মুসলিম গ্রানাডার শেষ দিনগুলো

জান্নাত খাতুন | Nov 30, 2021 03:18 pm
মুসলিম গ্রানাডার শেষ দিনগুলো

মুসলিম গ্রানাডার শেষ দিনগুলো - ছবি সংগৃহীত

 

১৪৯০ সাল আন্দালুসের ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো বছর ছিল। স্পেনের খ্রিস্টানরা তাদের রিকনকুয়িস্টা (Reconquista) শুরু করার পর কয়েক শ' বছর ধরে অর্জন করা ছোট বড় বিজয় দিয়ে স্পেনকে সম্পূর্ণভাবে পুনরায় দখল করার খুব কাছে ছিল। অন্যদিকে মুসলিমরা আন্দালুসে পা রাখার পর নিজেদের ৩২০ বছরের স্বর্ণযুগ অতিক্রম করে কয়েক শ' বছরের পরাজয় নিয়ে চূড়ান্ত পরাজয়ের কাছে ছিলো। আন্দালুসের মুসলিমরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করছিল। আন্দালুসে মুসলিমদের দুটি চিহ্ন গ্রানাডা শহর এবং আল হামরা প্রাসাদই শুধু মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর এই দুটি চিহ্ন কতক্ষণ মুসলিমরা সংরক্ষণ করতে পারবে তা ছিল অনিশ্চিত। গ্রানাডার পতন যে শিগগিরই হবে। তা সবাই বুঝতে পারছিল। স্পেনের রাজা ফার্ডিনান্ডের নজরও ছিল এই দুটি জিনিসের ওপর। রাজা ফার্ডিনান্ড খ্রিস্টানদের ৮০০ বছরের রিকনকুয়স্টাকে সফল করতে চাচ্ছিলেন। অন্যদিকে গ্রানাডার শেষ সুলতান আবু আব্দুল্লাহ। যিনি দ্বাদশ মুহাম্মদ নামেও পরিচিত। তিনি কিছু দিন আগে পর্যন্ত ফার্ডিনান্ডের পুতুল ছিলেন। তারপর তার ভুল ভাঙ্গে। তিনি দ্বিতীয়বার ফার্ডিনান্ডের পুতুল হতে চাননি। তিনি এবার তার সাম্রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি ছিলেন। গ্রানাডার জনগণের বেশির ভাগও আবু আব্দুল্লাহর সাথে ছিলো। হয় তারা শহীদ হবে না হয় বিজয়ী হবে। গ্রানাডার মুসলিমরা কাউকে সহজে তাদের মাতৃভূমি ছিনিয়ে নিতে দেবে না। ১৪৯০ সাল আন্দালুসের মুসলিমদের জন্য এক মোড় ঘুরানো বছর ছিলো। রাজা ফার্ডিনান্ড চাইলে ১৪৯০ সালেই গ্রানাডা শহর অবরোধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি অত্যন্ত দক্ষ এক রাজনৈতিক এবং সমরবিদ ছিলেন। তিনি চাইছিলেন তার শিকারের যেন প্রতিরোধ করার শক্তিও না থাকে। আগের পর্বগুলোতে বলেছি গ্রানাডা শহর সিরা নুভাডা পর্বতমালার পাশে অবস্থিত। এ কারণে গ্রানাডা প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত ছিলো।

