয়লা কুড়িয়ে নিজের ব্যাগ কিনেছি; গাড়ির লেবারও ছিলাম। ধানকাটা, মাছধরা এসব কাজ করে পরিবারের জীবিকার জোগান এবং নিজের পড়ালেখা করেছি।

বাচ্চু বলেন, বই কেনার টাকা ছিল না। কারণ যে টাকা দিয়ে বই-গাইড কিনব সে টাকা দিয়ে আমার পরিবারের খাবার জোগান হবে। পরে বন্ধুদের বই থেকে পড়া লিখে নিয়ে আসতাম। হাঁটতে হাঁটতে পড়তাম। ছাগল চড়াতে গিয়ে বই পড়তাম। এভাবে আমার পড়া হয়ে যেত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথমেই খাওয়ার কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চলতে কষ্ট হচ্ছিল। পরে বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথম বর্ষে আমার বিনা পয়সায় হলের ক্যান্টিনে খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
এর আগে হলের প্রোগামে না যাওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছিল। খাবার খেতে গেলে এক ছাত্রনেতা মারধরও করেন। এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাচ্চু। তবে হল সাধারণ সম্পাদক তার অবস্থা জানার পরে তার জন্য বিনা পয়সায় খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এ ছাড়াও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে না যাওয়ার অনুমতি দেন।

সম্প্রতি করোনার পরিস্থিতির কারণে নিজেদের অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাস দেন বাচ্চু। সেই স্টাটাসের সূত্র ধরে তার সম্পর্কে জানতে গিয়ে এক অসহায় পরিবারের চিত্র উঠে আসে। দিনমজুর বাবার ঘাড়ে থাকা পরিবারের সাথে বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে যাচ্ছে বাচ্চুর দিনরাত।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের অসহায়ত্বের ফিরিস্তি তুলে ধরে বাচ্চু বলেন, আমার বাবা দিনমজুর। বর্তমানে বাবা ও মা দু’জনই অসুস্থ।

বাচ্চু বলেন, এতদিন আমি মোটামুটি কিছু করে চলতে পেরেছি। প্রতিকূলতার জন্য মানুষ দেখছি আত্মহত্যা করে। কিন্তু আমি সেটা করব না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, বড় ভাই-আপু এবং সাবেকরা আছেন। তারা থাকতে আমি আত্মহত্যা করব কেন? এ জন্যই আমি সবাইকে জানাতে পোস্ট করেছি। যাতে করে তারা আমার সমস্যাটা জেনে সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন। এতে করে আমি আমার পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। হলের আবাসিক শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছি। ছেলেটার সাথে কথা বলতে বলেছি। দেখি আমরা কতদূর করতে পারি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us