১৪৯০ সালে গ্রানাডা চারদিক দিয়ে স্পেন দ্বারা বেষ্টিত হলেও এর খাবারের সংকট হয়নি। তখনো গ্রানাডার খাদ্য চাহিদা পূরণ করার দুটি উপায় ছিলো। এক, গ্রানাডার সীমান্তবর্তী জমিগুলো খুব উর্বর ছিল। এগুলো তখনো মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই জমিগুলোতে বিভিন্ন ফসল চাষ করা হতো। যা গ্রানাডার খাদ্য চাহিদার অনেকটা পূরণ করত। দুই, গ্রানাডার পিছনে থাকা সিরা নুভাডা পর্বতমালার কিছু বসতি তখনো মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এসব বসতি থেকে সিরা নুভাডার দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা দিয়েও কিছু খাদ্য গ্রানাডায় আসত। তো রাজা ফার্ডিনান্ড গ্রানাডার এই খাদ্য সরবরাহের উপায় বন্ধ করার জন্য গ্রানাডার সীমান্তে সৈন্য পাঠালেন। এই সৈন্যরা গ্রানাডার ফসলগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিত। খ্রিস্টানদের এই পদক্ষেপের পর আবু আব্দুল্লাহ চুপচাপ বসে ছিলেন না। তিনি গ্রানাডার খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহ চালু করার জন্য গ্রানাডার যেসব উপকূলীয় এলাকা খ্রিস্টানদের দখলে গিয়েছিল সেগুলোর কিছু পুনরায় জয় করার পরিকল্পনা করেন। এতে গ্রানাডা আফ্রিকা ও অন্যান্য মুসলিম সাম্রাজ্য থেকে খাদ্য ও অস্ত্র পাবে। যার ফলে আরো কয়েক বছর ধরে তারা খ্রিস্টানদের মোকাবিলা করতে পারবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আবু আব্দুল্লাহ সেনাবাহিনী নিয়ে গ্রানাডা থেকে বের হন। আবু আব্দুল্লাহ সর্ব প্রথম আল বাজোল জয় করেন। এরপর ওজরা জয় করেন। ওজরা জয় করার জন্য কিছু আফ্রিকান সেচ্ছাসেবী আবু আব্দুল্লাহকে সহায়তা করে। ফলে ওজরাও তিনি সহজে জয় করেন। ওজরার পর আবু আব্দুল্লাহর পরবর্তী গন্তব্য ছিলো ৬৩ কিলোমিটার দূরের শহর সোলবেনিয়া। এই শহর জয় করে আবু আব্দুল্লাহ মোটামুটি বড় একটি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন। যার ফলে গ্রানাডা আফ্রিকার মুসলিম সাম্রাজ্য থেকে সাহায্যও পেতে পারতো। যা গ্রানাডাকে আরও কয়েক বছর স্বাধীন রাখতে পারতো। সোলবেনিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আবু আব্দুল্লাহ খবর পেলেন একটি খ্রিস্টান সেনাবাহিনী গ্রানাডার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এই খবর পাওয়ার পর আবু আব্দুল্লাহ সোলবেনিয়া জয় না করেই গ্রানাডাকে রক্ষা করার জন্য চলে যান। এভাবে আফ্রিকা ও বহিঃবিশ্বের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার যে সম্ভাবনা ছিলো তা একেবারে শেষ হয়ে যায়। ১৪৯০ সাল ছোট বড় সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পার হয়। এ সময় একের পর এক গ্রানাডার ফসল পুড়তে থাকে আর সাধারণ মুসলিমদের কষ্ট বাড়তে থাকে। রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড যখন দেখলেন যে, তিনি সফলতার সাথে গ্রানাডার খাদ্য সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎসকে ধ্বংস করে দিতে পেরেছেন। তখন তিনি পূর্ণ শক্তি সহকারে গ্রানাডাকে দখল করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৪৯১ সালের শীতকাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ৮০ হাজার সৈন্যের বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে গ্রানাডা দখল করার জন্য রওনা হন। রাজা ফার্ডিনান্ডের সেনবাহিনীর কাছে তীর, তলোয়ার ছাড়াও বন্দুক এবং কামানও ছিল। যা ওই সময়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এর মাত্র ৩৮ বছর পূর্বে ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল ফাতিহ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সর্বশেষ চিহ্ন কনস্টান্টিনোপল জয় করেন কামানের সাহায্যে। সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ এক হাঙ্গেরিয়ান প্রকৌশলী ওর্বানের মাধ্যমে শক্তিশালী কামান তৈরি করিয়েছিলেন। যার সাহায্য কনস্টান্টিনোপল জয় করা সহজ হয়। এখন এই একই ইতিহাস গ্রানাডার ওপর আপতিত হতে চলেছিল। রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ফ্রান্সের এক প্রকৌশলীকে দিয়ে কামান তৈরি করিয়েছিলেন। যদিও কামান মুসলিমদের কাছে থাকলেও আন্দালুসের মুসলিমরা কামানের উন্নয়নে পারদর্শী ছিল না। এরফলে শুধু সৈন্য সংখ্যাতেই নয় অস্ত্রের হিসেবেও ক্রুসেডাররা গ্রানাডার মুসলিমদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। ১৪৯১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলার সেনাবাহিনী গ্রানাড শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে শিবির স্থাপন করে। তারা গ্রানাডা শহর অবরোধ করে। রাণী ইসাবেলা নিজে বর্ম পরে সৈনিকদের মনোবল চাঙ্গা করছিলো।

রানি ইসাবেলা ঘুরে ঘুরে হামলার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতেন। ক্রুসেডার সৈন্যরা রানি ইসাবেলাকে বর্ম পরিহিত দেখে চাঙ্গা হয়ে উঠতো। গ্রানাডার অবরোধের ব্যাপারে একটি কিংবদন্তী আছে। কিংবদন্তী অনুযায়ী রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানি ইসাবেলা গ্রানাডা শহর ও আল হামরা প্রাসাদকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাইল। তখন তাদের গ্রানাডার কাছের এক গ্রামের এক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। ওই বাড়ি থেকে গ্রানাডা শহর ও আল হাম্বরা প্রাসাদ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। রাজা ও রাণী গ্রানাডা শহর ও আল হাম্বরা প্রাসাদের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। তাঁরা এক দৃষ্টিতে গ্রানাডা শহরকে দেখছিলেন। হঠাৎ মুসলিমরা গ্রানাডা শহর থেকে বের হয়ে কামান দিয়ে হামলা করে। মুসলিমরা রাজা ও রানির দেহরক্ষীদের ওপর হামলা করে। দু'পক্ষের মধ্যে লড়াই হয়। মুসলিমরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এভাবে খ্রিস্টানদের রাজা ও রানি মুসলিমদের হাতে আসা থেকে বেঁচে যায়। এরপর খ্রিস্টানরা হামলা শুরু করে। আর অবরোধও দীর্ঘ হতে থাকে। অবরোধ চলাকালীন সময়ে ক্রুসেডাররা কামানের ব্যবহার বেশী করে নি। কারণ তাঁরা গ্রানাডা শহর ও আল হাম্বরা প্রাসাদের সৌন্দর্য সম্পর্কে অবগত ছিল। রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানি ইসাবেলাও চাইছিলেন গ্রানাডা শহর এবং আল হামরা প্রাসাদ যেন অক্ষত অবস্থায় মিষ্টি ফলের মতো তাদের ঝুড়িতে পড়ে। তার জন্য যত সময় লাগে লাগুক। এরপর মে, জুন, জুলাই মাস শেষ হয়ে গেল। শীতকাল আসন্ন ছিল। গ্রানাডা ছিল পাহাড়ি এলাকা। যদি একবার এখানে তুষারপাত শুরু হয় তাহলে তা আক্রমণকারী সেনাবাহিনীর সৈন্যদের কুলফি বানিয়ে দেবে। দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ডও তা জানতেন। তাই তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি গ্রানাডার কাছে এক নতুন শহর নির্মাণ করার আদেশ দেন। এর জন্য গ্রানাডার আশেপাশের সকল বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দিয়ে সেগুলোর ইট জড়ো করে নতুন শহর নির্মাণ করা হয়। এই শহরে সৈন্যদের থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও এক হাজার ঘোড়া রাখার জন্য আস্তাবলও তৈরি করা হয়।

রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড তার সকল মন্ত্রী ও আমলাদের এখানে নিয়ে আসেন এবং এখানে তার রাজদরবারের কাজ করতেন। ১৪৯১ সালে এই শহরটি স্পেনের অস্থায়ী রাজধানী হয়ে উঠে। এই শহরের নাম দেয়া হয়ে ছিল সানতা ফি। যার অর্থ পবিত্র দিন। আজ যদি কারো গ্রানাডা যাওয়ার সুযোগ তাহলে তিনি সানতা ফি শহরও ঘুরে আসতে পারেন। যা গ্রানাডা থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে (গাড়িতে করে) অবস্থিত। সানফা ফির ভবনগুলোতে আজও সেই সময়ের ছাপ পরিলক্ষিত হয়। যদিও সড়কগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। সানতা ফি হলো সেই শহর যা গ্রানাডা দখলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিলো। সানতা ফিতে ১৪৯১ সালে রাণী ইসাবেলা বিখ্যাত ইতালিয় নাবিক ক্রিস্টেফার কলাম্বাসকে আমন্ত্রণ জানান। ক্রিস্টেফার কলাম্বাস চীন ও জাপান পর্যন্ত সরাসরি সামুদ্রিক রাস্তা খোঁজার জন্য রানির কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু অবরোধ চলাকালীন তিনি রানির সাথে দেখা করার সুযোগ পাননি। রানির সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে করতে তিনি শীতকাল সানতা ফিতেই কাটিয়ে দেন। এরপর ক্রিস্টেফার কলাম্বাস রানির সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন এবং রানি তাকে কয়েকটি জাহাজ ও কিছু অর্থ দেন। এরপর ক্রিস্টেফার কলাম্বাস তার যাত্রা শুরু করেন। যা পরে ইউরোপের কলোনি তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু করে। অন্যদিকে গ্রানাডার মুসলিমরা কঠিন অবরোধ চলা সত্ত্বেও সাহসিকতার সাথে খ্রিস্টানদের মোকাবিলা করছিল। গ্রানাডার বিভিন্ন অংশে নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্রুসেডারদের এবং মুসলিমদের প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। যাতে উভয়পক্ষেরই প্রচুর ক্ষতি হয়। যার তত্ত্বাবধান সুলতান আবু আব্দুল্লাহ নিজে করছিলেন। তাও ক্রুসেডারদের পাল্লা ভারী হতে দেখে মুসলিমরা রাতে ক্রুসেডারদের ওপর লুকিয়ে হামলা করা শুরু করে।

পাহাড়ি রাস্তায় লুকিয়ে থেকে মুসলিমরা এসব হামলা করত। এসব হামলায় মুসলিমরা অনেক ক্রুসেডারদের হত্যা করে এবং তাদের গবাদিপশু ও ঘোড়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। যার ফলে অবরোধ চলাকালে শুরুর দিকে শহরে গোশতের সরবরাহ বেশি ছিল এবং মুসলিমদের তেমন কোন কষ্ট হয়নি৷ তাও এই গোশত তখন অনেক বেশি দামে বিক্রি হতো। যা শুধু ধনীরাই কিনতে পারত। এছাড়া অবরোধ চলাকালে অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। ফলে গ্রানাডার মুসলিমদের জন্য খাবার কিনে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গ্রানাডা সিরা নুভাডা পর্বতমালার পাশে অবস্থিত ছিল। ফলে গ্রানাডার অবরোধ পুরোপুরিভাবে করার সম্ভব ছিল না। তাই সিরা নুভাডার দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে কিছু খাদ্য দ্রব্য গ্রানাডায় পৌঁছাত। শীতকালে তুষারপাত শুরু হলে খাদ্য সরবরাহের এই উৎসও শেষ হয়ে যায়। এর আগেই গ্রানাডার অনেক মুসলিম সিরা নুভাডার দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। শীতকালে মুসলিমদের কষ্ট আরো বেড়ে যায়। অবরোধ এত তীব্র হয় যে শীতকালে অনেক ধনী লোকেরাও খাবারের জন্য ভিক্ষা করতে শুরু করে। মায়েরা তাদের রুগ্ন কোলে শিশুদের নিয়ে গ্রানাডার অলি গলিতে ভিক্ষা করত। এর ফলে গ্রানাডার জনগণ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক অংশ অপমানের জীবনের চাইতে সম্মানের মৃত্যু তথা শহীদ হওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছিল। আরেক অংশ অবরোধ থেকে পরিত্রাণ চায়। এরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে গ্রানাডার রাস্তায় বের হয় আবু আব্দুল্লাহকে খ্রিস্টানদের সাথে শান্তি চুক্তি কিংবা অবরোধ থেকে মুক্তির উপায় বের করতে বলে। এবার আবু আব্দুল্লাহর সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা ছিল। আবু আব্দুল্লাহ গ্রানাডার সর্বশেষ তরুণ সুলতান পরিস্থিতি দেখছিলেন। তিনি জনগণের কষ্ট ও তাদের আবেগ এবং ক্রুসেডার সেনাবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন এখন ক্রুসেডারদের পরাজিত করা অসম্ভব। একদিন আবু আব্দুল্লাহকে এক গুপ্তচর বললো রাজা ফার্ডিনান্ড গ্রানাডা দখল করার জন্য একটি পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজা ফার্ডিনান্ড একটা ছোট দল পাঠাবে মুসলিমদের সাথে লড়াই করার জন্য। যখন মুসলিমরা শহরের দরজা খুলে লড়াই করার জন্য বের হবে তখন ক্রুসেডাররা পূর্ণ শক্তিতে গ্রানাডার ভিতর প্রবেশ করে গ্রানাডা দখল করবে।

আবু আব্দুল্লাহ এই তথ্য পেয়ে সেনাপতিদের সাথে পরামর্শ করে। তারা বলল, মুসলিমদের উচিত সব শক্তি এক জায়গায় জড়ো করে এক চূড়ান্ত হামলা করা। আর প্রাণপণে যুদ্ধ করা। মুসলিম সেনাবাহিনীর একজন সৈন্যও জীবিত থাকতে ক্রুসেডারদের প্রবেশ করতে না দেয়া। আবু আব্দুল্লাহ এই পরামর্শকে সমর্থন দেন এবং নিজেও এই শেষ যুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর দিন আবু আব্দুল্লাহ ঘুম থেকে উঠে গোসল করেন এবং তৈরি হন। তারপর নিজের অস্ত্র হাতে তুলে নেন। তিনি তার মা ও বোনের সামনে অস্ত্র পোশাকে ঝুলিয়ে নেন। তিনি তাঁর মা রাণী আয়েশাকে দোয়া করতে বলেন আর বোনকেও জড়িয়ে ধরেন। এরপর তিনি তার স্ত্রী ও মেয়েকেও জড়িয়ে ধরনে। তিনি এটা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার আগে করতেন। কিন্তু এবার আবু আব্দুল্লাহ এমন একটি কথা বলেন যা তিনি এর আগে কোন যুদ্ধে যাওয়ার সময় বলেননি। তিনি বলেন, আপনারা আমার ওপর সকল দাবি ছেড়ে দিন। আমাকে মাফ করে দিন। আবু আব্দুল্লাহর মা রানি আয়েশা এই কথা শুনে চমকে যান এবং বলেন তুমি কী করতে যাচ্ছ। আবু আব্দুল্লাহ জবাবে কিছু বলেননি। এরপর রানি আয়েশা আবু আব্দুল্লাহর হাত ধরে কাঁদতে শুরু করেন এবং বলেন, তুমি তোমার মা, স্ত্রীসহ পরিবারের বাকি সদস্যদের কার তত্ত্বাবধানে রেখে যাচ্ছ? আবু আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিদিন মরার চাইতো একদিন মরাই ভালো। এ কথা শুনে রাণী আয়েশা বলেন, যদি তোমার এ সিদ্ধান্তের দ্বারা গ্রানাডা নিরাপদ হয়ে যায় তাহলে এটা ভালো সিদ্ধান্ত। আর যদি এই সিদ্ধান্তে গ্রানাডা নিরাপদ না হয় তাহলে এটা একটা খারাপ সিদ্ধান্ত। আবু আব্দুল্লাহ তার মা রানি আয়েশার কাছে যাওয়ার অনুমতি চান। কিন্তু রানি আয়েশা তাকে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে পবিত্র কুরআনে হাত রেখে শপথ করতে বাধ্য করেন যে তিনি শহরের বাইরে গিয়ে তার ও তার সৈন্যদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলবে না। আবু আব্দুল্লাহ অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই শপথ করেন। এরপর আবু আব্দুল্লাহ বাইরে গিয়ে তার সেনাবাহিনীকে শহরের বাইরে না যাওয়ার আদেশ দেন।

হতে পারে এই ঘটনা সত্য কিংবা হতে পারে এই ঘটনা কিংবদন্তী। কারণ রানি আয়েশার ব্যাপারে বলা হয় তিনি কখনোই ক্রুসেডারদের সাথে আপোষের পক্ষে ছিল না। তিনি সব সময় আবু আব্দুল্লাহকে একজন সুলতানের মতো যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। ঘটনা সত্য হোক আর মিথ্যে, এরপর গ্রানাডা শহরের জন্য ক্রুসেডার এবং মুসলিমদের মধ্যে কোনো যুদ্ধ হয়নি। বরং এই সংঘাতের শেষ হয় আলোচনার মাধ্যমে। আবু আব্দুল্লাহ শহরের অবস্থা দেখে রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ডকে পত্র পাঠানো শুরু করেন। উভয় পক্ষ থেকেই পত্র চালাচালি হতে থাকে। আবু আব্দুল্লাহ এই পত্র চালাচালি তার মা এবং জনগণ থেকে লুকিয়ে রাখে। আবু আব্দুল্লাহ পত্র চালাচালি করে গ্রানাডার আত্নসমর্পণকে পিছিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। অন্যদিকে রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড এবং রানি ইসাবেলা অত্যন্ত দ্রুত গ্রানাডার আত্মসমর্পণ চাচ্ছিলেন।

আবু আব্দুল্লাহ প্রস্তাব দিলেন ১৪৯২ সালের মে মাসে গ্রানাডার আত্মসমর্পণ হবে। এর ফলে শীতকাল শেষ হয়ে যেতে। সিরা নুভাডার পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আবারো খাদ্য সরবরাহ হবে। ফলে তিনি গ্রানাডাকে আরো অনেক দিন নিজের শাসনাধীনে রাখতে পারবেন। রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি আবু আব্দুল্লাহর উদ্দেশ্য জানতেন। তাই তিনি আবু আব্দুল্লাহর এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন। ১৪৯১ সালের নভেম্বর মাসে আবু আব্দুল্লাহর ধৈর্য শেষ হয়ে গেল। তিনি রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ও রানি ইসাবেলাকে পত্র পাঠিয়ে বলেন তিনি কিছু শর্ত সাপেক্ষে আত্নসমর্পণ করতে প্রস্তুত। তো এই শর্ত কী ছিলো? এই শর্তগুলো ছিলো - ১। মুসলিমদের জোর পূর্বক খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবে না। ২। মসজিদগুলোর কোনো ক্ষতি করা যাবে না এবং কোনো খ্রিস্টান মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। ৩। মুসলিমরা স্বাভাবিকভাবেই ৫ ওয়াক্ত নামাজের আযান দিতে পারবে। ৪। মুসলিমদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া হবে। ৫৷ মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের মীমাংসা কাজী শরীয়ত অনুযায়ী করবেন। ৬। যেসব খ্রিস্টান মুসলিম হয়েছে তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এবং তাদরকে আবারও খ্রিস্টান বানানো যাবে না। ৭। যেসব মুসলিম স্পেন ছেড়ে আফ্রিকা চলে যেতে চায় তাদেরকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা দেয়া হবে না।

চমকপ্রদভাবে ইহুদিদের জন্যও এই শর্তগুলো রাখা হয়। অর্থ্যাৎ ইহুদিদের ধর্ম ও জান মালের নিরাপত্তাও মুসলিমদের সাথে হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী হবে। এর কারণ ছিল গ্রানাডার ইহুদিরা মুসলিমদের সমর্থন করত এবং তাদের খ্রিস্টানদের সাথে শত্রুতা ছিল। এছাড়া আবু আব্দুল্লাহর জন্য কয়েক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ও একটি বড় জমিদারির দাবিও এই শর্তগুলোর মধ্যে ছিলো। রাজা ও রানি এক হিসেবে এই শর্তগুলো মেনে নিলেও অত্যন্ত চালাকির সাথে এই শর্তগুলোতে কিছু পরিবর্তন করেন। যা থেকে তারা পরে নিজেদের পছন্দের কাজ করিয়ে নিতেন। উদাহরণ স্বরূপ নওমুসলিমদের নির্যাতন করা হবে না এটা মেনে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় তাদের খ্রিস্টান বানানো হবে না এই বাক্য শর্ত থেকে তুলে দেয়া হলো।

এছাড়া মুসলিমদের ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আহ্বান করার ব্যাপারটা মেনে নেয়া হলেও মুয়াজ্জিনের আজান দেয়ার কথাটি শর্ত থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়। এরকম আরো ছোট ছোট পরিবর্তন করা হয় শর্তগুলোতে। শহরের অধিবাসীদের মধ্যে যারা খ্রিস্টানদের সাথে যুদ্ধ করার পক্ষপাতী ছিলো তারা যখন শুনল শহরকে হস্তান্তর করা হবে তখন তারা একত্রিত হয়ে আল হাম্বরা প্রাসাদ ঘিরে ফেলে। ২০ হাজার মুসলিম আল হামরা প্রাসাদ ঘিরে ফেলে। আবু আব্দুল্লাহ লোকেদের রাগ ঠান্ডা করার চেষ্টা করেন। আবু আব্দুল্লাহ বলেন এখন অবস্থা এমন যে এখন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব না। তাই শহরকে হস্তান্তর করা হবে। তিনি লোকেদের শান্ত করে চলে যান। কিন্তু তিনি ভয় পেয়ে যান এই ভেবে যে না জানি এরা আবার নতুন কোন সমস্যার সৃষ্টি করে। আবু আব্দুল্লাহ অত্যন্ত দ্রুততা ও গোপনীয়তার সাথে গ্রানাডা শহর হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। ১৪৯২ সালের ১ জানুয়ারিতে আবু আব্দুল্লাহ রাজা ফার্ডিনান্ডকে একটি বার্তা পাঠান।

ওই বার্তায় আবু আব্দুল্লাহ বলেন, রাজা ফার্ডিনান্ড যেন আজ রাতের অন্ধকারই তার একজন প্রতিনিধিকে আল হামরা প্রাসাদে পাঠান। যার হাতে প্রাসাদের চাবি তুলে দেয়া হবে। দিনের আলোয় এটা করলে শহরের জনগণ বিদ্রোহ করার আশঙ্কা আছে। রাজা ফার্ডিনান্ড এই বার্তা পেয়ে একজন প্রতিনিধিকে একটি ছোট সেনাদলের সাথে আল হামরা প্রাসাদে পাঠান। খ্রিস্টান প্রতিনিধি ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি ভোর হওয়ার কিছু পূর্বে এই আল হামরা প্রাসাদে প্রবেশ করে। খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলকে আবু আব্দুল্লাহর দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। খ্রিস্টান প্রতিনিধি আবু আব্দুল্লাহর হাতে চুম্বন করে। এরপর আবু আব্দুল্লাহ আল হামরা প্রাসাদের চাবি প্রতিনিধির হাতে দিয়ে বের হয়ে যান। খ্রিস্টানরা দ্রুতই আল হামরার মিনারগুলো এবং শহরের দরজা দখল করে নেয়। এক খ্রিস্টান পাদ্রি আল হামরার একটি কামরায় প্রার্থনা করেন। কথিত আছে যে এই প্রার্থনায় যোগ দেয়া সকল লোক খুশিতে কাঁদছিলেন এবং বলছিলেন ঈশ্বরের অনেক দয়া যে তিনি এত দামী একটি সম্পদ এত সহজে খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দিয়েছে। ক্রুসেডার শিবিরে খবর পৌঁছে গিয়েছিলো যে আল হামরা ক্রুসেডাররা দখল করে নিয়েছে। রাজা ও রানি এই খবর পাওয়ার পর অত্যন্ত সুন্দর পোশাকে সজ্জিত হয়ে গ্রানাডা শহরের দিকে রওনা হন। রাজা ও রানির সাথে ক্রিস্টেফার কলোম্বাসও ছিলেন। ক্রুসেডাররা সৈন্যরা গ্রানাডার টাওয়ারে উঠে এখানেও ক্রুসেডার পতাকা লাগিয়ে দেয়। সবাই আবু আব্দুল্লাহর অপেক্ষা করছিল। যাতে আবু আব্দুল্লাহ রাজার কাছে গ্রানাডা শহরের কাছে হস্তান্তর করেন। কারণ এর আগে শুধু প্রাসাদের চাবিই হস্তান্তর করা হয়েছিলো। গ্রানাডার সর্বশেষ মুসলিম শাসক সুলতান আবু আব্দুল্লাহ একটি ফটক দিয়ে বের হন। যাকে টাওয়ার অফ সেভেন ফ্লোরস 'Tower Of Seven Floors' তথা সাত তলাবিশিষ্ট টাওয়ার বলা হয়। এই দরজা দিয়েই গ্রানাডার সর্বশেষ মুসলিম শাসক বের হন। আবু আব্দুল্লাহ অনুরোধ করেন তিনি বের হওয়ার পর যেন এই দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এই দরজা দিয়ে যাতে কেউ প্রবেশ না করে।

আবু আব্দুল্লাহর অনুরোধের সম্মানে এই দরজা বিগত ৫০০ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। আবু আব্দুল্লাহ একটি ঘোড়ায় ছিলেন। তার সাথে তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকশো অশ্বারোহী ছিল। আবু আব্দুল্লাহ যিনি এখন আর সুলতান ছিলেন না তাকে দেখে রাজা ও রানি আশা করছিলেন আবু আব্দুল্লাহ ঘোড়া থেকে নেমে তাদের হাতে চুম্বন করে সম্মান প্রদর্শন করবেন। কিন্তু আবু আব্দুল্লাহ এবং তার মা রানি আয়েশা কোনো প্রকার সম্মান জানাতে রাজি হননি। দু পক্ষের কর্মকর্তাদের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হলো, আবু আব্দুল্লাহ তার এক পা জিন থেকে বের করবেন এবং হেলমেট খুলে হাতে নিয়ে আসবেন। এটাকে সম্মান প্রদর্শন করা হিসেবে ধরে নেয়া হবে এবং রাজা ফার্ডিনান্ড আবু আব্দুল্লাহকে আরো কিছু করা থেকে আটকিয়ে দেবেন। আবু আব্দুল্লাহই এটাই করলেন। এরপর তিনি রাজা ফার্ডিনান্ডের হাতে গ্রানাডার চাবি হস্তান্তর করেন। এসময় আবু আব্দুল্লাহ আরবিতে বলেন, জনাব আল্লাহ আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। এই হলো শহরের চাবি। আমি এবং এই শহরের সকল অধিবাসী এখন আপনার সম্পত্তি। রাজা ফার্ডিনান্ড এই বাক্যগুলো শুনে হাসিমুখে চাবি গ্রহণ করেন। এরপর চাবিগুলো তিনি রানি ইসাবেলার হাতে দিয়ে দেন। এভাবে গ্রানাডার হস্তান্তর সম্পন্ন হয় আর স্পেনিশ ক্রুসেডার সৈন্যরা গ্রানাডায় প্রবেশ করে। খ্রিস্টানদের জন্য এই দিন ক্রিসমাসের চেয়ে কম ছিল না। কারণ এই দিন তাদের ৮০০ বছরের সংগ্রান পূর্ণতা পেয়েছিলো। ৭১১ সালে যখন তারিক বিন যিয়াদ ওয়াদিয়ে লাকার যুদ্ধে ভিসিগোথিক রাজা রডরিকে পরাজিত করেছিলো তখন কেউ ভাবেনি যে মুসলিমদের স্পেন থেকে এভাবে বেরিয়ে যেতে হবে। খ্রিস্টানরা তারিক বিন যিয়াদের স্পেন বিজয়ের ১০ বছর পরই খ্রিস্টানরা নিজেদের ছোট একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে মুসলিমদের বিতাড়িত করার সংগ্রাম শুরু করে।

তারিক বিন যিয়াদের স্পেন জয়ের ৭৮১ বছর পুরো খ্রিস্টানরা স্পেন ও পর্তুগাল আবারো দখল করে নেয়। গ্রানাডা হস্তান্তরিত হওয়ার খবর শুনে আশেপাশের ছোট ছোট মুসলিম বসতিও আত্মসমর্পণ করে দেয়। আবু আব্দুল্লাহ গ্রানাডা ছেড়ে যাওয়ার আগে তার ওই ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় যাকে খ্রিস্টানরা নিজেদের কাছে রেখেছিল সাথে বাকিদেরও ফিরিয়ে দেয়া যাদের খ্রিস্টানরা জামানত স্বরূপ নিজেদের কাছে রেখেছিল। এরপর আবু আব্দুল্লাহ নিজের জমিদারির দিকে রওনা হয়ে যান।

আর এর সাথে সাথেই একটি কিংবদন্তি তৈরি হয়। কিংবদন্তী অনুযায়ী আবু আব্দুল্লাহ গ্রানাডা থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে গ্রানাডার দিকে তাকিয়ে কাঁদেন। তিনি ৮০০ বছর ধরে মুসলিমদের ঘর হিসেবে থাকা গ্রানাডাকে সর্বশেষ বারের মতো দেখেন। তখন তার মা রানি আয়েশা তাকে তিরস্কার করে বলেন যে শহরকে তুমি পুরুষদের মতো যুদ্ধ করে রক্ষা করতে পারোনি তার জন্যে নারীদের মতো কান্না করা বন্ধ করো। আবু আব্দুল্লাহ কিছু দিন তার জমিদারিতে থেকে জমিদারি বিক্রি করে আফ্রিকায় চলে যান। এরপর আবু আব্দুল্লাহর সাথে কী হয়েছিল তা কেউ জানে না। তার ব্যাপারে নানা বক্তব্য পাওয়া যায়। আবু আব্দুল্লাহ চলে গেলেও গ্রানাডার মুসলিম জনগণ সেখানে ছিলে। যাদের ওপর পে নির্যাতনের ঝড় আপতিত হয়েছিল।


তথ্যসূত্র : Reconquista - Wikipedia
Reconquista | Definition, History,
Significance, & Facts | Britannica
Muhammad XII of Granada - Wikipedia
Muhammad XII | Biography & Facts |
Britannica
Ferdinand II | Biography, Facts,
Accomplishments, & Isabella I
Britannica
Ferdinand II of Aragon - Wikipedia
Isabella I of Castile - Wikipedia
Spanish Empire - New World
Encyclopedia
Spanish Empire - Wikipedia
Isabella I | Biography, Reign, & Facts |
Britannica
Muslim Spain And Portugal: A Political
History of Al-Andalus By Hugh N
Kennedy.
The Moors Last Stand How Seven
Centuries of Muslim Rule in Spain
Came to an End By Elizabeth Drayson.
Chapter : 4 - Captured. Chapter : 5 -
From King To Pawn.
Christopher Columbus - Wikipedia
Granada War - Wikipedia
Treaty of Granada (1491) - Wikipedia
Fall of Granada - New World
Encyclopedia
The conquest of Granada - Spain -
Britannica
The Fall of Granada - History of Islam
1469 CE — 1609 CE: The Fall of
Granada and Its Aftermath - Islamic
Spain

লেখক : ইন্টারন্যাশেনাল নিউজ এডিটর, হাভার টার্ক


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us